শহরের পথে জীর্ণ মিনিবাস। নিজস্ব চিত্র
যাত্রী পরিবহণের সাধারণ বাস ৩৫ ফুট দীর্ঘ। সেখানে মিনিবাস ২৫ ফুট। অন্য বাস চওড়ায় আট ফুটের বেশি হলেও মিনিবাস সীমাবদ্ধ সাত ফুটেই। বাসের নিরাপত্তা নির্ভর করে যে ‘হুইল বেস’ (দুই চাকার ব্যবধান)-এর উপরে, তা সাধারণ বাসের ক্ষেত্রে ১৮ ফুট হলেও মিনিবাসে ১১ ফুট।
কিন্তু সাধারণ বাসের মতো মিনিবাসেও যাত্রীরা বাদুড়ঝোলা হয়েই যাতায়াত করেন। সঙ্গে ওঠে মালপত্রও। এত সরু এবং ছোট গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করলে যে কোনও সময়ে উল্টে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। তেমনই মত বিশেষজ্ঞদের। তা হলে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কেন কোনও ব্যবস্থা নেয় না? পরিবহণ দফতরের মতে, যাত্রীর চাপ দিনদিন যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এই প্রবণতা আটকানো মুশকিল। তা হলে কি সরকার জেনেশুনেই যাত্রীদের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে? দফতরের এক কর্তার দাবি, এই সমস্ত দিক দেখার জন্য এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ (ইবি) রয়েছে। বিবেচনা করা হবে। গত শুক্রবার হাওড়া ব্রিজে মিনিবাস উল্টে দু’জনের মৃত্যু হওয়ার পরে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।
অতীতে মিনিবাসের চরিত্রই ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ১৯৭০ সাল নাগাদ কলকাতা শহরে ২০ আসনের মিনিবাস চালু হয়। তখন কোনও যাত্রীকেই বাসের ভিতরে দাঁড়াতে দেওয়া হত না। বাসের মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট। ভাড়া ছিল তখনকার সাধারণ বাসের থেকে পাঁচ গুণ বেশি। ফলে যাত্রী কম হলেও পুষিয়ে যেত।
পরে ১৯৮২ সাল নাগাদ মিনিবাসের চেহারা কিছুটা বড় করে ৩০ আসনের করা হয়। উচ্চতা বাড়ানো হয় আরও এক ফুট। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ বাসের থেকে মিনিবাসের ভাড়ার তফাত কমতে থাকে। বর্তমানে তা গড়ে এক টাকার ব্যবধানে এসেছে। সাধারণ বাসে যেখানে ৪২টি আসন থাকে, সেখানে মিনিবাসে থাকে ৩০টি। ফলে বাড়তি আয়ের আশায় রেষারেষি করে যাত্রী তোলেন চালকেরা। এখানেই বাড়ছে ঝুঁকি। শুধু বাড়তি যাত্রীই নয়, সেই সঙ্গে প্রচুর মালপত্রও তোলা হয় মিনিবাসে। দফতরের এক কর্তা জানান, নির্দিষ্ট আসনের থেকে বাড়তি যাত্রী তোলার বিষয়ে মোটর ভেহিক্লস আইনে স্পষ্ট ভাবে কিছু বলা নেই। তবে বাসের আসন-সংখ্যার উপরেই যে হেতু করের অঙ্ক নির্ধারিত হয়, তাই তাদের বাড়তি যাত্রী তোলার কথা নয়। ইবি বিষয়টি দেখবে বলেই মত ওই কর্তার।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মিনিবাসে যাত্রীদের দাঁড়ানোর জন্য তা হলে কেন হাতলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে? দফতরের এক কর্তা জানান, এটা মোটেই ধরে দাঁড়ানোর জন্য নয়, এটা ধরে যাতে সিট থেকে চলন্ত অবস্থায় কোনও যাত্রী সামনের দরজায় এগিয়ে আসতে পারেন, সে কারণেই রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী তোলা আটকাতে সমস্ত সিট পূরণ হলে দরজা তো বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। ওই কর্তার মন্তব্য, ‘‘আইনে এই ধরনের ব্যবস্থার কথা বলা নেই। এটা বাসচালক ও কন্ডাক্টরদের বিষয়।’’ এক সময়ে এই শহরে সরকারি ‘এস’ এবং ‘ই’ গোত্রের বিভিন্ন বাস দরজা বন্ধ করে চলত। এখন অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম মানতে দেখা যায় না।
এর পিছনে ভাড়ার তত্ত্ব দাঁড় করাচ্ছেন বাসমালিকেরা। মিনিবাসের মালিক সংগঠন ‘মিনিবাস অপারেটার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র নেতা অবশেষ দাঁ বলেন, ‘‘যাত্রী-ভাড়া এমনিতেই কম। তার উপরে সাধারণ বাসের সঙ্গে মিনিবাসের ভাড়ার ফারাক হওয়ায় কোনও লাভ হচ্ছে না। মিনিবাস চালানো দুষ্কর হয়ে পড়ছে।’’ পরিবহণ দফতরও জানাচ্ছে, কলকাতা শহরে ২৪০০ বাসের পারমিট দেওয়ার সীমা থাকলেও বাস চলছে মাত্র ১১০০। শহর এবং শহরতলি মিলিয়ে বাসের সংখ্যা দু’হাজারে ঠেকেছে।
কিন্তু কী কারণে বাসের গঠন এবং ভাড়া নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা করছে না সরকার?
দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাসের গঠনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করে। তাই এ ভাবে কখনও ভেবে দেখা হয়নি। এ বার দফতরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তবে মিনিবাস সংগঠনের তরফে ভাড়া সংক্রান্ত কোনও দাবি আমাদের করা হয়নি। পুরোটাই আলোচনা করে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy