জনস্রোত: মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিট। ট্রেন ধরতে উপচে পড়া ভিড় দমদম স্টেশনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
স্টেশনে স্টেশনে সচেতনতার বার্তা রটল বটে, ‘দূরত্ব-বিধি মানুন, মাস্ক পরুন।’ যদিও জনস্রোতের মাঝে সে বার্তা কী ভাবে মানা সম্ভব, সেই ভাবনার প্রতিফলন চোখে পড়ল না মঙ্গলবার। এমনকি গা-ছাড়া ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল রেল পুলিশকেও। ফলে রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারির প্রথম দিনে লোকাল ট্রেনে যে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল ছবি দেখা গিয়েছিল, দ্বিতীয় দিনেও তা বজায় থাকল। পরিবর্তন বলতে, অন্য দিনের তুলনায় মাস্ক পরার সচেতনতা এ দিন খানিকটা বাড়তে দেখা গিয়েছে। ফলে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে লোকাল চালানোর নির্দেশিকা কী ভাবে বলবৎ করা সম্ভব, সেই প্রশ্ন
আরও জোরালো হয়েছে।
মঙ্গলবার শিয়ালদহ ও হাওড়া শাখার একাধিক স্টেশনে ঘুরে দেখা গেল, প্রতিটি ট্রেনেই বাদুড়ঝোলা ভিড়। দুপুরে ভিড় কিছুটা কম ছিল। কিন্তু সকাল ও বিকেলের ব্যস্ত সময়ে তিলধারণের জায়গা ছিল না কামরায়। এক-একটি ট্রেন দমদম, বালিগঞ্জ, বিধাননগর রোড স্টেশনে থামতেই যাত্রীরা নামার আগে ঠেলে উঠে যাচ্ছেন হাজার হাজার যাত্রী। কামরার ভিতরে দূরত্ব-বিধি কিংবা ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশিকা মানার জন্য প্রশাসনের প্রস্তুতিও ছিল না বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, কয়েকটি স্টেশনে রেলের নিরাপত্তারক্ষীদের দেখা গেলেও তাঁরা ছিলেন আড্ডার মেজাজে। কিছু স্টেশনে মাইকে সচেতনতার ঘোষণা শোনা গিয়েছে। শিয়ালদহ, দমদম,
হাওড়া-সহ কয়েকটি স্টেশনে পুলিশ মাস্কও বিলি করেছে। কিন্তু যাত্রীরা তা না পরলে কড়া হতে দেখা যায়নি পুলিশকে। যদিও রেলের তরফে প্রতি স্টেশনে আরপিএফ মোতায়েন, বিধি না মানলে জরিমানা ধার্য করার কথা বলা হয়েছিল। কার্যক্ষেত্রে যে তা ঘোষণায় সীমাবদ্ধ, তা একটি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোভিড-বিধি না মানায় শিয়ালদহ স্টেশনে ৫১ জন যাত্রীকে জরিমানা করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠছে, প্রান্তিক এবং জংশন স্টেশনে কিছুটা কড়াকড়ি থাকলেও বাকি সব স্টেশন ছিল অরক্ষিত। বরং সেখানে যাত্রীদের সচেতনতার উপরেই যেন ভরসা করা হল। যদিও সেই ভরসার মূল্য দিলেন না অনেক যাত্রীই। তাই মাস্ক ছাড়াই ট্রেনের কামরায় জমিয়ে গল্প করতে দেখা গেল অনেককে। কোথাও চলল মুখোমুখি বসে তাস খেলা। মাস্ক ছাড়া কেন? প্রশ্ন করতেই উত্তর এল, ‘‘এ তো সব আমাদের নিজেদের লোক!’’ দমদম জংশনে নেমে বনগাঁর বাসিন্দা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ট্রেনের কামরায় মাস্ক পরার ঘোষণা ছাড়া তো কিছুই নজরে এল না। এখনও রেল পুলিশ যদি
ধরপাকড় বা জরিমানায় জোর না দেয় তা হলে আর কবে কড়া হবে?’’ বারুইপুরের শুভ্র হালদারের বক্তব্য, ‘‘সব কাজ কি আদেশ বা অনুরোধে হয়?’’ রানাঘাট লোকালে মাস্ক বিক্রি করতে করতে কানু মণ্ডল বললেন, ‘‘মাস্ক কেনা ছেড়ে দিয়েছিলেন লোকজন। এই কয়েক দিন হল আবার শুরু হয়েছে।’’
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘কোনও যাত্রীকে তো ট্রেন থেকে নামিয়ে দিতে পারি না। তবে যাত্রীরা যাতে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলেন, তার জন্য একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা এবং মাস্ক পরার বিধি মনে করাতে প্রতিটি স্টেশনে এবং ট্রেনের কামরাতেও প্রচার করা হচ্ছে। চলছে আচমকা অভিযান।’’ কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ হচ্ছে না, মানছেন যাত্রীদের একটা বড় অংশই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy