এম আর বাঙ্গুর। —ফাইল চিত্র।
সময়ের অপচয় হয়নি। তৎপরতাও ছিল যথেষ্ট। তবু ফিরে পাওয়া গেল না হাত। হাসপাতালের পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় টালিগঞ্জে বাস দুর্ঘটনায় বাঁ হাত খোওয়ানো উৎপল সরকারের কাটা হাত জুড়তে পারলেন না চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার সকালে হরিদেবপুর থেকে হাওড়াগামী একটি সরকারি বাসে দুর্ঘটনার শিকার হন হরিদেবপুরের বাসিন্দা উৎপলবাবু। বাঁ হাত কনুই থেকে কেটে পড়ে যায়। দুর্ঘটনা ঘটার মিনিট পনেরোর মধ্যেই বাক্সবন্দি করে সেই হাত-সহ উৎপলবাবুকে নিয়ে এমআর বাঙ্গুরে পৌঁছে যায় পুলিশ। সেখানে সুপারস্পেশালিটি বিভাগে অর্থোপেডিক শাখায় ভর্তি করা হয় তাঁকে। বার দুই অস্ত্রোপচারও হয়। তবু জোড়া যায়নি হাত।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, পুলিশের তরফ থেকে হাত আনার বিষয়ে কোনও গাফিলতি না থাকলেও এমআর বাঙ্গুরে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় এই হাত ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হল না। বরং রোগীকে যদি বাঙ্গুরের পরিবর্তে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া যেত, সে ক্ষেত্রে হাত ফিরে পেলেও পেতে পারতেন রোগী। যদিও চিকিৎসকেরা প্রথমেই জানিয়েছিলেন, হাতের কাটা অংশ এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনই থেঁতলে গিয়েছে যে তা জোড়া লাগার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবু এসএসকেএমের লেভেল ওয়ান ট্রমা কেয়ারের সুবিধা মিললে হয়তো শেষরক্ষা হতে পারত বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের।
এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জেন জয়ন্ত সাহার মতে, এই ধরনের দুর্ঘটনায় অঙ্গ জোড়া লাগানোর ক্ষেত্রে রোগী, চিকিৎসক ও হাসপাতাল— সকলেরই একটা বড় ভূমিকা থাকে। কাটা আঙুল জুড়ে দেওয়ার সঙ্গে কাটা বড় অঙ্গ, যেমন হাত বা পা জুড়ে দেওয়ার মধ্যে ফারাক আছে বিস্তর। ঝুঁকিও বেশি। কোনও ধারাল অস্ত্রে তীক্ষ্ণ ভাবে অঙ্গ কেটে বাদ পড়ার পর তা জুড়ে দেওয়া তুলনামূলক সহজ। কিন্তু উৎপলবাবুর ক্ষেত্রে হাতটা থেঁতলে যাওয়ায় এই কাজটিই কঠিন হয়ে প়ড়ে। কারণ খুবলে বা থেঁতলে গেলে জায়গাটির শিরা, ধমনী, স্নায়ুগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা ছিঁড়ে বাদ পড়ে। রক্তপাতের পরিমাণও অনেক বাড়ে। রক্ত চলাচলের শিরায় ক্ষত তৈরি হওয়ায় রক্ততঞ্চনে বাধা আসে। উৎপলবাবুর ক্ষেত্রে হাত জোড়াটা তাই তুলনামূলক কঠিন কাজ ছিল। তবে এসএসকেএমে লেভেল ওয়ান ট্রমা কেয়ার থাকায় প্লাস্টিক সার্জারির এই সব জটিলতম অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন: বাসে জানলার বাইরে যাত্রীর হাত, পিলারে ধাক্কা লেগে কেটে পড়ল কলকাতার রাস্তায়
দুর্ঘটনার শিকার উৎপল সরকার।
জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘এই ধরনের অস্ত্রোপচারে বিভিন্ন বিভাগীয় চিকিৎসক, প্রচুর পরিমাণ লোকবল ও সময় প্রয়োজন। তাই এমন কোনও হাসপাতালেই তা হওয়া বাঞ্ছনীয়, যেখানে এই সুযোগগুলো রোগী ও চিকিৎসক উভয়েই পাবেন। সাধারণত ছোটখাটো অঙ্গ বাদ যাওয়া বা ধারাল অস্ত্রে কাটা কম ক্ষতের অঙ্গ রাজ্যের কমবেশি সব বড় হাসপাতালেই জোড়া লাগানো হয়, তবে থেঁতলে যাওয়া বা খুবলে যাওয়ার জটিল ঘটনাগুলোয় লেভেল ওয়ান ট্রমা কেয়ার প্রয়োজন হয়।’’
এমন ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয় বলেও জানান তিনি। কেমন সে নিয়ম? চিকিৎসকদের মতে, কাটা যাওয়া অঙ্গকে যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে আসতে হবে। প্রথমেই কাটা অঙ্গকে পরিষ্কার একটি গজকাপড় বা সুতির কাপড়ে আগাগোড়া পেঁচিয়ে মুড়ে ফেলতে হবে। বাক্সে না এনে চেষ্টা করতে হবে প্লাস্টিকের প্যাকেটে বরফ পুরে তার উপর ওই গজ জড়ানো অঙ্গটি নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার। সময় নষ্ট করা যাবে না, তাই আগেভাগেই জেনে নিতে হবে নিকটবর্তী কোনও হাসপাতালে এমন অঙ্গ জোড়া দেওয়ার পরিকাঠামো আছে কি না।
আরও পড়ুন: বেহালায় খুন বৃদ্ধা, লুঠের উদ্দেশ্যেই খুন, অনুমান পুলিশের
উৎপলবাবুর পরিবারও এই পরিকাঠামোর প্রশ্নে এসে বার বারই আফসোস করছেন। হাসপাতালটা বাঙ্গুরের বদলে এসএসকেএম হয়ে গেলেই হাতটা ফিরে পাওয়া যেতে পারত, এই আক্ষেপ তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের।
(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করাবাংলা খবরপড়তে চোখ রাখুন আমাদেরকলকাতাবিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy