বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখছেন পুলিশকর্তারা। —ফাইল চিত্র
নাগেরবাজার বিস্ফোরণের সঙ্গে প্রায় তিন বছর আগের একটি বিস্ফোরণের মিল পাচ্ছে সিআইডি। সেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল দমদমেই! গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের ১৪ অগস্ট রাতে এয়ারপোর্ট ২ নম্বর গেটের কাছে মতিলাল কলোনির একটি বহুতলের চারতলায় একটি বিস্ফোরণ হয়েছিল। তাতে আহত হন ২ জন। সিআইডির একাংশের দাবি, সেই বিস্ফোরণের পিছনেও ছিল সকেট বোমা। তবে তা আকারে এবং তীব্রতায় ছিল নাগেরবাজারের থেকে অনেকটাই কম।
এ বার পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙায় যে হাঙ্গামা হয়েছে, তাতেও সকেট বোমা মিলেছে বলে সিআইডি সূত্রের দাবি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর রাজনৈতিক হাঙ্গামাতেও সকেট বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে মতিলাল কলোনি, আমডাঙা এবং বাসন্তী— এই তিন সূত্র ধরেই নাগেরবাজারের রহস্য ভেদ করতে চাইছেন সিআইডি-র কর্তারা। বেশ কয়েক জন স্থানীয় দুষ্কৃতীকে সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখা হয়েছে।
গোয়েন্দারা বলছেন, মতিলাল কলোনির বিস্ফোরণের নিখুঁত তথ্য থাকলে নাগেরবাজারের রহস্যভেদ সহজ হত। কিন্তু সেই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করেনি দমদম থানা বা ব্যারাকপুর কমিশনারেট। ফলে এ পথে হোঁচট খেয়েই এগোতে হবে। নাগেরবাজারের বোমাটি স্থানীয় কোনও পরিত্যক্ত কারখানায় তৈরি করা হয়েছিল, নাকি দুষ্কৃতীদের হাত ধরে এসেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভবানী ভবনের একটি সূত্রের দাবি, গত কয়েক বছরে দমদম-সহ উত্তর ২৪ পরগনার কোথায় কোথায় কী কী ধরনের বোমা উদ্ধার হয়েছে, তা ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে সেই তালিকা কত নিঁখুত মিলবে তা নিয়ে গোয়েন্দাদের সন্দেহ রয়েছে। তদন্তকারীদের একাংশ বলছেন, দমদম থানা এবং ব্যারাকপুর কমিশনারেট নাগেরবাজারের তদন্তেও জটিলতা তৈরি করেছে। বিস্ফোরণের পর পুলিশের সামনেই নেতা-মন্ত্রীরা ঘটনাস্থলে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। তার পরে ঘটনাস্থল জল দিয়ে ধুয়েছে পুলিশ। ফলে অনেক তথ্য-প্রমাণ নষ্ট হয়েছে।
সিআইডি-র অভিযোগ আর জি কর হাসপাতালের বিরুদ্ধেও। বিস্ফোরণে জখমদের ড্রেসিং করার পরে তাঁদের দেহ থেকে বের হওয়া স্প্লিন্টারের টুকরো বা বারুদ, সবই ফেলে দিয়েছেন হাসপাতালের কর্মীরা। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ওই নমুনাগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার কাজে লাগত। হাসপাতাল সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, নমুনা রাখার বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না।
এই অবস্থায়, আহত ফলবিক্রেতা অজিত হালদারের সঙ্গে বিশদে কথা বলতে চাইছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, ওই ফলবিক্রেতার বা়ড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে। ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা পুলিশি মহলে সুবিদিত। তা ছাড়া বোমাটি ফেটেছিল ঠিক তার দোকানের পাশে। ফলে তাঁর কথা থেকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বেরোতে পারে। অজিত আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি। এখনও কথা বলার অবস্থায় নেই। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর বোন যমুনা মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। যমুনার বক্তব্যে অসঙ্গতি মিলেছে বলে সূত্রের দাবি।
পুলিশ জানিয়েছে, যমুনা বলেছেন, দাদা অজিতের সঙ্গে তিনি মগরাহাট থেকে ট্রেনে চেপে শিয়ালদহ আসতেন। তার পর মেছুয়া পট্টি থেকে ফল কিনে ফের শিয়ালদহ হয়ে কাজিপাড়ায় যেতেন। ঘটনার দিন সকালে তাঁরা ট্যাক্সি চেপে কাজিপাড়ায় আসেন। তার পরে মিষ্টির দোকানের পাশে চাতাল ঝাঁট দেন। অজিত দোকান সাজানোর পর তিনি অর্জুনপুর চড়কতলায় চলে যান। যদিও পরে যমুনা আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘ঝাঁট আমি দিইনি, দাদা দিয়েছে। তখন কিছু ছিল না, জায়গাটা পরিষ্কারই ছিল।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, সাত-আট মাস ধরে কাজিপাড়ায় ফল বিক্রি করছেন অজিত। আগে তিনি মিষ্টির দোকানের উল্টো দিকের ফুটপাথে বসতেন। মিষ্টির দোকানের পাশে বসতেন আশরফ আলি নামে আরেক ফল বিক্রেতা। মগরাহাট থেকে কাজিপাড়ায় দোকান দেওয়া নিয়ে অজিতের ভাইপো মানস হালদার বলেন, ‘‘কাকা এক সময় অজয়নগরেও ব্যবসা করতেন। কাকা ও রকমই, জায়গা ভাল না-লাগলে অন্য জায়গায় ঝুড়ি নিয়ে বসে পড়ে।’’
যমুনার পাশাপাশি আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শরৎ শেট্টি, নবকুমার দাস, চন্দ্রশেখর গুপ্ত এবং হারাধন সরকারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে নিহত কিশোর বিভাস ঘোষের মা সীতা ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। তাঁর স্বামী জন্মেজয় ঘোষও সেখানে ছিলেন। সূত্রের দাবি, কখন বিস্ফোরণ ঘটল, সে সময় সীতা কী করছিলেন, কী দেখেছিলেন— এ সব প্রশ্ন করা হয়েছে। তবে সীতা সে ভাবে উত্তর দিতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy