অবাধ: আদালতের সবুজ বাজি সংক্রান্ত নির্দেশ উড়িয়ে শহরজুড়ে বিক্রি হচ্ছে এমনই বাজি। শনিবার, লেক মার্কেট এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
দোকান ফুটপাত ছাড়িয়ে প্রায় রাস্তা পর্যন্ত নেমে এসেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট বাজি নাড়াচাড়া করলেই ভেসে আসছে দোকানদারের প্রশ্ন। নিচু গলায় বলছেন, ‘‘ধামাকাদার কিছু লাগবে নাকি?’’ ধামাকাদার মানে? অত্যুৎসাহী হয়ে দোকানদার বললেন, ‘‘চকলেট বোমা, দোদোমা, কালীপটকা— সব আছে। শুধু দাম নিয়ে দরাদরি করা চলবে না।’’
কিন্তু এগুলো তো নিষিদ্ধ? পুলিশ ধরছে না? পাল্টা প্রশ্ন শুনেই বিরক্ত দোকানদার তাঁর সঙ্গীকে বললেন, ‘‘মনেই হচ্ছিল এরা সচেতন নাগরিক। ছেড়ে দে ভাই।’’ এর পরে মুখ ঘুরিয়ে বললেন, ‘‘যা শুনলেন, চুপচাপ ভুলে যান। পুলিশের সঙ্গে আমাদের আলাদা কথা বলা আছে।’’
কালীপুজোর আগে শনিবার শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে দেখা গেল, এ ভাবেই দেদার নিষিদ্ধ বাজির বিক্রিবাটা চলছে নানা জায়গায়। গলির রাস্তা তো বটেই, বাদ নেই গড়িয়াহাট, লেক মার্কেট, হাতিবাগান, শ্যামবাজারের মতো বড় রাস্তার মোড়ও। উল্টোডাঙায় আবার ফলের দোকানের আড়ালেই দেখা গেল বিক্রি হচ্ছে বাজি। রকেট বোমা, উড়ন তুবড়ি বা সাপবাজির মতো নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা বাজিও সেখানে রেখে দেওয়া হয়েছে ফলের ঝুড়ির মধ্যে। কেউ এসে শব্দবাজি চাইলে এবং তাঁকে দোকানদারের ভরসাযোগ্য মনে হলে, তবেই দেখানো হচ্ছে বার করে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও কর্মীর তো বটেই, দেখা নেই পুলিশি নজরদারিরও। কিছুটা দূরেই একটি পুলিশ কিয়স্কে গিয়ে বিষয়টি জানাতে সেখানকার এক পুলিশকর্মী মন্তব্য করলেন, ‘‘থানা থেকে রোজ হানা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের গাড়ি বেরিয়ে গেলেই আবার যে কে সে-ই! এই ভাবে বাজি আটকানো যাবে বলে মনে হয় না।’’
গত কয়েক দিন ধরে এই আশঙ্কাতেই ভুগছিলেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের দাবি, গত দু’বছর করোনার কারণে সব রকমের বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ থাকায় কিছুটা হলেও শব্দকে জব্দ করা গিয়েছিল। আদালত চলতি বছরে কালীপুজোর সন্ধ্যা ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শুধুমাত্র সবুজ বাজি ফাটানোয় ছাড় দেওয়ায় নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সবুজ বাজির আড়ালে ফাটবে না তো নিষিদ্ধ বাজি? এই আশঙ্কা আরও কয়েক গুণ বেড়েছে পুলিশের তত্ত্বাবধানে হওয়া বৈধ বাজি বাজার থেকেই অবৈধ বাজি উদ্ধার হওয়ার ঘটনা সামনে আসায়। যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, পুলিশের নজরদারিতে থাকা বাজারেই যদি এই পরিস্থিতি হয়, তা হলে বাকি শহরে কী হচ্ছে?
দেখা গেল, উত্তরে এমন বাজি বিক্রি সব চেয়ে বেশি হচ্ছে মানিকতলা বাজার, গিরিশ পার্ক এবং বেলেঘাটার একাধিক জায়গায়। কাশীপুরে আবার পর পর দোকান পাতা হয়েছে সব রকমের আইনি নির্দেশ উড়িয়ে। না আছে বাজি বিক্রির লাইসেন্স, না রাখা হয়েছে কিউআর কোড ছাপা সবুজ বাজি। সেখানেই এক দোকানদারকে প্রশ্ন করায় বললেন, ‘‘গত দু’বছর মানুষ ব্যবসা করতে পারেনি, তাই মানবিকতার চোখে দেখে এ বার সব কিছুতেই ছাড় দেওয়া হয়েছে শুনেছি। লাইসেন্স নিতে হবে, এমন কোনও ব্যাপার জানি না।’’ বেলেঘাটার কাদাপাড়া এলাকায় এক দোকানদার আবার বললেন, ‘‘সবুজ বাজি তো নেই! তবে ওই সব কিউআর কোড ছাপানো বক্স গত বার করেছিলাম। সে ভাবে কিছু লাভ হয়নি। বক্স দেখে কেউ বাজি কেনে না। জোর আওয়াজ চাই।’’ দক্ষিণ কলকাতায় এমনই বাজির রমরমা দেখা গেল কসবা সিআইটি মার্কেট, লেক মেল সংলগ্ন বাজারে। কালীঘাট চত্বরেও দেখা গেল বিক্রি হচ্ছে বাজি। বেহালা থানার কাছে ডায়মন্ড হারবার রোডের এক দোকানদারের মন্তব্য, ‘‘পুলিশ আসছে ঠিকই, কিন্তু ধরপাকড় করে লাভ নেই। এ বার মানুষের ব্যাপক উৎসাহ। কালীপুজোর রাত এলেই বোঝা যাবে কত লোকে আগাম কত বাজি তুলে রেখেছে!’’
তা হলে উপায়? কলকাতা পুলিশের কর্তাদের কেউই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের এক কর্তা শুধু জানিয়েছেন, প্রতিদিনই নানা জায়গায় হানা দেওয়া হচ্ছে। তাতেই নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার হচ্ছে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বললেন, ‘‘প্রতি সন্ধ্যায় পুলিশ কত বাজি উদ্ধার করছে, সেই হিসাব পাঠাচ্ছে। যে ভাবে পুলিশ বলছে, সেই ভাবে আমাদের লোকও হানা দিচ্ছে। তবে আমাদের তো লোকসংখ্যা সীমিত।’’ কিন্তু এই ভাবে কি কালীপুজোর রাতের শব্দযন্ত্রণা কমানো যাবে? কল্যাণবাবুর দাবি, ‘‘গোটা রাজ্যে কড়া নজরদারি চলবে। আইন লঙ্ঘন করলেই এ বার কড়া শাস্তি অপেক্ষা করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy