Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Ambulance

নথি পরীক্ষার ফাঁক গলেই শহরে ছুটছে অ্যাম্বুল্যান্স

পুলিশকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাধারণত কোনও অ্যাম্বুল্যান্সই আটকানো হয় না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:০৩
Share: Save:

শহরের রাস্তায় ছুটে চলা সব অ্যাম্বুল্যান্সের কি বৈধ কাগজপত্র রয়েছে?

ট্যাংরার গোবিন্দ খটিক রোডে এক প্রৌঢ়কে অ্যাম্বুল্যান্সের পিষে দেওয়ার ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসছে এই প্রশ্ন। কারণ, রাস্তায় গাড়ি চালাতে হলে যে সব কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন, তার কি‌ছুই ছিল না ওই অ্যাম্বুল্যান্সটির। সেগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল ২০১৭ সালে। এমনকি, মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল চালকের লাইসেন্সেরও। ফলে প্রয়োজনীয় নথির একটিও না থাকা সত্ত্বেও শহরের রাস্তায় গত এক মাস ১৫ দিন ধরে রোগী নিয়ে বিনা নজরদারিতে ছুটছিল জরুরি পরিষেবার ওই যান। এর আগে তিন বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় গাড়িটির অবস্থাও ভাল ছিল না।

পুলিশের একাংশ বলছে, ওই সময়কালের মধ্যে যদি অ্যাম্বুল্যান্সটি পুলিশি তল্লাশিতে আটকাত, তা হলে মোটর ভেহিকলস্‌ আইন অনুযায়ী অন্তত ১০-১১ হাজার টাকা জরিমানা হত। শুধু তা-ই নয়, মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের মতো জরুরি পরিষেবার গাড়ি চালানোর অপরাধে চালক শেখ আব্দুর রহমানকে পুলিশ গ্রেফতারও করতে পারত। কিন্তু এ সবের কিছুই হয়নি। সব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছিল বেহাল ওই অ্যাম্বুল্যান্স।

পুলিশকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাধারণত কোনও অ্যাম্বুল্যান্সই আটকানো হয় না। ট্যাংরার ঘটনাটি না ঘটলে হয়ত কাগজপত্র ছাড়াই দিব্যি চলত ওই অ্যাম্বুল্যান্স। রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, মোটর ভেহিকলস্‌ অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারায়, ‘ফিটনেস’ শংসাপত্র না থাকা, বিমা না থাকা, ধোঁয়া পরীক্ষার ছাড়পত্র না থাকা, মেয়াদ ফুরনো চালকের লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালানোর মতো অপরাধে কম করে হলেও ১০ হাজার টাকা জরিমানা হওয়ার কথা। রাজ্যের পরিযান শাখাও যদি গাড়ি পরীক্ষা করার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সটি ধরত, তা হলে কর না দেওয়ার জন্য ১৫০০ টাকা জরিমানা হতে পারত। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘হৃৎপিণ্ড বিকল হলে যেমন অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অকেজো হয়ে পড়ে, তেমনি গাড়ির ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ না থাকার অর্থই হল তার অন্য কোনও কাগজপত্রও ঠিক নেই।’’

শুধু ট্যাংরার ঘটনায় আটক হওয়া অ্যাম্বুল্যান্সই নয়। পুলিশেরই একাংশ জানাচ্ছেন, শহর তথা রাজ্য জুড়ে যে সব অ্যাম্বুল্যান্স চলছে, তার অধিকাংশেরই কাগজপত্র ঠিকঠাক নেই। কিন্তু কাগজ ঠিক না থাকলেও সেগুলি চলছে কী ভাবে? পুলিশের একাংশের দাবি, খুব বড় ধরনের কিছু না ঘটলে অথবা নির্দিষ্ট কোনও অপরাধের তথ্য পুলিশের কাছে না থাকলে রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড় করিয়ে কাগজ দেখেন না কোনও অফিসারই। কারণ প্রথমত, রোগী থাকলে সেই অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড় করানোর প্রশ্নই ওঠে না। দ্বিতীয়ত, অনেক সময়ে খালি অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড় করিয়ে কাগজ দেখতে চাইলে চালকেরা রোগী আনার তাড়াহুড়োর অজুহাত দেন।

এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘খালি অ্যাম্বুল্যান্স হুটার বাজিয়ে যাচ্ছে দেখলে অনেক সময়ে দাঁড় করিয়ে ধমক দিয়ে ছেড়ে দিই। কাগজপত্র দেখা হয় না। কারণ সত্যি রোগী আনতে যাচ্ছেন, না চালক মিথ্যা বলছেন, তা বোঝার কোনও উপায় নেই। যদি কাগজ পরীক্ষার কারণে সময় নষ্ট হয়ে রোগীর কোনও ক্ষতি হয়, তা হলে ঘটনার পুরো দায় বর্তাবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের উপরে। আর তাতে জনমানসে খারাপ প্রভাবও পড়বে।’’ কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাস্তায় চলা অ্যাম্বুল্যান্স পরীক্ষা করা হয় না ঠিকই। কিন্তু হাসপাতালের সামনে পার্কিং করে রাখা অ্যাম্বুল্যান্সের কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়।’’

সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, সেই পরীক্ষা কি নিয়মিত হয়? যদি হয়ে থাকে, তা হলে এক মাস ১৫ দিনে কেন এক বারও ধরা পড়ল না ট্যাংরার ওই অ্যাম্বুল্যান্স? উত্তর মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance Kolkata Traffic Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy