বিপজ্জনক: শহর জুড়ে এখনও পড়ে তোরণ এবং হোর্ডিং। বুলবুলের দাপটে ভেঙে পড়া তারই কয়েকটি। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য ও সুমন বল্লভ
মানিকতলা মেন রোডে দাঁড়িয়ে রবিবার দুপুরে উত্তেজিত বাক্য-বিনিময় চলছিল স্থানীয় পুজোর দুই উদ্যোক্তার। শনিবারের মতো দিগভ্রান্ত হাওয়ার বেগ তখন থেমে গিয়েছে। এক জন আর এক জনকে বলছেন, ‘‘প্রথমেই সব খুলে ফেলতে বলেছিলাম। ভাবতে পারছ, কারও মাথায় পড়লে কী হত!’’ যাঁকে কথাটা বলা হল, তিনি এ বার বললেন, ‘‘এখন কী করব সেটা বলো!’’
যেখানে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছে, তার পাশেই ফুটপাত লাগোয়া রাস্তার উপরে উল্টে পড়ে রয়েছে বিশাল বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং। হোর্ডিংয়ের কাঠামোর বাঁশের সঙ্গে জড়িয়ে একাধিক বিদ্যুতের তার। ফুটপাতের রেলিংয়ের গায়ে পেঁচিয়ে তারগুলি পাশের একটি বটগাছে উঠে গিয়েছে। স্থানীয় পানের দোকানদার নিমাই দত্তের দাবি, ‘‘রাতে ঝড়ের সময়ই ভেঙে পড়েছে। এত বেলা হয়ে গেল তবু কেউ এটা তুলে নিয়ে যেতে আসেননি। বিদ্যুতের তার সব ছড়ানো রয়েছে। ভয়ে দোকান খুলতে পারছি না।’’
ঝড়-বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে বা বিপজ্জনক বাড়ি ধসে পড়ে শহরে বিপদ ঘটেছে বহু বার। শনিবারও গাছ পড়ে কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে এক জনের। তবে সেই ভয়ের সঙ্গেই এ বার যুক্ত হয়েছিল দুর্গাপুজোর এক মাস পরেও শহরজুড়ে না
খুলে ফেলা বিজ্ঞাপনী ব্যানার-হোর্ডিং ও তার কাঠামো। কোথাও প্রবল হাওয়ায় সেই হোর্ডিং উড়ে গিয়ে পড়েছে মাঝ রাস্তায়, কোথাও অন্য বাড়ির চালে। শরৎ বোস রোডে একটি পুজোর ব্যানার হাওয়ায় উড়ে গিয়ে পড়ে একটি বাড়ির দরজার সামনে। সকালে পুলিশকে গিয়ে লোক ডাকিয়ে ব্যানার সরাতে হয় বলে খবর। উল্টোডাঙা মেন রোডে আবার বিপজ্জনক ভাবে এখনও ঝুলছে হোর্ডিং লাগানোর কাঠামো। ঝড়ের জেরে সেগুলির দড়ি হালকা হয়ে এসেছে। মানিকতলা মেন রোডে স্রেফ ঝড়ে ভেঙে পড়া ওই ব্যানারই নয়, রাস্তার দু’পার জুড়ে এখনও রয়ে গিয়েছে মোড়ে মোড়ে লাগানো বিজ্ঞাপনী গেট।
একই অবস্থা মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটে। সেখানে দুর্গাপুজোর পরে কালীপুজোর জন্য গেট বানানো হলেও বহু জায়গায় তা এখনও খোলা হয়নি। ফুটপাতের উপরেই রয়ে গিয়েছে ভিড়ের উপরে নজরদারি চালানোর জন্য বানানো পুলিশের উঁচু কিয়স্ক। শনিবার রাতের ঝড়ের প্রভাবে সেগুলির লন্ডভন্ড অবস্থা স্পষ্ট। কয়েকটির বাঁশের সিঁড়ি ভেঙে পাশের ফুটপাতের উপরে পড়ে গিয়েছে।
আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক অবশ্য বললেন, ‘‘দ্রুত খোলা হবে হোর্ডিংগুলি। খোলার লোক পেতে সমস্যা হওয়ায় কয়েক দিন দেরি হচ্ছে।’’ আমহার্স্ট স্ট্রিটের ফাটাকেষ্টর পুজোর উদ্যোক্তা ধনঞ্জয় ধর যদিও বলেন, ‘‘আমরা বৃষ্টির ভয়ে আগেই সব খুলে ফেলেছি। এই ধরনের কাঠামো রেখে দেওয়ার ঝুঁকিই নেওয়া যায় না। ঝড়-বৃষ্টিতে কোনটা কোথায় গিয়ে পড়বে কে জানে!’’
চেন্নাইয়ে এমনই ব্যানার খুলে পড়ে এক তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থার কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তার পরে ব্যানার-হোর্ডিং নিয়ে চেন্নাই কড়া অবস্থান নিতে পারলেও কলকাতা তা পারেনি বলেই অভিযোগ। এমনকি, ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতা সত্ত্বেও পুর-প্রশাসন এ বিষয়ে কেন সতর্ক হয়নি?
কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি উত্তর দেননি। তবে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবব্রত মজুমদার বললেন, ‘‘আজই সব খুলছি আমরা। ঝড়ের আগে খুলতে পারলে ভাল হত। কিন্তু কী করব? কালীপুজোর পরে ছটপুজোর জন্যও নতুন করে অনেকে ব্যানার লাগিয়েছেন।’’ কোনও নিয়ন্ত্রণ যে নেই তা এই পুরকর্তার কথাতেই স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy