Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Maternal Mortality

প্রসূতি মৃত্যুতে শীর্ষে কলকাতা! কারণ খুঁজছে স্বাস্থ্য দফতর

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত যে ১১৬২ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে মৃতের সংখ্যা রাজ্যে সর্বাধিক।

—প্রতীকী চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩১
Share: Save:

বেশ কয়েক মাস ধরে স্বাস্থ্য দফতরের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা। গত এক বছরে রাজ্যে ১১৬২ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ২৪ শতাংশ আবার নাবালিকা! শুধু তা-ই নয়, রাজ্যের জেলাগুলির মধ্যে প্রসূতি মৃত্যুতে শীর্ষে কলকাতা! যেখানে চিকিৎসা পরিষেবা রাজ্যের মধ্যে সব থেকে উন্নত­­, সেখানেই এমন পরিস্থিতি? ফলে, গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্য চিন্তা বাড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত যে ১১৬২ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে মৃতের সংখ্যা রাজ্যে সর্বাধিক। কলকাতায় মারা গিয়েছেন ২০৪ জন প্রসূতি। প্রসূতি মৃত্যুর নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ (১৬২ জন), তৃতীয় স্থানে পূর্ব বর্ধমান (৭৯ জন) এবং চতুর্থ মালদহ (৭১ জন)।

শহরের হাসপাতালগুলির মধ্যে ওই সময়সীমায় সবচেয়ে বেশি প্রসূতি মারা গিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। তার পরেই রয়েছে যথাক্রমে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও রাজ্যের সর্বোত্তম সরকারি হাসপাতাল হিসাবে পরিচিত এসএসকেএম!

এর পরে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, কলকাতার মতো উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবাযুক্ত শহরে তথাকথিত নামী মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এত প্রসূতি কেন মারা যাচ্ছেন? স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজগুলির একাধিক স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকদের দাবি, কারণ আসলে বহুমুখী।

প্রথমত, সরকারি ক্ষেত্রে মুড়ি-মুড়কির মতো অস্ত্রোপচার (সিজ়ার) করে সন্তানের জন্ম হচ্ছে। যত জন প্রসূতি সরকারি হাসপাতালে শিশুর জন্ম দিচ্ছেন, তাঁদের ৪১ শতাংশেরই অস্ত্রোপচার করে হচ্ছে। প্রসূতি আর তাঁর বাড়ির লোক প্রসব যন্ত্রণা এড়াতে অস্ত্রোপচার চাইছেন। আবার, জেলা স্তরের বিভিন্ন হাসপাতালে নিযুক্ত পিজিটি এবং সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের একাংশ নিজেদের অভিজ্ঞতা বাড়াতে বেশি সংখ্যক প্রসূতির অস্ত্রোপচার করছেন।

এসএসকেএমের এক স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘জেলায় অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে যে কেসগুলি জটিল হয়ে যাচ্ছে, সেগুলি পত্রপাঠ কলকাতায় পাঠানো হচ্ছে। এতে প্রসূতির ধকল বাড়ছে, সময় নষ্ট হচ্ছে, প্রসূতির অবস্থা আরও জটিল হচ্ছে এবং তিনি কলকাতায় এসে মারা যাচ্ছেন।’’

সম্প্রতি হুগলির ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালের ঘটনার কথাই ধরা যাক। অস্ত্রোপচারের পরে সেখানে পর পর পাঁচ জন প্রসূতির অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এক জনের মৃত্যু হয়। বাকি চার জন প্রসূতিকে কলকাতার একাধিক মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়।

প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির দ্বিতীয় কারণ হল, নাবালিকা প্রসূতি অস্বাভাবিক বেড়েছে। তাদের প্রসবে ঝুঁকি অনেক বেশি।

তৃতীয় কারণটি চিকিৎসকদের বেশি করে ভাবাচ্ছে। সেটি হল, হঠাৎ রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরে একসঙ্গে অনেক প্রসূতির অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবণতা। হয় তাঁদের রক্তক্ষরণ শুরু হচ্ছে বা হেপাটো-রেন্যাল ফেলিয়োর বা একসঙ্গে কিডনি ও যকৃৎ বিকল হয়ে অবস্থা সঙ্কটজনক হচ্ছে। অথচ, বেসরকারি হাসপাতালে এ রকম দেখা যাচ্ছে না বলে চিকিৎসকদের দাবি।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সরকারি ক্ষেত্রে সরবরাহ করা কোনও ওষুধ বা ইনজেকশন বা আইভি ফ্লুইড থেকে সংক্রমণ হচ্ছে? একাধিক ইনজেকশন ও ওষুধ পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য দফতর সন্দেহজনক কিছু পায়নি বলে জানিয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ইনজেকশন বা ফ্লুইড কাকে, কখন, কতটা দিতে হবে, সেটা ঠিক করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের একাংশের গাফিলতি থেকে যাচ্ছে? স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘বিশেষ কমিটি গঠন করে প্রত্যেক প্রসূতির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, সিজ়ার প্রোটোকল নিয়েও আলোচনা চলছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy