Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kali Puja 2023

শব্দ দৈত্য ফিরে এল, এনআরএস চত্বরেই বাজি নিয়ে উৎসবে মেতে উঠলেন ডাক্তারির পড়ুয়ারা

হাসপাতালে বাজি ফাটানো বারণ, জানা নেই? প্রশ্নের উত্তরে এক ডাক্তারি পড়ুয়ার উত্তর, ‘‘আমরা তো আর শব্দবাজি ফাটাচ্ছি না।’’ কিন্তু কোনও বাজি যে হাসপাতাল চত্বরে ফাটানো যায় না, তা কি তাঁরা জানেন না?

বাঁ দিকে, এন আর এসের হস্টেলের সামনেই ফাটছে বাজি। ডান দিতে, বি সি রায় হাসপাতালের সামনে বাজির শব্দমাত্রা মাপা হচ্ছে। রবিবার রাতে।

বাঁ দিকে, এন আর এসের হস্টেলের সামনেই ফাটছে বাজি। ডান দিতে, বি সি রায় হাসপাতালের সামনে বাজির শব্দমাত্রা মাপা হচ্ছে। রবিবার রাতে। ছবি: দেবাশিস ঘড়াই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৯
Share: Save:

প্রথমে মনে হয়েছিল বহিরাগতেরা কোনও ভাবে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়ে বাজি ফাটাচ্ছেন। কিন্তু সামনে গিয়ে প্রশ্ন করতেই বোঝা গেল, তাঁরা কেউই বহিরাগত নন। বরং তাঁরা সকলেই জুনিয়র ডাক্তার! রবিবার রাত ১০টা নাগাদ এমনই চিত্র দেখা গেল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লেডি ডক্টর্স হস্টেলের সামনে। সেখানে চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাজির টুকরো, এমনকি শেলও। ধোঁয়ায় চারদিক ভরে রয়েছে। আর ওই হস্টেলের দরজার সামনেই স্তূপাকৃত করে রাখা রয়েছে বাজির প্যাকেট।

হাসপাতালে বাজি ফাটানো বারণ, জানা নেই? প্রশ্নের উত্তরে এক ডাক্তারি পড়ুয়ার উত্তর, ‘‘আমরা তো আর শব্দবাজি ফাটাচ্ছি না।’’ কিন্তু কোনও ধরনের বাজিই যে হাসপাতাল চত্বরে ফাটানো যায় না, তা কি তাঁরা জানেন না? দলবদ্ধ ডাক্তারি পড়ুয়াদের সকলেই প্রায় ঘাড় নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বললেন। তার মধ্যে এক জন শুধু বললেন, ‘‘দুঃখিত, আর কখনও হবে না।’’ এ বার বাজির প্যাকেটগুলি দেখিয়ে প্রশ্ন করা হল— ‘‘এগুলো কি সবুজ বাজি?’’ তাঁরা পরস্পরের মুখের দিকে দেখতে লাগলেন। সবুজ বাজি সম্পর্কে কোনও ধারণা তাঁদের আছে কি না, সেই প্রশ্নও করা হল তাঁদের। সকলেই এ নিয়ে তেমন ধারাণা নেই বলেই জানালেন। আরও জানালেন, এই সমস্ত বাজি বাইরে থেকে কিনেছেন তাঁরা। সেগুলিতে যে কোনও রকম বাধানিষেধ আছে, তা তাঁদের জানা ছিল না।

এই কথোপকথন শেষ হতেই দলবল মিলে তাঁরা কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল, তাঁরা সত্যিই হয়তো বিষয়টি নিয়ে দুঃখিত। কিন্তু আড়াল থেকে দেখা গেল, দূরে গিয়ে দলবদ্ধ ভাবে ফের তাঁরা বাজির উৎসবেই মেতেছেন! সংক্ষেপে সারা শহরের শব্দবাজির কী ছবি, তার একটা বিজ্ঞাপন হয়ে রইল এন আর এসের এই ঘটনা। ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পেরে এন এর এসের সুপার ইন্দিরা দে বলেন, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে শব্দবাজি কেন, কোনও ধরনের বাজিই ফাটানো যায় না। কারা করেছে, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

তবে শুধু এন আর এস নয়। আর জি কর, এসএসকেএম, কলকাতা পুলিশ হাসপাতাল, বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল-সহ একাধিক হাসপাতালের রবিবার রাতের চিত্রটা প্রায় একই রকম। সেখানে হাসপাতাল চত্বরে বাজি ফাটানোর মতো কোনও ঘটনা দেখা যায়নি বটে, তবে হাসপাতালের গা ঘেঁষে যে পরিমাণ শব্দবাজি ফাটতে শোনা গিয়েছে, সঙ্গে থাকা সাউন্ড ডেসিবেল মিটারে তার শব্দমাত্রা ৯৫ থেকে ১১৫ ডেসিবেলের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। নিয়ম মতো, হাসপাতাল ও সংলগ্ন চত্বর ‘সাইলেন্স জ়োন’ হওয়ায় কোনও বাজি ফাটারই কথা নয়। তবে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘‘এটা প্রতি বছরের ঘটনা।’’ বি সি রায় শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, যেন কোথাও বাজির লড়াই চলছে। মুহুর্মুহু বাজির শব্দে চারদিক ফেটে যাচ্ছে। জরুরি বিভাগের সামনেই তখন শিশুদের কোলে নিয়ে বসে রয়েছেন মায়েরা। ওই হাসপাতালের এক পুলিশকর্মী জানালেন, হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় যে সব বহুতল থেকে বেশি বাজি ফাটে, সেগুলি চিহ্নিত করে সেখানে এ বছর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তার পরেও এই অবস্থা? ওই পুলিশকর্মীর উত্তর, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে তো ফাটছে না। আর কী করতে পারি বলুন?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja 2023 Fire Crackers NRS Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy