অতীতেও বাজি পোড়ানোর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন রোশনি আলি। ছবি: ফেসবুক
সব ধরনের বাজি বিক্রি ও পোড়ানো নিষিদ্ধ বলে রায় দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। গত শুক্রবার দেওয়া আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও বাজি ব্যবহার করা যাবে না। শুধুমাত্র প্রদীপ এবং মোমবাতি জ্বেলেই দীপাবলি, ছট, কিংবা গুরু নানকের জন্মদিনের মতো উৎসব পালন করতে হবে। আদালতের এই রায়ের পিছনে রয়েছেন কলকাতার মেয়ে রোশনি আলি। তিনিই বাজি নিষিদ্ধ করার আর্জি নিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন। সেই মামলার রায়েই বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় বাজি পোড়ানো, বিক্রি করার অনুমতি দেব কী ভাবে? বৃহত্তর মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত। ক্রেতা, বিক্রেতা, প্রস্তুতকারী সংস্থা— সবার কথা ভাবতে হবে।’’
বাজি সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলাটি করেছিলেন পরিবেশ কর্মী রোশনি আলি। তাঁর যুক্তি ছিল, অতিমারি পরিস্থিতি এখনও বেশ গুরুতর পর্যায়ে রয়েছে। এমন অবস্থায় গত বছরও হাই কোর্ট বাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সেই রায়ের সূত্র ধরেই মামলাকারী রোশনি আদালতকে বলেন, ‘‘এ বছরও বাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক। কারণ বাজির ধোঁয়া থেকে দূষণে বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদেরও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।’’
তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বলছে প্রাক্তন সাংবাদিক রোশনি এখন চলচ্চিত্র পরিচালক। গত বৃহস্পতিবার রোশনি তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলেই জানিয়েছিলেন, আইনজীবী বন্ধু রচিত লাখমানির সাহায্য নিয়ে বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ করার দাবিতে তিনি একটি জনস্বার্থ মামলা করেছেন। শুক্রবারের শুনানি হবে জানিয়ে সকলের শুভেচ্ছা চেয়েছিলেন রোশনি। আর শুক্রবার শুনানিতেই নিষেধাজ্ঞা আদায় করে নিতে পারেন তিনি।
এটা তার সত্যিই বড় জয়। এই প্রথম নয়, অতীতেও নানা সামাজিক সমস্যা নিয়ে মুখ খুলেছেন রোশনি। ২০১৫ সালের কালীপুজোর সময়ও বাজির বিরুদ্ধে নেটমাধ্যমে সরব হয়েছিলেন। যাঁরা বাজি পোড়ান তাঁদের ‘সার্টিফায়েড ইডিয়টস’ বলে লেখেন। ধাপার মাঠে আবর্জনা পোড়ানোর ফলেও যে দূষণ ছড়ায়, তা নিয়েও রোশনি সরব হয়েছেন। গত বছরের গণেশ পুজোর সময়ও (২২ অগস্ট, ২০২০) একটি ফেসবুক পোস্ট করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন পশুপ্রেমী রোশনি। তাঁর বক্তব্য ছিল সারা বছর হাতিদের গুরুত্ব না দিয়ে একদিনে পুজো ‘ভণ্ডামি’।
সরব হয়েছেন রাজনৈতিক বিষয়েও। অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজো নিয়ে যেমন তাঁর মতামত জানিয়ে ফেসবুক পোস্ট করেছেন, তেমনই রামায়ণের চরিত্র সীতার অবমাননা প্রসঙ্গে ব্লগ লিখেছেন। কখনও তাঁর পোস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা স্পষ্ট হয়েছে কখনও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশংসা।
নিজের বংশপরিচয় দিতে ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর রোশনি ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার বাবা ছিলেন একজন মুসলিম, আমার মা একজন হিন্দু। আমার যাবতীয় শিক্ষায় ভীষণ ভাবে খ্রিস্টান প্রভাব রয়েছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আমার একজন করে পিসি রয়েছেন আর আমার দিদিমা ছিলেন ব্রিটিশ।’ কিন্তু তিনি নিজে কী বিশ্বাস করেন? রোশনির লেখায়, ‘আমি রুপোর তৈরি বুদ্ধের পেনডেন্ট পরি গলায়, আবার আমার পাসপোর্ট বলে আমি মুসলিম। আমি প্রতি সপ্তাহে একটি কালী মন্দিরে যাই, কিন্তু আমার ‘আলি’ পদবিকেও ভালবাসি কারণ, সেটি বাবার থেকে পাওয়া।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy