আতঙ্ক নিয়েই মেট্রো যাত্রা নিত্যযাত্রীদের।
শনিবার মেট্রোয় হাত আটকে যাত্রী সজল কাঞ্জিলালের মৃত্যুর ঘটনায় ওই রেকের চালক এবং গার্ড-সহ তিনজনকে রবিবার সাসপেন্ড করল মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। শনিবারই মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, তাঁরা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটিই এ দিন ওই রেকের মোটরম্যান,কনডাক্টিং মোটরম্যান এবং চিফ লোকো ইন্সপেক্টরকে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নেয়।
রবিবার, মোটরম্যান(চালক) সঞ্জয় কুমার, কনডাক্টিং মোটরম্যান (গার্ড) সুদীপ সরকারের বয়ান রেকর্ড করে ওই তদন্ত কমিটি। মেট্রো রেল সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধ্যায় ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল? সেই সঙ্গে চালক এবং গার্ড কী কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এবং ওই রেকে তাঁরা কবি সুভাষের দিকে যাত্রা শুরুর সময় কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি বা সমস্যা লক্ষ্য করেছিলেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়।
ওই রেকটিকে ইতিমধ্যেই লোকো শেডে পাঠানো হয়েছে। চেন্নাই থেকে রেক নির্মাণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়ররা আসবেন ওই রেক পরীক্ষা করতে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন: দরজায় আটকে হাত, ছুটল মেট্রো! দেখল না আরপিএফ-গার্ড, মর্মান্তিক মৃত্যু যাত্রীর
শনিবার রাতেই সজল কাঞ্জিলালের পরিবার একটি অভিযোগ দায়ের করেন। গোটা ঘটনায় মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকেই দায়ী করা হয়েছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশ মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ(গাফিলতির জন্য মৃত্যু) এবং ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করেছে।
আরও পড়ুন: সজলকে মনে রাখবেন শিল্পীরা
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁরা ওই রেকের চালক গার্ডকে জেরা করবেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে দু’টি প্রশ্ন বার বার উঠে আসছে—— হাত আটকে যাওয়ার পরও দরজা কেন খুলে গেল না? কারণ, কোনও কিছুতে বাধা পেলেই মেট্র্রোর দরজা খুলে যাবে এমন প্রযুক্তিতেই ওই দরজা তৈরি। অন্যদিকে, যদি যান্ত্রিক ত্রুটিতে দরজা না-ও খুলে থাকে সেক্ষেত্রে গার্ড বা কনডাক্টিং মোটরম্যানের নজর কী ভাবে এড়িয়ে গেল? সেক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠছে, সজল সামনের দিক থেকে তিন নম্বর কামরায় ওঠার চেষ্টা করছিলেন। প্ল্যাটফর্মের কোনায় দাঁড়িয়ে থাকেন রেল নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান। তিনি কেন দেখতে পেলেন না? দেখতে পেলেও তিনি কি সতর্ক করেছিলেন?
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ দাবি করেছেন, রেল নিরাপত্তা বাহিনীর ওই জওয়ান বিপদসূচক বার্তা হিসাবে বাঁশি বাজিয়েছিলেন। তাহলে তাঁর বাঁশির আওয়াজ শুনে কেন সতর্ক হলেন না চালক বা গার্ড? এই সমস্ত তথ্য জানতে জেরা করা হবে চালক এবং গার্ডকে, এমনটাই ইঙ্গিত পুলিশের। সেই সঙ্গে ট্রেনে থাকা যাত্রীদের কয়েকজন দাবি করেছেন, তাঁরা কামরার মধ্যে থাকা আপৎকালীন লাল বোতাম টিপে সতর্ক করেন চালককে। সেই সতর্কবার্তা চালক পেয়েছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা জানতে পেরেছেন, সজলবাবুর আঙুল আটকে গিয়েছিল দুই দরজার মাঝে। পুরো হাত আটকায়নি। মেট্রোর মোটরম্যানদের একাংশ দাবি করেছেন, নতুন রেকে দুই দরজার প্রান্তে লাগানো রবারের আবরণ যথেষ্ট পুরু। সেই কারণে আঙুল বা ওই মাপের কিছু আটকালে সেন্সর তা বুঝতে পারে না। ফলে দরজা স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলে যায়নি এবং চালকও কোনও সতর্কবার্তা পাননি।
অথচ, ওই রেকের প্রযুক্তি অনুযায়ী, সেটা হওয়ার কথা নয়। মেট্রো রেক রক্ষনাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মীর কথায়, মেধা সিরিজের ওই রেকে দুই দরজার ফাঁকে দেড় সেন্টিমিটারের বেশি চওড়া কিছু আটকালেই দরজা খুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ওই প্রযুক্তিতে সমস্যা রয়েছে। দরজার সমস্যা সহ আরও কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে প্রায় আড়াই বছর ধরে ওই নতুন রেক ব্যবহার করা হয়নি। তিনটি রেক ফেরতও পাঠানো হয়। বাকি দুটি মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ররা ‘ফিট’ ঘোষণার পর চালানো শুরু হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে যে ওই রেক গুলির প্রযুক্তিগত সমস্যা এখনও রয়ে গিয়েছে তা শনিবারের ঘটনায় প্রমাণিত হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy