ফাইল চিত্র।
সন্ধ্যা থেকেই এলাকায় শুরু হয়েছিল বাজির তাণ্ডব। এক সময়ে আর সহ্য করতে না পেরে পুলিশে যান এলাকার বাসিন্দারা। জানান, শব্দবাজির উৎপাতে টেকা দায়। অথচ থানায় বসে পুলিশকর্মী বলেছিলেন, ‘‘বাজি ফাটানো থেমে গিয়েছে। কোথাও কিচ্ছু নেই।’’ পরে জানা যায়, স্থানীয় এক ‘প্রভাবশালী’ নেতার দলবলই সে দিন ওই শব্দবাজি ফাটাচ্ছিল। গত বছর শব্দবাজির ক্ষেত্রে এমন পুলিশি ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিজ্ঞতার কথাই জানাচ্ছে পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চ।
সংগঠনের সম্পাদক নব দত্তের বক্তব্য, ‘‘প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পিছিয়ে যায় পুলিশ। অথচ আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার মদতেই সর্বত্র শব্দবাজির তাণ্ডব চলে। বিক্ষিপ্ত ভাবে কেউ এক জন শব্দবাজি ফাটাল, তাতে শব্দদূষণ তেমন হয় না। কিন্তু প্রভাবশালীদের মদতে সংগঠিত ভাবে যেখানে শব্দবাজি ফাটানো হয়, সেখানেই শব্দদূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়!’’
আসন্ন কালীপুজোয় শব্দদানবের দাপট আটকাতে মাইক, বড় মাপের সাউন্ড বক্স বা ডিজে বক্স, নিষিদ্ধ শব্দবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রবিবার প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। কিন্তু সে নির্দেশ আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়েই সংশয়ে শহরের পরিবেশকর্মীদের একটি বড় অংশ। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা-সহ রাজ্যে মাইকের শব্দ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি আজ, বুধবার জাতীয় পরিবেশ আদালতে হওয়ার কথা। সেই মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনার যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেটা প্রতি বছরই দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে শব্দতাণ্ডব আটকায় না। যত ক্ষণ না প্রস্তুতকারী সংস্থাকে মাইকের শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হবে বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে, তত ক্ষণ এ সমস্যা মিটবে না! কারণ, ঘুরে ঘুরে প্রতিটি মাইকে সাউন্ড লিমিটর লাগানো সম্ভব নয়। উৎসেই শব্দের নাশ করতে হবে।’’
যদিও সেই নাশ করার প্রক্রিয়া নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নয় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের লোকবল নেই। তাই পুলিশের উপরেই ভরসা করতে হয়। পুলিশ যদি প্রভাবশালীদের না আটকায়, আমরা কত দূর কী করতে পারি!’’
পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র সচেতনতা প্রচার করে শব্দতাণ্ডব আটকানো সম্ভব নয়। এ নিয়ে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘সচেতনতা প্রচার প্রতি বছরই হয়। তাতে লাভ হলে শব্দতাণ্ডব নিয়ে এত কথা বলার প্রয়োজন হত না!’’ আর এক পরিবেশকর্মী বলছেন, ‘‘যত ক্ষণ না কড়া শাস্তি হচ্ছে, তত ক্ষণ কেউ ভয় পাবেন না! তাই বছর বছর শব্দতাণ্ডব নিয়ে আলোচনা চললেও মনে ভয় না থাকলে বাস্তবে পরিস্থিতি পাল্টাবে না।’’
শব্দতাণ্ডব রুখতে আবার ‘স্পট ফাইন’ করার পক্ষপাতী সবুজ মঞ্চ। রাজ্য সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করছেন সংগঠনের সদস্যেরা। নববাবুর কথায়, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিশ যৌথ ভাবে পরিদর্শনে যাক। যেখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে শব্দবাজির অভিযোগ আসছে, সেখানে গিয়ে যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে স্পট ফাইন করুক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে খাতায়-কলমে শুধু নির্দেশই থাকবে। শব্দতাণ্ডব রোখা যাবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy