মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব, ডিপ্লোমা কোর্সে চিকিৎসায় শিক্ষাদানের। যা ঘিরে শুরু হয়েছে সমালোচনা। প্রতীকী ছবি।
ইউটিউবে এখন রান্না থেকে সেলাই, সবই শেখা যাচ্ছে। তা হলে ডাক্তারিটাই বা বাদ থাকবে কেন? চিকিৎসা পদ্ধতি ভাল ভাবে ওই মাধ্যমে দিয়ে দিলে, ইউটিউব দেখেই তো আরও অনেক কম সময়ে ডাক্তার হওয়া যায়। তাতে রোগীকে ছুঁয়ে দেখে শেখারও কোনও ব্যাপার থাকে না। তা হলে কোনও দিন কি শুনব, ইউটিউব দেখেও ডাক্তার তৈরি হবে?
ডাক্তারিতে একের পর এক পর্ব পেরিয়ে আমরা আজকের কাঠামোয় এসেছি। আগে এলএমএফ (লাইসেন্সিয়েট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি) কোর্স ছিল। তার পরে হল এমবি ডাক্তার। তারও পরে সেটা এমবিবিএস হয়েছে। এই যে পর পর পরিবর্তনগুলি এসেছে, সে সবেরই নেপথ্যে নির্দিষ্ট যুক্তি ও ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে আগেও বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে নানা রকমের প্রচেষ্টা হয়েছে। সিপিএম আমলে ‘খালি পায়ের ডাক্তার’ বলে একটা ব্যবস্থা চালু হয়। ওই কোর্সে সামান্য কিছু শিখিয়ে গ্রামে চিকিৎসা করাতে পাঠানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। যদিও কোর্স পাশ করা লোকজনকে চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করার নৈতিকতা নিয়ে খুব হইচই হয়। তখন তাঁদের ‘কনডেন্সড মেডিক্যাল কোর্স’ করানো হয়েছিল।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ওই কোর্স পড়ানো হয়েছিল। কোর্স শেষে ডাক্তারির শংসাপত্র দেওয়া হয়। প্রথমে যাঁরা পাশ করে বেরিয়েছিলেন, তাঁদের অবশ্য ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার পরে তাঁদের এলাকা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ওই ডাক্তারেরা ডেথ সার্টিফিকেট দিতে পারতেন। তাই ডাক্তারিতে এই সব বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বা পর্ব নতুন নয়। ‘ট্রায়াল’ (পরীক্ষা) এবং ‘এরর’ (ভুল) করে আমরা সেই সমস্ত পর্ব পেরিয়ে এসেছি। সারা ভারতে আধুনিক চিকিৎসায় এখন একটাই কাঠামো, তা হল এমবিবিএস ডাক্তার। যা এখন বিদেশেও স্বীকৃতি পাচ্ছে সেখানকার নির্দিষ্ট একটি পরীক্ষা দেওয়ার পরে।
আর, আমাদের দেশের ডাক্তারিতে নীতি নির্ধারণের বিষয়টি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন। আগে ছিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া। সেটা ভেঙে বোর্ড অব গভর্নর্সের হাতে দু’বছর ক্ষমতা ছিল। তার পরে এনএমসি তৈরি হল। সেখানে পরীক্ষার বিষয়টি দেখা, নতুন কলেজ তৈরির মান্যতা দেওয়ার মতো বিভিন্ন বিষয়ের শাখা তৈরি হল। এটাই হল এখন ভারতের আধুনিক চিকিৎসার কাঠামো। তাই এখানে হঠাৎ করে আমাদের এক-দু’জনের ভাবনাচিন্তার সুযোগ নেই।
মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই এই ডিপ্লোমা ডাক্তারের বিষয়টি ভেবে দেখতে বলেছেন। যত দূর শুনলাম, পর্যালোচনা বৈঠকে তিনি বলেছেন, এমন করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে তো সবটা বিস্তারিত ভাবে জানা সম্ভব নয়। আশা করব, রিভিউ মিটিংয়ে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা শুধু মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেদের বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে বিচার করবেন ও ভাববেন।
অনেক সময়েই বলা হয়, এনএমসি অনুমতি না দিলেও আমরা রাজ্যের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দেব। তাতে ওই ডিপ্লোমাধারীরা রাজ্যে ডাক্তারি করবেন। রাজ্য চাইলে জোর করে এটা চালু করতেই পারে। তবে, তাঁরা অন্য রাজ্যে মান্যতা পাবেন না। সেই সঙ্গে সার্বিক ক্ষতিও হবে। কারণ, রাজ্যে অনেক মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হয়েছে। ফলে চার-পাঁচ বছরে রাজ্যে ডাক্তারের ঘাটতিও মিটবে। বরং তখন এমবিবিএস পাশ করেও চাকরি মিলবে না। এনএমসি এখন নিয়ম করেছে, সাড়ে চার বছরের এমবিবিএস পাঠ্যক্রমের শেষে গ্রামে তিন মাসের কোর্স করতে হবে। ফলে সাড়ে চার বছরের এমবিবিএস পাশ করাদের সঙ্গে সংঘাত বাধবে তিন বছরের ডিপ্লোমাধারীদের।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সর্বদাই মিশ্র-প্যাথির বিরোধিতা করে চলেছে। সেখানে মডার্ন মেডিসিনে ডিপ্লোমায় সংঘাত তৈরি হবে। আর একটি প্রশ্নও ভাবতে হবে। সত্যিই কি সংখ্যাগত দিক থেকে আমাদের ডাক্তারের অভাব? কারণ, ডাক্তারের চাকরির বিজ্ঞাপনে যত শূন্যপদ থাকে, তার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি আবেদনপত্র জমা পড়ে। এর পরেও চাকরিতে যোগ না দেওয়াটা অন্য বিষয়। আসলে গ্রামে কেউ চাকরিতে যোগ দিতে চাইছেন না। কেনই বা এক জন ডাক্তার গ্রামের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অধীনে থাকবেন, সেটাও তো ভাবতে হবে!
(প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy