প্রতীকী ছবি।
রিকশা ইউনিয়ন বোঝে টাকা। পুলিশ যেন দেখেও দেখতে পায় না। এ সবের মাঝেই শহরতলিতে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে মোটরচালিত রিকশা। এমনই একটি রিকশার চাকায় ওড়না জড়িয়ে গিয়ে গলায় ফাঁস পড়ে শনিবার ব্রহ্মপুর এলাকার এক প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়।
নিষিদ্ধ এই রিকশা কী করে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে?
রবিবার সে সম্বন্ধে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা গেল, শহরতলির সাধারণ রিকশার স্ট্যান্ডগুলিতে টাকার বিনিময়ে দাঁড়ানোর জায়গা পায় এই সব ব্যাটারি কিংবা মোটরচালিত রিকশা। টাকা নেওয়ার অভিযোগ, মূলত স্থানীয় নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে। যাঁরা ওই সব রিকশা স্ট্যান্ডগুলি নিয়ন্ত্রণ করেন। ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সাধারণ রিকশার সঙ্গেই যন্ত্রচালিত ওই রিকশাকে স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার সুযোগ দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলি বোঝে টাকা। রিকশা আইনি না কি বেআইনি, তা দেখতে যাবে কেন। আর রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া থাকায় পুলিশও এ সব নিয়ে কড়া মনোভাব সচরাচর দেখাতে চায় না।’’
বাঁশদ্রোণীর ব্রহ্মপুর-বাদামতলার বাসিন্দা সবিতা মিস্ত্রি নামে এক প্রৌঢ়া শনিবার একটি মোটরচালিত রিকশায় চেপেছিলেন। আচমকাই তাঁর ওড়নাটি রিকশার চাকায় জড়িয়ে যায়। এর জেরে ওড়নার ফাঁস মহিলার গলায় এমন ভাবেই চেপে বসে যে তাঁর গলা ধড় থেকে প্রায় আলাদা হয়ে যায়। ওই ঘটনার পরেই বেআইনি মোটর রিকশা কী করে চলছে, তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। রবিবার সবিতাদেবীর স্বামী নিরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ রিকশা হলে প্রাণে বেঁচে যেত আমার স্ত্রী। কিন্তু মোটর রিকশা হওয়ায় থামার আগেই ওর গলা কেটে যায়।’’
বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশের অবশ্য দাবি, তারা নিজেদের এলাকায় এই ধরনের রিকশা দেখলেই ধড়পাকড় করে। বাজেয়াপ্ত করে রিকশাগুলিকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও শহরতলির এলাকাগুলি এই ধরনের রিকশা বেড়েই চলেছে!
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার ট্র্যাফিক সন্তোষ পাণ্ডের দাবি “শহরতলিতে যে সব থানা রয়েছে, সেখানে এই ধরনের রিকশা চলার প্রবণতা বেশি। তবে ট্র্যাফিক পুলিশ দেখলে ওই রিকশা বাজেয়াপ্ত করে ডাম্পিং ইয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’
কী ভাবে আসে এই সব রিকশা?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অনেকেই একটু বেশি টাকা খরচ করে এলাকার মোটর মিস্ত্রিকে দিয়ে এই ধরনের রিকশা তৈরি করিয়ে নিয়ে লাইনে গাড়ি নামিয়ে দেন। এই রিকশা পায়ে চালিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার ঝক্কি কিংবা শারীরিক কসরত কোনওটাই নেই। মোটরচালিত রিকশার গতিও সাধারণ রিকশার চেয়ে বেশি। অনেক ক্ষেত্রে গলি কিংবা পাড়ার ভিতরে চলায় এই সব রিকশার দিকে পুলিশের নজরও পড়ে না। ইদানীং বারুইপুর-সোনারপুরের মতো এলাকা থেকে দক্ষিণ শহরতলিতে এই ধরনের রিকশা নিয়ে
আসছেন লোকজন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দক্ষিণ শহরতলির দিকের মেট্রো স্টেশন লাগোয় স্ট্যান্ডগুলিতে এই ধরনের রিকশার ভিড় চোখে পড়ে।
টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও রিকশা সংগঠনগুলির জ্ঞাতসারেই যে এই ধরনের বেআইনি রিকশা চলছে তা স্পষ্ট। রিকশা সংগঠনের কোনও কোনও নেতার বক্তব্য, ‘‘গরিব মানুষ করে খাচ্ছেন।’’
তবে এমন মোটর রিকশার চালকেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা টাকা খরচ করেন লাইনে জায়গা পাওয়ার জন্য। কিন্তু দুর্ঘটনা কিংবা অন্য কোনও সমস্যায় ইউনিয়ন তাঁদের পাশে দাঁড়ায় না। খুব অনুরোধ করলে কোনও কোনও সময়ে নেতারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে গাড়ি ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেন। না হলে নিজেকেই টাকা দিয়ে গাড়ি ছাড়াতে হয়।
নিস্ক্রিয়তা যারই হোক না কেন, বিপজ্জনক এই মোটর রিকশার দাপট যে ক্রমেই বাড়ছে, তা মানছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy