Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Senior Citizen

দশ বছর পরেও ‘প্রণামে’র বাইরে একাকী প্রবীণ!

কলকাতা পুলিশের প্রণাম কি তবে শহরের একাকী বয়স্কদের কাছে আজও পৌঁছতে ব্যর্থ?

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৪৮
Share: Save:

শহরে বাড়ছে নিঃসঙ্গ বয়স্কদের সংখ্যা। সে কথা ভেবেই কলকাতা পুলিশের তৈরি ‘প্রণাম’ প্রকল্পে সদস্য হওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি আগের থেকে বদলেছে। অথচ কিছু থানা এখনও জানেই না সেই নিয়ম! ফলে পুরনো নিয়মের গেরোয় ‘প্রণাম’-এর বাইরে থাকছেন অসংখ্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। অভিযোগ, যার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

তেমনই একটি বাস্তব ছবি উঠে এসেছিল ২২ ফেব্রুয়ারি যাদবপুরের গল্ফগ্রিনে বছর ৮১-র বৃদ্ধ বালসুব্রহ্মণ্যম শ্রীনিবাসনের পচাগলা দেহ উদ্ধারের পরে। ওই দিন সন্ধ্যায় দুর্গন্ধে টিকতে না পেরে পড়শিরাই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে আবাসনের তেতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে শ্রীনিবাসনের দেহ। পড়শিরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, দেহ উদ্ধারের দিন চারেক আগে শেষ বার ওই বৃদ্ধকে বাইরে দেখেছিলেন তাঁরা। তদন্তে জানা যায়, বৃদ্ধের এক মেয়ে রয়েছেন। কিন্তু বিয়ের পরে তিনি কলকাতার বাইরে থাকেন। পরে জানা যায় তাঁর একটি ছেলেও রয়েছেন। তিনি অবশ্য কলকাতাতেই থাকেন। তদন্তে নেমে প্রথমে কারও নম্বর পায়নি পুলিশ। আবাসনের রেজিস্টারেও কারও নম্বর দেননি ওই বৃদ্ধ। তখনই পড়শিদের তরফ থেকেই প্রশ্ন ওঠে, প্রণামের আওতায় কেন ছিলেন না ওই বৃদ্ধ?

কলকাতা পুলিশের প্রণাম কি তবে শহরের একাকী বয়স্কদের কাছে আজও পৌঁছতে ব্যর্থ? যাদবপুরের ওই ঘটনার পরে পুলিশ দাবি করেছিল, বৃদ্ধকে প্রণামের আওতায় আনা যায়নি। কারণ, বৃদ্ধের ছেলে নেতাজিনগরে থাকেন। সাধারণত ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে সন্তান থাকলে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণ-প্রবীণাকে প্রণামের সদস্য করা হয় না। এ ক্ষেত্রে গল্ফগ্রিন ও নেতাজিনগরের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটারের অনেকটাই কম। ফলে তাঁকে প্রণামের আওতায় আনা হয়নি।

কিন্তু যাদবপুর থানার দাবি যে ঠিক নয়, তা জানিয়ে কলকাতা কমিউনিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, দূরত্ব সংক্রান্ত কোনও নিয়ম নেই, ছিলও না কোনও দিন। ২০০৯ সালের ১ জুলাই, শহরের একাকী বয়স্কদের সংখ্যা বাড়তে দেখে চালু করা হয়েছিল কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’। মূলত যাঁদের সন্তান বাইরে থাকেন, বা কারও মেয়ে বিয়ের পরে দূরে চলে গিয়েছেন এমন বয়স্ক বা নিঃসন্তান এবং অবিবাহিত প্রবীণ-প্রবীণারাই পেতেন এর সদস্য পদ।

সেই সময়ে নিয়ম ছিল, সন্তান কাছাকাছি থাকলে তাঁকে সদস্যপদ দেওয়া হবে না। তখনও বোঝা যায়নি যে, এই ক’বছরে শহরের বুকে একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংখ্যা এত বাড়বে। এমনকি কাছাকাছি থাকা সন্তানও বাবা-মাকে দেখবেন না। বর্তমানে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। অনেক সন্তানই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব আর নিতে চান না। গত কয়েক বছরে ঘর থেকে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দেহ উদ্ধারের একাধিক ঘটনার পরে পুলিশের তরফ থেকে তাই নিয়মে বদল আনা হয়েছে। সেই নিয়ম হল, একমাত্র একই বাড়িতে সন্তান যদি থাকেন, তেমন পরিস্থিতি ছাড়া সকল প্রবীণ নাগরিককেই প্রণামের সদস্য করা হবে।

সেই বদল মেনে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট, রবীন্দ্র সরোবর-সহ একাধিক থানা একা প্রবীণদের প্রণামে সদস্য করে। এমনই এক থানার অফিসার ইনচার্জের কথায়, ‘‘বেশি বয়সে মূল দরকার চিকিৎসার। ফলে বয়স্কদের একটাই দাবি থাকে, তা হল অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা। ওই সুবিধা থেকে যাতে তাঁরা বঞ্চিত না হন, তাই সদস্য করা হয়।’’

প্রশ্ন, এই বার্তা কেন কলকাতা পুলিশ এলাকার সব থানায় পৌঁছয়নি? কমিউনিটি পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এমন হওয়ার কথা নয়। সে রকম কিছু ঘটলে ওই থানাই বলতে পারবে, কেন তারা ওই নিয়মে চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Senior Citizen Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy