Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Majherhat Bridge

‘এ ভাবে যেন আর কারও কোল খালি না হয়’

২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের সেই বিকেলে সেতুর নীচেই অস্থায়ী ছাউনিতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কালীতলার ছোটসাটুই গ্রামের ছেলে প্রণব।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:০৬
Share: Save:

বছর দুয়েক আগে মাঝেরহাট সেতু-ভঙ্গের অভিশপ্ত দিনটিতে হারিয়েছিলেন নিজের বছর বাইশের তরতাজা ছেলে প্রণব দে-কে। বৃহস্পতিবার টিভিতে নবনির্মিত সেই মাঝেরহাট সেতুর উদ্বোধন দেখতে দেখতে বার বার চোখ জলে ভরে উঠছিল ময়না দে-র। বছর চুয়াল্লিশের ময়না বলছেন, ‘‘সেতু কেন ভেঙে পড়েছিল জানি না। কিন্তু এ ভাবে যেন আর কারও কোল খালি না হয়।’’

২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের সেই বিকেলে সেতুর নীচেই অস্থায়ী ছাউনিতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কালীতলার ছোটসাটুই গ্রামের ছেলে প্রণব। রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের অধীনে নির্মীয়মাণ জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো প্রকল্পে ঠিকা শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। রাতের শিফ্‌টে কাজ করার পরে সেতুর নীচের অস্থায়ী ছাউনিতে যখন শুয়েছিলেন, তখনই সেতু ভেঙে চাপা পড়েন প্রণব এবং তাঁর এক সহকর্মী গৌতম মণ্ডল। খবর পেয়ে রাতেই শহরে এসে পৌঁছন প্রণবের ছোট ভাই উৎপল এবং মামা কৃষ্ণগোপাল দে। ৩৬ ঘণ্টা পরে উদ্ধার হয় প্রণবের দেহ। এ দিন কৃষ্ণগোপালবাবুর আক্ষেপ, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পরে রোজগারের আশায় ছেলেটা শহরে গিয়েছিল। কিন্তু ও যে আর ফিরবে না তা ভাবতে পারিনি।’’

সেতু চাপা পড়ে সে দিন মৃত্যু হয়েছিল প্রণব ও গৌতমের। সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ছাড়াও কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। উৎপল জানাচ্ছেন, সরকার এবং ঠিকাদার সংস্থার দেওয়া ক্ষতিপূরণের টাকা মিললেও দুর্ঘটনার বিমার টাকা এখনও মেলেনি। একই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়া সৌমেন বাগ বা গৌতমের পরিবারের সদস্যদের মতো চাকরিও জোটেনি। ফলে প্রণবকে হারিয়ে কার্যত অথৈ জলে গোটা পরিবার।

আরও পড়ুন: দিয়েগো, তুমি অতুলনীয়: পেলে


আরও পড়ুন: জিতেও চোট সমস্যা নিয়ে চিন্তায় হাবাস

বছর ছয়েক আগে পথ দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যুর পরে সংসারের ভার এসে পড়েছিল বড় ছেলে প্রণবের কাঁধেই। তাঁর মৃত্যুর পরে চাকরির জন্য কলকাতা পুলিশের দ্বারস্থ হলেও কম বয়সের কারণে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বছর আঠারোর উৎপলকে। লকডাউনের পরে ফের পুলিশকর্তাদের কাছে গেলেও এখনও কাজ মেলেনি। আপাতত দিন গুজরান করতে তাই রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজই ভরসা। উৎপল বলছেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে কাজ ছিল না। সেই সঙ্গে মায়ের অসুস্থতা। অনেক ঝড় যাচ্ছে আমাদের উপর দিয়ে।’’

আর ছেলে হারানো মা বলছেন, ‘‘নতুন করে সেতু তৈরি হল। কিন্তু আমাদের পরিবারের ভাঙা সেতু জোড়া লাগানোর কেউ নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Majherhat Bridge Inauguration collapse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy