হয়রান: সেরিব্রাল অ্যাটাকের রোগী রেবা দাস আটকে রয়েছেন মিছিলের ফাঁসে। শুক্রবার, ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
প্রবল ঘামছেন বৃদ্ধা। দু’চোখ কেমন যেন বুজে আসছে! অস্ফুটে মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে অস্বস্তিজনক শব্দ। বুকের কাছে ধরে থাকা প্লাস্টিকের ব্যাগে দেখা যাচ্ছে, স্ক্যানের প্লেট!
মিছিলে এসেছিলেন? প্রশ্ন শুনেও উত্তর নেই বৃদ্ধার। পাশে বসা মেয়ে রেগে বললেন, ‘‘এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে চালক এখানে বাস ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তার পরে ভাড়া চেয়ে নিয়ে কন্ডাক্টর আর চালক বাস থেকে নেমে গিয়েছেন। তাঁরা কোথায়, জানি না। কত ক্ষণে ফিরবেন, তা-ও জানি না। মাকে নিয়ে এ ভাবে কত ক্ষণ বসে থাকতে হবে, ভেবে পাচ্ছি না।’’
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় এই দৃশ্য দেখা গেল চৌরঙ্গি চত্বরে, একটি পাঁচতারা হোটেলের উল্টো দিকে। বাসটিকে ঘিরে তখন মিছিলে আসা একাধিক গাড়ি ও বাসের ভিড়। আশপাশ দিয়ে জনস্রোত যাচ্ছে কয়েক পা দূরের সভামঞ্চের দিকে। বাসটির গায়ে লেখা ৪১ এবং ৪১বি। দক্ষিণ কলকাতার লায়েলকা থেকে হাওড়াগামী ওই বাসে মেয়ে মামণি দাসের সঙ্গে উঠেছিলেন বছর একষট্টির রেবা দাস। হাওড়ার সালকিয়ায় তাঁদের বাড়ি। মামণি বলেন, ‘‘মায়ের সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এ দিনের তারিখ দেওয়া হয়েছিল। সভার ঝামেলায় যাতে পড়তে না হয়, তাই ভোরে হাসপাতালে চলে গিয়েছিলাম। সাড়ে ৮টার মধ্যে সব হয়েও গিয়েছিল। কিন্তু বাসে ওঠার পরে এই অবস্থা। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আটকে আছি।’’ ওই বাসেই উঠেছিলেন ক্যাথিটার পরা বৃদ্ধ নিমাই কর্মকার। কয়েক দিন আগে এসএসকেএম হাসপাতালেই তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। এ দিন ছেলে তাঁকে বর্ধমানের বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছিলেন। কিন্তু হাওড়ার ওই বাসে উঠেই বিপত্তি। বৃদ্ধ কোনও মতে বললেন, ‘‘শরীর জ্বালা করছে। আর পারছি না!’’
শিয়ালদহ চত্বরেও দেখা গিয়েছে রোগীদের ভোগান্তির একই চিত্র। আনন্দপুরের চৌবাগা থেকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন বছর ছেষট্টির বিশ্বনাথ মাঝি। দিন পনেরো আগে তাঁর সাইকেলে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। বিশ্বনাথের একটি পায়ের পাতা থেকে হাঁটুর মধ্যের অংশ বেশ কয়েক টুকরো হয়ে যায়। প্লেট বসেছে। তাঁর ছেলে প্রসেনজিৎ বললেন, ‘‘বহু খুঁজেও ট্যাক্সি পাইনি। হুইলচেয়ারে বসিয়েই হাসপাতাল থেকে বাবাকে শিয়ালদহ স্টেশনে নিয়ে গিয়েছিলাম অটোর খোঁজে। কিন্তু সেখানেও সব ফাঁকা।’’ হাবড়ার অনিল দাস আবার বার্ধক্যজনিত সমস্যা নিয়ে এন আর এসে গিয়েছিলেন। তিন ঘণ্টা বসে থাকার পরেও শিয়ালদহ যাওয়ার গাড়ি পাননি। শেষে ৩০০ টাকায় রিকশা ভাড়া করে স্টেশনে যান।
ভোগান্তি এড়াতে পথের সুবন্দোবস্ত করা রয়েছে বলে পুলিশ বার বার দাবি করলেও সভা ঘিরে রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হল কেন? লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের অতিরিক্ত নগরপাল পদমর্যাদার এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ সভাস্থলের কাছে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি আটকে থাকার পরে ৪১ নম্বর ওই বাসের চালক স্টিয়ারিংয়ে বসতেই পুলিশ ধরে তাঁকে। দ্রুত ওই রোগীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার শর্তে ছাড়া হয় তাঁকে। সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘চালককে ধরে থানায় নিয়ে গেলে ওই রোগীদেরই আরও ভুগতে হবে। পরে নম্বর ধরে দেখে নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy