Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Tapsia

প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপ খালে! শীতের বৃষ্টিতে কাবু বস্তি

প্রাণ বাঁচাতে খালের জলে ঝাঁপ দিতে হয়েছিল তপসিয়ার পারভিন বেগমকে। দমকলের দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিভেছে।

অসহায়: আগুনে পুড়েছে ঘর। ছোট সন্তানকে নিয়ে তাই ঠাঁই হয়েছে ত্রিপলের ছাউনির নীচে। শনিবার, তপসিয়ার মজদুরপাড়ায়।

অসহায়: আগুনে পুড়েছে ঘর। ছোট সন্তানকে নিয়ে তাই ঠাঁই হয়েছে ত্রিপলের ছাউনির নীচে। শনিবার, তপসিয়ার মজদুরপাড়ায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১৮
Share: Save:

চার দিকে খাল। মাঝে এক খণ্ড জমি। সেখানেই দাউদাউ করে জ্বলছে ঝুপড়ির ঘর। বেরোনোর পথ নেই। সেই অবস্থাতেই প্রাণ বাঁচাতে খালের জলে ঝাঁপ দিতে হয়েছিল তপসিয়ার পারভিন বেগমকে। দমকলের দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিভেছে। কোনও মতে প্রাণে বাঁচলেও রাতভর তাঁকে কাটাতে হয়েছে খালের জলে ভিজে যাওয়া পোশাকেই। এক সময়ে গায়েই শুকিয়ে গিয়েছে সেই পোশাক। তবে, ভয়ের সেই রাত কাটলেও শনিবার সকাল থেকে আর যেন টিকতে পারছেন না তিনি। প্রবল ঠান্ডার মধ্যে তখন শুরু হয়েছে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। কাঁপতে কাঁপতে তারই মধ্যে দাঁড়িয়ে মহিলা বললেন, ‘‘আর পারছি না। কিছুই তো আর অবশিষ্ট নেই। আগুনে পুড়ে সব শেষ!’’

তবে, একা পারভিন নন, তপসিয়ার অগ্নিদগ্ধ মজদুর বস্তির অনেকেরই এখন এমনই অবস্থা। শুক্রবার দুপুরের আগুনে সেখানে পুড়ে গিয়েছে অন্তত ১২০টি ঝুপড়ি ঘর। রাতারাতি ঘরহারা হয়ে গিয়েছেন অন্তত পাঁচশো মানুষ। কারও শেষ সম্বল জমানো টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। কারও উপার্জনের ভরসা মোটরবাইক পুড়ে গিয়ে সেটির কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। স্থানীয় পুর প্রশাসনের তরফে রাতেই সাহায্য মিলেছে কিছু। কয়েকশো মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে স্থানীয় দু’টি স্কুল ভবনে। দেওয়া হয়েছে রাতের খাবার। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর দিয়েছে ত্রিপল। সে সব টাঙিয়ে রাত কাটানোর ব্যবস্থা হলেও এ দিন সকাল থেকে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতি। ঠান্ডার মধ্যে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে যেন দিশাহারা অবস্থা ওই পোড়া বস্তির বাসিন্দাদের।

এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মজদুর বস্তির কাছে তপসিয়া রোডে খালের উপরে রাস্তা পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। আগুন লাগার প্রায় ৩০ ঘণ্টা পরেও সেখানে মোতায়েন রাখা হয়েছে দমকলের গাড়ি। কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলেও পোড়া গন্ধ যায়নি। বস্তিতে ঢোকার মুখেই চোখে পড়ল, পর পর কালিঝুলি মাখা মুখের লাইন। তাদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির অফিস থেকে। খাবারের লাইনে দাঁড়ানো স্কুলপড়ুয়া রহিমা খাতুন, বিলকিস বানুরা বলল, ‘‘অনেকেই এসে সাহায্য করে গিয়েছেন। দু’বেলা খাবারও পেয়েছি। কিন্তু আগের মতো স্বাভাবিক জীবন কবে ফিরে পাব, জানি না।’’ ভিড় থেকে বেরিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন নাসিম আলি নামে এক যুবক। বললেন, ‘‘মোটরবাইক সারানোর কাজ করি। দোকান তো পুড়েছেই, বেশ কিছু বাইকও পুড়ে গিয়েছে। আমার ভাইপো অনলাইনে খাবার দেওয়ার কাজ করে। মাস দুয়েক হল একটি বাইক কিনে কাজে নেমেছিল। এখন সেটাও কঙ্কাল হয়ে পড়ে রয়েছে।’’

দেখা গেল, বস্তির ছোট্ট জায়গায় মাঝ বরাবর রাস্তা। দু’পাশে পর পর ঝুপড়ি ঘর। কিন্তু এখন ঘরের অস্তিত্ব বলতে শুধুই পোড়া আসবাবের সারি। সেখানেই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দেওয়া ত্রিপল টাঙানোর মাঝে রশিদা খানুম বললেন, ‘‘এখানে সকলেই মজদুরির কাজ করেন। সকলেরই সব চলে গিয়েছে। কবে মাথার ছাউনি ফিরে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে দিনভর আলোচনা চলছে।’’ পাশেই এক মহিলার কোলে একরত্তি। তার নিম্নাঙ্গের পোশাক খোলা। ঠান্ডা লাগছে না? প্রশ্ন করায় মহিলা বললেন, ‘‘সব পুড়ে গিয়েছে। ঠান্ডায় মেয়ের নাক দিয়ে জল পড়ছে। কিন্তু কী করব? অনেকেই কিছু পোশাক দিয়ে যাবেন জানিয়েছেন। কিন্তু তাতে বাচ্চাদের পোশাক থাকবে কিনা, জানি না।’’ ঘটনাস্থল মন্ত্রী জাভেদ খানের বিধানসভা এলাকায়। জাভেদ বললেন, ‘‘সব রকম সাহায্য করা হবে। পাকা ছাউনি বানিয়ে দেওয়া যায় কিনা, সরকারের সঙ্গে তা নিয়ে কথা চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Slum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy