Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ছেলের মৃত্যুর খবর শুনেই মারা গেলেন অসুস্থ মা

পুলিশ জানায়, ছেলের শোকে বিকেল হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ পরিষ্কারি প্রামাণিক (৫৫) নামে ওই প্রৌঢ়া মারা গিয়েছেন। তিনি অবশ্য অনেক দিন ধরেই অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:০৯
Share: Save:

প্রতিবন্ধী ছেলে মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা গেলেন তাঁর মা। সোমবার সোনারপুর থানার আড়াপাঁচ এলাকায় দুপুর দেড়টা নাগাদ অজয় প্রামাণিক (২৬) নামে এক প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু হয়। আর বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মারা যান তাঁর মা।

পুলিশ জানায়, ছেলের শোকে বিকেল হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ পরিষ্কারি প্রামাণিক (৫৫) নামে ওই প্রৌঢ়া মারা গিয়েছেন। তিনি অবশ্য অনেক দিন ধরেই অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। ছেলের মৃত্যুসংবাদ শুনে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক বাড়িতে আসার আগেই তিনি মারা যান।

প্রতিবেশীরা জানান, অজয় জন্ম থেকেই হাঁটাচলা করতে পারতেন না। অধিকাংশ সময়ই বিছানায় শুয়ে থাকতেন। পরিষ্কারিদেবীই ছেলেকে পরিচর্যা করতেন। দেড় বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পরেই পরিষ্কারিদেবী ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর ছোট ছেলে সঞ্জয় দিনমজুরের কাজ করেন। তাঁর রোজগারেই সংসার চলত। পরিষ্কারিদেবীর স্বামীও জনমজুরের কাজ করতেন।

সঞ্জয় কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘মা অসুস্থ হওয়ার পরে দাদারও উপযুক্ত দেখাশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। রাতে বাড়ি ফিরে আমি মা এবং দাদাকে যতটা পারতাম দেখাশোনা করতাম।’’

সোমবার দুপুরে অজয় মারা যান। তাঁর কাকিমা জয়াদেবী বলেন, ‘‘প্রথমে অজয়ের মারা যাওয়ার খরব আমরা ওর মাকে জানাইনি। কিন্তু বাড়িতে কান্নাকাটি হওয়ায় তিনি হয়তো সবই বুঝতে পেরেছিলেন। কয়েক বার বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টাও করেছিলেন। আমাদের নানা ভাবে জিজ্ঞাসাও করছিলেন। কয়েক বার অজয়ের নাম ধরে ডাকাডাকিও করেন। বিকেলের দিকে খুব চুপচাপ হয়ে যান। তার পরেই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন।’’

স্থানীয় সোনারপুর পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান রবীন সর্দার বলেন, ‘‘আমরা পঞ্চায়েতের তরফে অজয়ের প্রতিবন্ধী শংসাপত্র তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁর আধার কার্ড না থাকায় শংসাপত্র হয়নি। অজয়ের ভাই সঞ্জয়ের জন্য কী ব্যবস্থা করা যায় তা ভাবা হচ্ছে।’’

সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘আমি সকালে কাজ করতে চলে যেতাম। রাতে বাড়ি ফিরে রান্না করে মা ও দাদাকে খাওয়াতাম। সকালে দু’জনকে খাইয়ে কাজে চলে যেতাম। মাস দু’য়েক আগেও মা বিছানা থেকে উঠতে পারতেন। কোনও রকমে দেওয়ালে হাত দিয়ে চলাফেরা করতেন। পরে মা সেই ক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলেন।’’

প্রতিবেশীরা জানান, বাড়ির কাছাকাছি কাজ থাকলে সঞ্জয় এক বার দুপুরে বাড়িতে আসতেন মা ও দাদাকে দেখতে। কিন্তু অধিকাংশ দিনই সঞ্জয়কে বাড়ি থেকে দূরে কাজে যেতে হয়। অনেক দিন সঞ্জয় রাতে বাড়িও ফিরতে পারেন না।

সঞ্জয়দের আত্মীয়েরা জানান, পরিবারটি তেমন সচ্ছল নয়। সময় মতো খাবার ও ওষুধ সব সময়ে জুটত না ওঁদের। তার জেরেই মা ও বড় ছেলের মৃত্যু হয়েছে।

তবু সঞ্জয় তাঁর সাধ্য মতো দাদা ও মাকে দেখার চেষ্টা করেছেন বলেই প্রতিবেশীরা জানান। এমন আকস্মিক ঘটনায় শোকস্তব্ধ অজয়দের আত্মীয় এবং প্রতিবেশীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Retarded Man Sonarpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy