সফল: লাদাখের উমলিং লা-তে নির্মল ওরাওঁ।
লাদাখের সৌকার থেকে মাহেব্রিজ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তা প্রায় জনমানবহীন। সে পথে প্রথম দিনেই খাবার ও জল প্রায় শেষ। দ্বিতীয় দিন থেকে সঙ্গী বলতে এক বোতল জল ও একটি বিস্কুটের প্যাকেট। একে পায়ে ফোস্কা, সেই সঙ্গে জল ও বিস্কুটও শেষের পথে। খিদেয় পেট কামড়াচ্ছে। তবু মনের জোরেই টানা তিন দিন হেঁটে গিয়েছেন বিরাটির যুবক। শেষে উল্টো দিক থেকে আসা বিহারের এক শ্রমিকের সঙ্গে দেখা! তাঁর দেওয়া খাবারেই ধড়ে প্রাণ ফিরে পান বছর চব্বিশের যুবক নির্মল ওরাওঁ।
এটুকুই শুধু নয়। কলকাতা বিমানবন্দর এলাকা থেকে দীর্ঘ ২৭০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে, এমন একাধিক প্রতিকূলতাকে জয় করেই লাদাখে দেশের সর্বোচ্চ সড়ক উমলিং লা-তে (পাস) পৌঁছেছেন নির্মল। তা-ও মাত্র ৭৫ দিনে। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ যখন সম্পূর্ণ একা হয়ে যায়, তখন কী ভাবে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়, সেই শিক্ষাটাই পেলাম।’’
পেশায় সাইকেল মিস্ত্রি নির্মলের সঙ্গে ছিল জাতীয় পতাকা সাঁটা রুকস্যাক আর সাকুল্যে হাজার তিনেক টাকা। উত্তর দমদম পুরসভায় কর্মরত, বিরাটির পশ্চিম নবনগরের বাসিন্দা নির্মল গত ১৯ মে পদব্রজে যাত্রা শুরু করেন। প্রথমে ঠিক ছিল, কলকাতা থেকে হেঁটে পাঁচ রাজ্য ছুঁয়ে লে পৌঁছবেন। কিন্তু পরে পরিকল্পনা বদলে লাদাখের সর্বোচ্চ গাড়ি চলার পথ উমলিং লা-য় পৌঁছে অভিযান শেষের কথা ভাবেন নির্মল। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির কথা মাথায় রেখে ৭৫ দিনে দেশের সর্বোচ্চ গাড়ি চলার পথ উমলিং লা-এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’
তবে লাদাখ পর্যন্ত নির্মলের যাত্রাপথ ততটাও মসৃণ ছিল না। উত্তরপ্রদেশের কল্যাণপুর থেকে সীতাপুর পৌঁছনোর পথে রাতে ধাবা থেকে বার করে দেওয়া হয় তাঁকে। সারা রাত পথ চলে পরদিন ৬২ কিলোমিটার দূরে সীতাপুরের হোটেলে পৌঁছেছিলেন। উমলিং লা থেকে লে ফিরে নির্মল জানালেন, পায়ে একাধিক ফোস্কা পড়েছে। উমলিং লা-র উচ্চতা প্রায় ১৯০২৪ ফুট, অর্থাৎ এভারেস্ট বেসক্যাম্পের চেয়েও উঁচুতে। ফলে সেখানে হেঁটে পৌঁছতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে তাঁকে। কারণ অক্সিজেনের অভাব ছিল ভালই।
এলাকায় সুন্দর নামে পরিচিত বিরাটির ওই তরুণ যাত্রাপথে বন্ধু হিসেবে পেয়েছেন অনেককে। যেমন, বাইক নিয়ে প্রথম উমলিং লা-তে পৌঁছনো মহিলা বাইকচালক কাঞ্চন উগারস্যান্ডি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান থেকে শুরু স্থানীয়েরা অনেকেই খাবার ও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়ে সাহায্য করেছেন তাঁকে। তবে প্রতিকূলতাও কিছু কম ছিল না।
কিন্তু লাদাখ যেতে হাঁটার পরিকল্পনা কেন?
নির্মল বলছেন, ‘‘পরিবেশকে প্রতিনিয়ত নষ্ট করছি আমরা। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে সবুজ বাঁচানোর বার্তা ছড়িয়ে দিতেই হাঁটার কথা ভেবেছিলাম।’’
নির্মলের এক সময়ের প্রতিবেশী সাত্যকি রাহা বলছেন, ‘‘এত কম সময়ে এত রকম প্রতিকূলতা পেরিয়ে অভিযান শেষ করার জন্য নির্মলকে অভিনন্দন।’’
উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস বলেন, ‘‘নির্মল আমাদের গর্বিত করেছেন। ওঁর পাশে সর্বতো ভাবে প্রশাসন থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy