Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
JU Student Death

বাচ্চা ছেলে? কাজটা তো পরিণতদের মতোই? প্রশ্ন তুলে যাদবপুরের ২ ছাত্রকে ফের হেফাজতে নিল পুলিশ

যাদবপুরকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা রুজু করল পুলিশ। সেই মামলাতেই দু’জনকে নিজেদের হেফাজতে নিল। দাবি করল, সেই রাতে ‘পরিণত’দের মতোই কাজ করেছেন ওই পড়ুয়ারা।

image of manotosh ghosh, deepshekhar dutta

যাদবপুরকাণ্ডে অভিযুক্ত দীপশেখর দত্ত এবং মনোতোষ ঘোষ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৩ ২৩:৫৬
Share: Save:

পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়েছিল শনিবার। বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছিলেন বিচারক। কিন্তু আচমকাই ঘুরে গেল মোড়। যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত দুই ছাত্র মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তের বিরুদ্ধে আবার নতুন ধারায় মামলা করল পুলিশ। এ বার তাঁদের বিরুদ্ধে উঠল সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ। সরকারি আইনজীবী জানালেন, যতই বাচ্চা বলা হোক, ‘পরিণত’দের মতোই কাজ করেছেন দুই অভিযুক্ত। পুলিশের দাবি মেনে নতুন এই মামলায় আগামী বুধবার পর্যন্ত তাঁদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশই দিল আলিপুর আদালত।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর একটি খুনের মামলা রুজু হয়েছে। সেই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন মনোতোষ এবং দীপশেখর। তাঁদের বিরুদ্ধে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগও ছিল। এই পরিস্থিতিতে শনিবার দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে ৩৫৩ ধারায় (সরকারি কর্মীর কাজে বাধা) মামলা করল পুলিশ। দাবি করা হল, গত ৯ অগস্ট রাতে এক পড়ুয়া তিন তলা থেকে পড়ে যাওয়ার পর হস্টেলের গেট বন্ধ করে দেওয়ার নেপথ্যে একটা বড় দল রয়েছে। তারাই রক্ষীকে গেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ কথা পুলিশকে জানিয়েছেন ওই রক্ষীই। অভিযুক্ত সেই দলটিকে ধরতে চায় পুলিশ। তাদের ‘ক্র্যাক’ করতে চায়। সরকারি আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বাচ্চা বলা হচ্ছে, কাজটা তো পরিণতদের মতো!’’ এর পর সরকারি আইনজীবীর দাবি মেনে নতুন এই মামলায় পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয় মনোতোষ এবং দীপশেখরকে। পাশাপাশি, খুনের মূল মামলায় তাঁদের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।

অন্য দিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে তৃতীয় বার চিঠি পাঠিয়েছে শিশু সুরক্ষা কমিশন। সূত্রের খবর, আগের পাঠানো নোটিসের প্রেক্ষিতে যে জবাব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট নয় কমিশন। ওই জবাবে যথেষ্ট তথ্য নেই বলেই তাদের দাবি। সে কারণেই তৃতীয় চিঠি। তবে যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চিঠি পাঠানোর এক্তিয়ার রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এই অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি জানিয়েছেন, কমিশনের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। জানতে চেয়েছিলেন, কোনও পড়ুয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে কর্তৃপক্ষের কী করণীয়? কারণ মৃত ছাত্র ছিলেন অপ্রাপ্তবয়স্ক।

কমিশনের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের টানাপড়েনের মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ জন্য ১০টি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বসানোর জন্য ২৬টি ক্যামেরার বরাত দেওয়া হয়েছে একটি সংস্থাকে। ছাত্রের মৃত্যুর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। উপাচার্য পদে বসেই তা বসানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব সাউ। এ বার তা কার্যকর হতে চলেছে।

নতুন মামলা

যাদবপুরকাণ্ডে খুনের মূল মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে তাঁদের দু’জনের নাম ছিল। এ বার তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়ার মামলাও নতুন করে করা হল। যাদবপুরের দুই পড়ুয়া মনোতোষ এবং দীপশেখরের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৩ ধারাতেও মামলা রুজু করেছে পুলিশ। নতুন মামলার প্রেক্ষিতে ওই দু’জনকে নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার আবেদনও জানায় তারা। শনিবার সেই আবেদন মেনে আলিপুর আদালত ধৃত ওই দু’জনকে আগামী ৩০ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। অন্য দিকে, খুনের মূল মামলায় মনোতোষ এবং দীপশেখরকে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও নতুন মামলায় বিচারকের নির্দেশ মেনে আগামী ৩০ অগস্ট পর্যন্ত দু’জনকে নিজেদের হেফাজতে পাবে পুলিশ।

জামিনের আর্জি খারিজ

মনোতোষ এবং দীপশেখরের বিরুদ্ধে যে নতুন মামলা এনেছে পুলিশ, তার বিরোধিতা করেছেন তাঁদের আইনজীবীরা। মনোতোষের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল মানসিক ভাবে ‘ট্রমা’য় ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে পুলিশি হেফাজত শেষ হওয়ার দিনে নতুন করে মামলায় জুড়তে চাইছে পুলিশ। তিনি জামিনের আবেদন করলেও সেই দাবি মানতে রাজি হননি সরকারি আইনজীবী। আইনজীবী জানিয়েছেন, এই আবেদনে কোর্টের সময় নষ্ট হচ্ছে। মনোতোষের আইনজীবী ওমি হকও প্রশ্ন তোলেন, পুলিশ আগে র‌্যাগিংয়ের ধারা দিয়েছে। তার পর কেন ফের নতুন মামলায় হেফাজতে চাইছে? এই মামলায় জামিনও চেয়েছেন তিনি। সরকারি আইনজীবী যদিও এই সব দাবি মানেননি। তিনি জানিয়েছেন, হস্টেলের এক কর্মী নিজের বয়ানে জানিয়েছেন, তাঁকে গেট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর নেপথ্যে একটা গোটা দল রয়েছে, যাকে ‘ক্র্যাক’ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী।

১০ জায়গায় সিসি ক্যামেরা

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শীঘ্রই শুরু হবে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ। এ জন্য ১০টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বসানোর জন্য ২৬টি সিসি ক্যামেরার অর্ডার দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দায়িত্ব পেয়েছে বাইরের একটি সংস্থা। ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিন তলা থেকে পড়ে যান প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরেই নিরাপত্তার খাতিরে সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবি ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ে। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথাও সিসি ক্যামেরা নেই বলেই সেখানে নিয়মকানুন মানা হয় না। রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের তরফে একাধিক বার সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবি জানানো হয়েছে। মামলা হয়েছে আদালতেও। এই পরিস্থিতিতে যাদবপুরের নতুন অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই জানিয়ে দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। এ বার সেই কাজই শুরু হতে চলেছে।


পরামর্শ চায় যাদবপুর

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের সেই পড়ুয়া ছিলেন অপ্রাপ্তবয়স্ক। এ বার তা নিয়েই শিশু সুরক্ষা কমিশনের পরামর্শ চাইলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের প্রশ্ন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক পড়ুয়ারাই আসেন। সেখানে কোনও পড়ুয়া যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়, তা হলে কী করণীয়? শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে এ কথা জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু। শনিবারই ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তৃতীয় নোটিসটি পাঠিয়েছে কমিশন। তারা জানিয়েছে, দ্বিতীয় যে নোটিসটি পাঠানো হয়েছিল, তার জবাবে তারা সন্তুষ্ট নয়। সেই কারণেই আবার নোটিস পাঠানো হয়েছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় জানান, এই ঘটনায় কমিশনের তদন্তের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কর্তৃপক্ষ। যাতে কমিশন উদ্বিগ্ন। স্নেহমঞ্জুকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কমিশনের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, কমিশনের তদন্তের এক্তিয়ার নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা হয়নি। বরং, তাঁরাই কমিশনের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছেন। রেজিস্ট্রার বলেন, ‘‘কমিশনের তদন্তের এক্তিয়ার নিয়ে আমরা একেবারেই প্রশ্ন তুলিনি। আমরা বলতে চেয়েছি, উচ্চশিক্ষা তো শিশুদের জন্য নয়। সে ক্ষেত্রে, এই ধরনের পরিস্থিতি কী ভাবে এড়ানো যায়? কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক পড়ুয়া যদি আসে, তার জন্য কী ভাবে আলাদা ব্যবস্থা করা যায়? সেটা আমাদের জানানো হোক। ওঁদের তদন্তে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’

কমিশনের চিঠি

যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ফের চিঠি পাঠাল রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়কে দু’টি চিঠি পাঠিয়েছিল শিশু সুরক্ষা কমিশন। এ বার তৃতীয়। সূত্রের খবর, আগের পাঠানো নোটিসের প্রেক্ষিতে যে জবাব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট নয় কমিশন। আর সেই কারণেই নতুন করে এই নোটিস পাঠানো হল বলে কমিশন সূত্রে খবর। কমিশন সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে যে তথ্য পাঠানো হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি, হস্টেলের আবাসিকদের সংখ্যা থেকে শুরু করে অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি সংক্রান্ত যে তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন, তা ঠিক ভাবে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ কমিশনের। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রেকর্ড যে ভাবে বজায় রাখা উচিত, সেই ভাবে রাখা হয়নি বলেও উল্লেখ করেছে কমিশন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউজিসির যে সব নিয়ম রয়েছে, তা-ও সঠিক ভাবে মানা হয়নি বলেও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চিঠি পাঠানোর এক্তিয়ার রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা। যদিও এ অভিযোগ মানতে চাননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অন্য বিষয়গুলি:

JU Student Death Ragging police custody
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy