ফাইল চিত্র।
দিনকয়েক আগে দুর্গাপুজোর চাঁদার বিল বিলি করা হয়েছিল বস্তির প্রতিটি বাড়িতে। জানানো হয়েছিল, এ বছরের ‘বড় পুজো’র চাঁদার অঙ্ক। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়েছিলেন ওই বস্তির বাসিন্দাদের অনেকেই। এখনও ঠিক মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি তাঁরা। তাই পুজোর দায়িত্বে থাকা ‘দাদাদের’ কাছে চাঁদার অঙ্ক কিছুটা কমানোর অনুরোধ করেছিলেন ওই বাসিন্দারা। কিন্তু অনুরোধ রাখা তো দূর, দাবি মতো চাঁদা না দিলে ঘর ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। হুমকি আসছে মারধরেরও।
ই এম বাইপাস লাগোয়া ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বস্তি সংলগ্ন পুজো ঘিরে এমনই অভিযোগ উঠেছে। শুধু ওই বস্তিই নয়, চাঁদার জুলুমের অভিযোগ আসছে শহরের অন্যান্য এলাকা থেকেও। দাবি মতো চাঁদা না দিলে পুজোর পরে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দেওয়া হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। উৎসবের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে এই জুলুমের তীব্রতা। ঝামেলার ভয়ে অনেকেই থানা-পুলিশ করতে চাইছেন না। বরং কোনও মতে চাঁদার টাকা জোগাড় করে নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে চাইছেন। যাঁরা তা-ও পারছেন না, তাঁরা ভুগছেন প্রবল আতঙ্কে। প্রশ্ন উঠেছে, উৎসবের নামে চাঁদার এই জুলুম বন্ধ হবে কবে? কেন প্রশাসন নজরদারি চালিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেবে না? গত বছর চাঁদার জুলুম তুলনায় কম থাকলেও এ বছর তা লাগামছাড়া, এমনই অভিযোগ শহরবাসীর একাংশের।
বাইপাস সংলগ্ন ওই বস্তির বাসিন্দারা জানান, সেখানকার পুজোটি নামেই মহিলা পরিচালিত। আসলে ওই নামের আড়ালে পুজোর পরিচালনায় আছেন এলাকার কিছু ‘দাদা’। তাঁরাই চাঁদা আদায়ে বাসিন্দাদের নানা ভাবে ভয় দেখাচ্ছেন ও হুমকি দিচ্ছেন। দেওয়া সম্ভব নয় জেনেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোটা অঙ্কের বিল ধরানো হয়েছে বলে অভিযোগ। কারও ক্ষেত্রে অঙ্কটা এক হাজার, কারও ক্ষেত্রে দু’হাজার, কেউ পেয়েছেন আরও বেশি টাকার বিল। ওই বস্তির বাসিন্দা এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘করোনার পর থেকে কাজকর্মের অবস্থা ভাল নয়। হাজার টাকাটা এ বছর একটু কমাতে বলেছিলাম। তাতেই হুমকি দিতে শুরু করল। না দিলে নাকি বাড়ি ভাঙচুর করবে। এখানেই তো থাকতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে রাজি হলাম।’’ যদিও এ বিষয়ে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পুজো কমিটি এবং পুলিশকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে আমি অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার একাধিক পুজোর ক্ষেত্রেও উঠেছে চাঁদার জুলুমের অভিযোগ। উত্তরের উল্টোডাঙা সংলগ্ন এলাকার একটি বারোয়ারি পুজোর বিরুদ্ধে জুলুমের অভিযোগ করেছেন এক ব্যবসায়ী। তাঁর দাবি, দিনকয়েক আগে স্থানীয় কয়েক জন ‘দাদা’ এসে পাঁচ হাজার টাকা চেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর অত টাকা দেওয়া যাবে না বলায় তাঁকে শুনতে হয়েছে, ‘‘সারা বছরে মায়ের নামে তো এক বারই আসি। কোনও আপত্তি শোনা হবে না!’’ গন্ডগোলের ভয়ে থানা-পুলিশ এড়িয়ে টাকা দিয়ে নিজের নিরাপত্তা ‘কিনেছেন’ তিনি।
এখানেই উঠছে প্রশ্ন। এ বছর রাজ্যের প্রায় ৪৩ হাজার ক্লাবকে পুজোর অনুদান বাবদ ৬০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, বিদ্যুতের বিলেও ৬০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা করা হয়েছে। তার পরেও কেন এই জুলুম? গল্ফ গ্রিনের একটি বারোয়ারি পুজোর চাঁদার জুলুমের শিকার গৌতম পাত্র নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘সাধারণ মানুষের উপরে চাঁদার ভার চাপিয়ে এত জাঁকজমক কেন? সরকার থেকে এত অনুদান, ছাড় দিচ্ছে, তার পরেও কেন আমাদের উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছে!’’
যদিও চাঁদার জুলুম প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বললেন, ‘‘চাঁদার জোরজুলুম নিয়ে কোনও অভিযোগ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এমন কোনও অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy