Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Traffic Police

পুলিশের সঙ্গে টালা চত্বরে যান নিয়ন্ত্রণে উৎসাহীরাও

টালা সেতু বন্ধ হওয়ার পরে সংলগ্ন রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। আর সেই যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি দেখা মিলছে এমনই কিছু অত্যুৎসাহীর।

উদ্যোগী: আর জি কর হাসপাতালের সামনে হাতে লাঠি নিয়ে যান-শাসনে ব্যস্ত এক অত্যুৎসাহী। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

উদ্যোগী: আর জি কর হাসপাতালের সামনে হাতে লাঠি নিয়ে যান-শাসনে ব্যস্ত এক অত্যুৎসাহী। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫১
Share: Save:

শার্টের বুকপকেট ছিঁড়ে ঝুলছে। একটি হাত ট্রাউজার্সের এক পকেটে। অন্য হাত তাক করা শ্যামবাজার মোড়ের দিকে। আর জি কর হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ওই ব্যক্তি গাড়িচালকদের উদ্দেশে সমানে চেঁচিয়ে চলেছেন, ‘‘সোজা চলুন, সোজা চলুন! একদম দাঁড়াবেন না, এটা হাসপাতাল।’’ কিছু ক্ষণ এ ভাবে যান সামলে কাছেই কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে তিনি বললেন, ‘‘ঠিক আছে তো স্যর? একটু দেখবেন।’’ তাঁর কথায় অবশ্য পাত্তা দিলেন না ওই পুলিশকর্মী।

টালা সেতু বন্ধ হওয়ার পরে সংলগ্ন রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। আর সেই যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি দেখা মিলছে এমনই কিছু অত্যুৎসাহীর। কখনও পুলিশকর্মীদের সঙ্গে থাকা লাঠি হাতে নিয়ে, কখনও ছেঁড়া পোশাক, ফাটা জুতো পায়েই তাঁরা গাড়ির চালকদের সামলে চলার নির্দেশ দিয়ে চলেছেন। স্থানীয় লোকজন তো বটেই, যার প্রশংসা করছেন পুলিশকর্মীরাও।

সম্প্রতি ক্যানাল ওয়েস্ট এবং আর জি কর রোডের সংযোগস্থলে যান শাসনে নেমে হিমশিম খাচ্ছিলেন উল্টোডাঙা এবং শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ডের তিন পুলিশকর্মী। হঠাৎ তাঁদের মধ্যে চলে এলেন পক্ককেশ এক ব্যক্তি। এক পুলিশকর্মীকে বললেন, ‘‘লাঠি বা কিছু একটা দিন না। ঠিক সামলে দেব।’’ লাঠি অবশ্য মিলল না। এর পরে দ্রুত পায়ে রাস্তার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে তিনি ছুটতে শুরু করলেন খালি হাতেই। সঙ্গে গাড়িচালকদের ধমক!

জানা গেল, খগেন দাস নামে ওই ব্যক্তি থাকেন খালের ধারে ডালকল এলাকায়। মাঝেমধ্যে সেখানকার গুদামে বস্তা বয়ে দেওয়ার কাজ করেন। তবে সেই কাজে তিনি প্রবল অনিয়মিত। পরিবারের কে কোথায় থাকেন, কিছুই বলতে পারলেন না। পুলিশের কাজ করতে গিয়েছিলেন কেন? প্রশ্ন শুনে একগাল হেসে খগেন বললেন, ‘‘পুলিশের কাজ কোথায়? গাড়িগুলোকে ঠিক মতো চালানো আমাদের কাজ নয়?’’

দিন দুয়েক পরেই আবার ওই এলাকারই মন্মথনাথ গাঙ্গুলি রোড হয়ে আর জি কর রোডে বেরোনোর মুখে গাড়ির জটে আটকে গিয়েছিল একটি অ্যাম্বুল্যান্স। সেই দৃশ্য দেখে দ্রুত পুলিশকর্মীদের কাছে ছুটে গেলেন এক মাঝবয়সি ব্যক্তি। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই অ্যাম্বুল্যান্সকে হাসপাতালের গেট পার করিয়ে দিলেন। এতেই অবশ্য থামলেন না। এর পরে হাসপাতালের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে শুরু হল তাঁর যান নিয়ন্ত্রণ। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আর জি কর রোড, বেলগাছিয়া সেতু হয়ে আসা গাড়ি সামলে অ্যাম্বুল্যান্সকে হাসপাতালে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিতে শুরু করলেন তিনি। বেগতিক দেখলেই চেঁচাতে শুরু করলেন তারস্বরে। শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘লোকটির মাথার গোলমাল আছে। আমাদের সঙ্গেই গাড়ি সামলাতে মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে পড়ে। এত চাপের মধ্যে ওঁকে আর বারণ করিনি।’’

আপনার নাম কী? প্রশ্ন শুনে ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘তাতে তোমার কী?’’

আপনি ট্র্যাফিক নাকি? মিনিট কয়েক চুপ থেকে বিরক্ত ভাবে হাঁটা শুরু করার আগে তিনি বললেন, ‘‘ধুর! কাজের কাজ নেই, যত বাজে বকে।’’

দ্রুত গতিতে হাঁটতে হাঁটতে শ্যামপুকুর থানা পার করে স্থানীয় ফুলবাগান বস্তির কাছে সামান্য দাঁড়ালেন ওই ব্যক্তি। কাছেই গাছের নীচে বসা দুই যুবক চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘‘আজ ক’টা গাড়ি গুনলে কাকা?’’

ফের হাঁটা শুরু করে ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘বসে থাকিস কেন? কাল থেকে শ্যামবাজারে আয়, শ্যামবাজারে!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE