পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ বাসিন্দাদের। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নিয়ে কিছু কিছু মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন। এ বার একযোগে বাসিন্দারা শুধু মুখই খুললেন না, রীতিমতো একটি নির্মীয়মাণ প্রকল্পে ভাঙচুরও চালালেন। এমনকী, থানায় গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের নামে অভিযোগও দায়ের করলেন তাঁরা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক দল। পুলিশের দাবি, অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।
রবিবার দুপুরে রাজারহাটের মাঝেরআইট এলাকার ঘটনা। একটি পথ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ওই এলাকা। দফায় দফায় বিধাননগর কমিশনারেটের দু’টি থানার বাহিনী গিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। পরে পুলিশি আশ্বাস পেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে রাত পর্যন্ত উত্তেজনা ছিল।
ঠিক কী ঘটেছিল মাঝেরআইটে?
মাঝেরআইটে বসতির মধ্যেই চলছে একটি আবাসন প্রকল্পের কাজ। এ দিন বেলা ১১টার পরে ওই নির্মীয়মাণ প্রকল্প এলাকায় পাথর বোঝাই করছিল একটি দশ চাকার লরি।
পুলিশ জানায়, ১২টা নাগাদ পাথর নামিয়ে লরিটি রাস্তা ধরে ব্যাক করছিল। রাস্তার হালও তথৈবচ। সেই সময়ে ওখান দিয়ে সাহেরা বিবি (২৭) তাঁর তিন বছরের ছেলে সুহান আলিকে নিয়ে রিকশায় চড়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। কিন্তু ওই লরিতে খালাসি ছিলেন না বলেই অভিযোগ। চালক লক্ষ্যই করেননি পিছনে রিকশা আসছে। রিকশাচালক যখন সাহেরার বাড়ির গলিতে ঢুকতে যান, তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। লরিটি সোজা রিকশার উপরে উঠে যায়। রিকশা থেকে পাশের নদর্মায় ছিটকে পড়ে চালক নিতাই পাল প্রাণে বেঁচে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মা ও ছেলের। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে লরিচালক ইয়ামিন বাদশাকে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা প্রথমে লরিটিকে আটকান। এর পরে দেহ দু’টি আটকে রেখে রাজারহাট রোড অবরোধ শুরু করেন। ঘটনাস্থলে হাজির হয় রাজারহাট ও বিমানবন্দর থানার বাহিনী। দফায় দফায় আলোচনা করেও বাসিন্দাদের ক্ষান্ত করতে পারেনি পুলিশ। পরে পুলিশি আশ্বাসে অবরোধ উঠলেও উত্তেজনা কমেনি। বাসিন্দারা ওই নির্মীয়মাণ আবাসন প্রকল্পে ভাঙচুর চালান। অবস্থার গুরুত্ব বুঝে মৃদু লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। তারাই দেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়।
সাহেরা বিবির কাকা ইদ্রিশ আলি বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়ি নারায়ণপুর থেকে বাপের বাড়ি ফিরছিলেন সাহেরা। বাড়ির কাছেই এমন ঘটনা ঘটে গেল। কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝেরআইটে দীর্ঘ দিন ধরে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য চলছে। একের পর এক পুকুর বুজিয়ে চলছে একাধিক প্রকল্প। সেখানেই বালি, পাথর বোঝাই লরি পাড়ার সরু রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে। অথচ ওই রাস্তায় ভারী গাড়ির যাওয়ার কথা নয়। বারবার বলেও কোনও কাজ হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন আলি বলেন, ‘‘নেতা থেকে পুলিশকে বলেও কাজ হয়নি। এমন মৃত্যু মেনে নিচ্ছি না। রাজারহাট থানায় সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।’’
অভিযোগের তির প্রবীর কর, সব্যসাচী দত্ত ওরফে মুনিয়া, সইফুল ইসলাম-সহ শাসক দলের একাধিক নেতা ও সিন্ডিকেট চাঁইদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করে রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীরবাবুর দাবি, রাস্তা মেরামতির জন্য পাথর বোঝাই করা হচ্ছিল। লরিচালকের গাফিলতিতেই এমন দুর্ঘটনা। এর সঙ্গে সিন্ডিকেটের যোগ নেই। তিনি বলেন, ‘‘পুকুর ভরাট নিয়ে অভিযোগ পাইনি।’’
পাল্টা দাবিতে রাজারহাট নিউ টাউন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি আব্দুল মহিত বলেন, ‘‘যেখানে এলাকায় নির্মাণ শুরু হলেই সিন্ডিকেটের লোকেরা হাজির হন, সেখানে অসংখ্য জলাশয় ভরাট হচ্ছে, সেটা শাসক দল জানে না, তা হতে পারে না। মিথ্যা বলছেন তৃণমূল নেতারা।’’
মুনিয়া কিংবা সইফুলের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। যদিও বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা জানান, নির্দিষ্ট করে কারও নামে অভিযোগ হয়নি। তবে সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য নিয়ে অভিযোগ হয়েছে। তাতে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy