আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
কিছু দিন আগেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে তাঁর করা অভিযোগের জেরে স্বাস্থ্য ভবন তথা রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্র তোলপাড় হয়েছিল। আর জি করের সেই প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি এ বার বোমা ফাটিয়েছেন ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা ও বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের বিরুদ্ধে।
গত ১৩ জুলাই রাজ্যের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেলের (দুর্নীতি দমন শাখা) কাছে লিখিত অভিযোগে আখতার জানিয়েছেন, রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান থাকাকালীন সুদীপ্ত রায় প্রায়ই আর জি করে সরবরাহ করা সরকারি চিকিৎসা সামগ্রী (কনজ়িউমেবলস) বেআইনি ভাবে উত্তর শহরতলির সিঁথি এলাকায় তাঁর নিজের নার্সিংহোমে পাঠিয়েছেন। আরও অভিযোগ, তাঁর নার্সিংহোম ও বাগানবাড়ির সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সুদীপ্ত আর জি করের বিভিন্ন ভেন্ডারকে দিয়ে করিয়েছেন।অভিযোগপত্রে আর জি করের বিভিন্ন দুর্নীতির বিস্তারিত বিবরণও দিয়েছেন আখতার। তাতে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে হাসপাতালের কয়েক জন আধিকারিকের নামও রয়েছে। আখতারের কথায়, ‘‘ওঁদের দুর্নীতির পথে কাঁটা হয়ে যাচ্ছিলাম বলে আমাকে গত মার্চে বদলি করা হয়। কারণ, কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা বর্জ্য প্রচুর টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে পাচারের কথা আমি স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছিলাম।’’ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে সুদীপ্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আখতার আমার বিরুদ্ধে পুলিশে গেলে আমাকেও এফআইআর করতে হবে। আখতার নিজেই দুর্নীতিপরায়ণ। দুর্নীতির জন্য আর জি কর থেকে বদলি হওয়ায় ওর স্বার্থে ঘা লেগেছে বলে এই সব করছে। মিথ্যা অভিযোগ আনছে।’’
তবে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত যে সংস্থা আর জি কর থেকে চিকিৎসা বর্জ্য সরকারি চুক্তি অনুযায়ী সংগ্রহ করত, তাদের তরফে পার্থসারথি চন্দ বলেন, ‘‘হাসপাতালে লাল ব্যাগে মূলত স্যালাইনের বোতল ও বোতলের সঙ্গে যুক্ত তার থাকে। আর জি কর থেকে সেই প্যাকেট প্রায় কিছুই পাচ্ছিলাম না। সে কথা হাসপাতালকে জানাই।’’ ব্যবহার করা স্যালাইনের বোতল, তার, সিরিঞ্জ, গ্লাভস হাসপাতাল থেকে একটি চক্র বাইরে পাচার করছে বলে স্বাস্থ্য ভবনে লিখিত রিপোর্ট দেন আখতার। এর পরেই তিনি বদলি হন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বড় চক্রান্ত হচ্ছে, যে হেতু মৌচাকে ঢিল মেরেছি।’’ এ বিষয়ে সন্দীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া জানতে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
আরও একটি অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে। আর জি করে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে! অর্থাৎ, যে সন্দীপ এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত, তাঁকেই বলা হয়েছে ঘটনার তদন্ত করতে! ৩ জুলাই অধ্যক্ষ সেই কমিটি গঠন করেছেন। সেখানে আবার অন্যতম সদস্য করা হয়েছে আর এক অভিযুক্ত চিকিৎসককে! এ বিষয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার প্রতিক্রিয়া, ‘‘নো কমেন্টস!’’ আখতারের বিরুদ্ধেও তদন্ত কমিটি গড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, আর জি করের দুর্নীতি সংক্রান্ত খবর প্রকাশ্যে আসার পরে কয়েক জন ভেন্ডার ও শিক্ষক-চিকিৎসক স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ করেন, আখতারও আর্থিক দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন।
আখতারের কথায়, ‘‘প্রচুর নথি আছে আমার হাতে। তাই আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অধ্যক্ষ সরবরাহকারীদের থেকে ২০ শতাংশ কাটমানি খেয়ে পেপার টেন্ডার করে প্রচুর বেআইনি কেনাকাটা করেছেন। ২০২২ সালে ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকায় নেজ়াল ক্যানুলা কেনা হয়, যা পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন কিনেছিল ১ কোটি ৬০ হাজারে। স্কিল ল্যাব করতে খরচ হয়েছে ২ কোটি ৯৭ হাজার টাকা। যা একাধিক সরকারি হাসপাতাল ৬০ লক্ষে করেছে। গত ডিসেম্বরে হাসপাতালে জলের পিউরিফায়ার কেনা হয় প্রতিটি ৪০২৫০ টাকায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy