ভোগান্তি: একটি ফাঁকা ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার জেরে ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। মাঝরাস্তায় আটকে পড়া অন্য ট্রেনের যাত্রীরা রেললাইন দিয়ে এ ভাবেই হেঁটে পৌঁছন স্টেশনে। বুধবার, শিয়ালদহে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
হঠাৎ যেন সব থমকে গিয়েছে! রেললাইনে পর পর দাঁড়িয়ে শিয়ালদহগামী ট্রেন। কামরার গা ঘেঁষে কোনও মতে বেরিয়ে লাইন ধরে হাঁটছেন শয়ে শয়ে যাত্রী। কেউ হেঁটে আসছেন বিধাননগর রোড স্টেশন থেকে, কেউ আবার দমদম স্টেশন বা তারও আগে থেকে। সেই ভিড় দেখে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে অপেক্ষায় থাকা আরও অনেকের। কেউ লাফিয়ে নামছেন রেলের কামরা থেকে, কেউ আবার মাস পাঁচেকের শিশু কোলে নিয়েই নামার জন্য ঝুলে পড়ছেন দরজার হাতল ধরে!
বিপদ ঘটে যেতে পারে তো? দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ব্যারাকপুর লোকালের যাত্রী বিমল ঘোষ সন্তানকে দেখিয়ে বললেন, ‘‘ছেলেটার জ্বর এসেছে। গা পুড়ে যাচ্ছে। দুপুর ১টার মধ্যে শিশুমঙ্গল হাসপাতালে পৌঁছতে হবে। নয়তো ডাক্তার বেরিয়ে যাবেন। এক ঘণ্টার কাছাকাছি হয়ে গেল, ট্রেনের চাকা নড়ছে না। আজ ডাক্তার না দেখাতে পারলে আরও বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।’’
বুধবার বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ শিয়ালদহের চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি ফাঁকা ট্রেন কারশেডের দিকে যাওয়ার সময়ে ঘটে বিপত্তি। ছ’নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রায় সেই সময়েই ছাড়ে শিয়ালদহ-রানাঘাট লোকাল। শিয়ালদহে প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়া বহু ট্রেনই সিগন্যাল মেনে লাইন বদল করে। তেমনটা করতে গিয়েই ছ’নম্বর থেকে ছাড়া ট্রেন চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়া ফাঁকা ট্রেনটির কাছাকাছি চলে আসে। দু’টি ট্রেনেরই সামনের দিকের একটি অংশ ঘষে যায়। তাতেই ফাঁকা ট্রেনের চাকা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। তবে বড় বিপদ ঘটেনি। শিয়ালদহ-রানাঘাট লোকালটি কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সেই সময়ে কেউ ভয়ে, কেউ উত্তেজনায় লাফিয়ে লোকাল ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। অনেকেই লাইন ধরে শিয়ালদহ স্টেশনের দিকে হাঁটতে শুরু করেন।
পরিস্থিতি বুঝে প্রধান শাখার ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিয়ালদহ থেকে ছাড়ার এবং শিয়ালদহমুখী সমস্ত ট্রেন থামিয়ে দেওয়া হয়। পর পর ট্রেন দাঁড়িয়ে যায় বিধাননগর এবং দমদম স্টেশনের আগে ও পরে। অপেক্ষা করে থাকতে থাকতে এক সময়ে লাইন ধরে হাঁটতে শুরু করেন যাত্রীরা। লাইন ধরে হেঁটে আসা সত্যেন কর্মকার নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘যে ট্রেনের ১২টা বেজে ৫ মিনিটে শিয়ালদহে ঢোকার কথা, সেটা দুপুর ১টাতেও দাঁড়িয়ে আছে দেখে নেমে পড়েছি। এগিয়ে এসে দেখলাম অন্য ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে।’’ সন্ধ্যা রায় নামে আর এক জন বললেন, ‘‘দমদমে ঢোকার মুখে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে যায়। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও ছাড়ছে না দেখে হাঁটা শুরু করেছি। আসার সময়ে দেখলাম লোকে আরও আগের স্টেশন থেকে হাঁটছেন।’’ তনিমা সাঁতরা নামে এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘বেশ কয়েকটা সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে পেরোতে হয়েছে। এ ভাবে লাইন ধরে আসার অভ্যাস নেই। তাই ভয় লাগছিল। কিন্তু আজই চাকরির প্রথম দিন, যেতে না পারলে খুব সমস্যা হয়ে যাবে।’’ দুপুর প্রায় ৩টে পর্যন্ত এই ভাবেই লাইন ধরে হেঁটেছেন অনেকে। বাঁশি আর হাত-মাইক নিয়ে তাঁদের সতর্ক করে লাইন পারাপার করাতে দেখা গিয়েছে রেলের কর্মীদের।
স্টেশনগুলির অবস্থা ছিল আরও খারাপ। কোন ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে কখন ছাড়বে, তা বুঝতে যাত্রীরা বেশি হয়রান হয়েছেন। অনেককেই দেখা গিয়েছে উদ্ভ্রান্তের মতো রেলের সময় ঘোষণার বোর্ডের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কিশোর রায় নামে শিয়ালদহ স্টেশনের এক দোকানদার বললেন, ‘‘রেলের তরফে তো কিছুই ঘোষণা করা হয়নি। কৃষ্ণনগর লোকাল দু’নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে দেখে লোকে সেখানে ভিড় করেছিলেন। গাড়িতে অনেকে উঠেও পড়েছিলেন। কিছু ক্ষণ পরে হঠাৎ ডিসপ্লে বোর্ডে দেখানো শুরু হয়, ১০ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ওই ট্রেন ছাড়বে। পড়িমরি করে অনেকে ট্রেন ধরতে ছোটেন। তাতেই চরম ধাক্কাধাক্কি হয় স্টেশনে। কত জন যে পড়ে গিয়েছেন, তা বলার নয়! লাইনচ্যুত হয়ে যত না বিপদ হল, তার চেয়ে বড় বিপদ হতে পারত স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে।’’
রেলের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়তে পারে ভেবেই লাইনচ্যুত হওয়ার ঘোষণা করা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy