Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Online Fraud

অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ নিতে গিয়ে ‘তথ্যচুরি এবং প্রতারণা’র শিকার

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৩৭
Share: Save:

লকডাউনের সময়ে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ নিতে গিয়ে বেশ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে হয়েছিল সেখানে। আর এ ভাবেই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকের মোবাইলে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে প্রতারণা করা হয়েছে বলে উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নৈহাটির এক ব্যবসায়ী।

গত ১০ জানুয়ারি খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করে সুমন্ত মজুমদার নামে ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, লকডাউন-পর্বে ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি যখন বন্ধ ছিল, তখন স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য অনলাইনে বেশ কিছু নতুন অ্যাপ আত্মপ্রকাশ করে। গুগল স্টোর থেকে ডাউনলোড করে সেই অ্যাপগুলিতে আবেদন করলে ঋণ পাওয়া যায়। লকডাউনের সময়ে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে এমনই কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ মারফত বেশ কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। সেখানে সুদের হার অল্প বলে জেনে ওই ঋণের জন্য আবেদন করেছিলেন সুমন্ত। শর্ত অনুযায়ী, অ্যাপে সেই আবেদনপত্রের সঙ্গে নিজের প্যান কার্ড ও আধার কার্ড এবং পরিচয়পত্রের প্রতিলিপিও জমা দিতে হয়েছিল তাঁকে। এই সব কিছুই হয়েছিল অ্যাপের মাধ্যমে। কিন্তু কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের থেকে ওই ঋণ মিলছে, তার নাম-ঠিকানা সেই অ্যাপে দেওয়া ছিল না।

সুমন্ত বলেন, ‘‘সব তথ্য জমা দেওয়ার পরেই শুরু হয় আসল খেলা। যে পরিমাণ টাকা ঋণ চেয়েছিলাম, তার বেশ খানিকটা ‘প্রসেসিং ফি’ হিসেবে কেটে বাকি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এই শর্তের কথা ঋণ নেওয়ার সময়ে বলা হয়নি। তার পরে সুদ হিসেবে যত টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল, তার থেকে বেশি টাকা নেওয়া হয়। সুদের হার কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বেশি দেখানো হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ঋণশোধের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে অচেনা নম্বর থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে। চড়া সুদ-সহ বাকি টাকা শোধ করার জন্য চাপ দেওয়া দেওয়া হতে থাকে। হোয়াটসঅ্যাপে অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়, আইনি নোটিসও পাঠানো হয়। হোয়াট‌সঅ্যাপে একটি এফআইআর-এর প্রতিলিপি পাঠিয়ে মুম্বইয়ের একটি থানায় সুমন্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। এ সবের কারণে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছিলেন ওই ব্যবসায়ী।

এর পরে চাপে পড়ে বেশ কয়েক কিস্তি ঋণ পরিশোধ করেন সুমন্ত। সুদ হিসেবে তিনি যে টাকা পরিশোধ করেছিলেন, তা ঋণের পরিমাণের থেকে অনেকটা বেশি। তাঁর দাবি, ‘‘আমার মোবাইলে থাকা কনট্যাক্ট লিস্ট চুরি করে ওরা আমার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়দের ফোন করতে শুরু করে। আমার উপরে চাপ তৈরি করতে পরিচিতদের ফোন করে গালিগালাজ করা শুরু হয়। তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপের ভয় দেখানো হয়। ভীত আত্মীয়েরা ফোন করে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করতে বলেন।’’

এর পরে বন্ধুদের পরামর্শে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তথা সুপ্রিম কোর্টে নিযুক্ত রাজ্য সরকারের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের কাছে যান সুমন্ত। তাঁর পরামর্শে খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। সেই অভিযোগের তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে খড়দা থানার পুলিশ।

এই ধরনের অ্যাপ সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও। তাঁদের পরামর্শ, নামমাত্র সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখানো অ্যাপগুলি থেকে সাবধান হওয়াই বাঞ্ছনীয়। বিভাস বলেন, ‘‘লকডাউন চলাকালীন সাইবার ক্রাইম বেড়ে গিয়েছে। প্রতারণা এবং তথ্য চুরির এ এক নতুন পন্থা। প্রতারণা চক্রটি অনলাইনে সক্রিয়। ফলে চক্রীদের হাতেনাতে ধরার কাজটা কঠিন। তাই এদের থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, গোটা দেশেই এই চক্র সক্রিয়। গুগল কিছু অ্যাপকে স্টোর থেকে সরিয়েও দিয়েছে। দক্ষিণের কয়েকটি রাজ্যে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানাচ্ছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Online Fraud Data Theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy