সুশোভন সাহা
প্রতারণার অভিযোগে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক তরুণী। অভিযোগ ছিল, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর নামে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে টেলিভিশন, রেফ্রিজ়ারেটর, দু’টি মোবাইল ফোন এবং একটি মোটরবাইক কিনেছেন এক যুবক। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে হাজতে ভরলেও ঋণের টাকা মেটানো নিয়ে এখন হিমশিম খাচ্ছেন কলেজপড়ুয়া ওই তরুণী। তিনি বলেন, ‘‘প্রায়ই আমার বাড়ি আসছেন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি। দু’লক্ষ টাকার বেশি ঋণ হয়ে গিয়েছে। আমি কলেজে পড়ি, বাবা সামান্য কাজ করেন। কী করে এত টাকা মেটাব জানি না!’’
শিয়ালদহ এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী জানান, এক পরিচিতের মাধ্যমে সুশোভন সাহা নামে ওই যুবকের সঙ্গে ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে আলাপ হয় তাঁর। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় দায়ের করা অভিযোগে তরুণী জানিয়েছেন, সুশোভন মোটরবাইক সারাইয়ের কাজ করতেন বলে জানিয়েছিলেন। সম্পর্ক শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই তরুণীকে দিয়ে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলান তিনি। বছরখানেক সম্পর্কের পরে গত ১৩ এপ্রিল ওই যুবক দমদমের শপিং মল থেকে একটি ঋণদানকারী সংস্থার কার্ড করান তরুণীর নামে। তা দিয়েই একটি টেলিভিশন, একটি রেফ্রিজ়ারেটর এবং একটি মোবাইল ফোন কেনেন তিনি। তরুণীর দাবি, ‘‘কেনার পরে সুশোভন বলেছিল, বিয়ের পর তো আমি ওদের বাড়িতেই গিয়ে উঠব। তাই এখন থেকেই সব ওদের বাড়িতে থাক। তখন কোনও সন্দেহ হয়নি। যদিও প্রথমে ও বলেছিল, হাবরায় থাকে। পরে পুলিশের থেকে জানতে পারি, ছাতাকল এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে সুশোভন। স্ত্রী এবং সন্তানও রয়েছে।’’
তরুণীর দাবি, এর কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে দেবেন বলে ফের একটি মোবাইল ফোন কেনেন সুশোভন। এ বারও তাঁর যুক্তি ছিল, কাগজে শুধু নাম থাকছে তরুণীর। ঋণের কিস্তির টাকা তিনিই মেটাবেন। এর কয়েক মাসের মধ্যে একটি মোটরবাইক কেনার কথা বলেন সুশোভন। তরুণীর দাবি, ‘‘ও বলেছিল, মেয়েদের নামে মোটরবাইক কিনলে ঋণ পেতে সুবিধা হয়! প্রথম এক মাস কিস্তির টাকা শোধ করেছিল বলে সন্দেহ হয়নি!’’ কিন্তু তার এক মাস পরেই কিস্তির টাকা বাকি পড়েছে জানিয়ে ব্যাঙ্কের চিঠি আসে তরুণীর বাড়িতে। সে কথা ফোনে জানানোয় সুশোভন আর যোগাযোগ রাখছিলেন না বলে অভিযোগ তরুণীর।
এর পরে গত ১৩ জুন ফোন করে দিঘায় গিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন সুশোভন। তরুণী বলেন, ‘‘দিঘায় সাত দিন থাকার পরে বলে, মেয়ের বাড়ির টাকায় কেনা পোশাক পরে বিয়ে করা ওদের বাড়ির নিয়ম। আমার বাবা-মাকে আসতে বলার কথা বলায় সুশোভন বলেছিল, ‘তোমার বাড়ির লোক এলে আমার বাড়ির লোক কী দোষ করেছেন? শুধু টাকা পাঠাতে বলো।’ যে দিন টাকা এল, তার পরের দিনই পোশাক কেনার নাম করে ওই টাকা নিয়ে বেরিয়ে যায় সুশোভন। আর ফেরেনি।’’ তরুণীর বাড়ির লোক গিয়ে ওই হোটেল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে। হোটেলে ১৯ হাজার টাকা বিল হয়েছিল। সেটাও তরুণীর বাড়ির লোককেই মেটাতে হয়।
আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা তদন্তে নেমে গত ২৪ জুন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। দু’দফায় পুলিশ এবং জেল হেফাজতে থাকার পরে গত শনিবার ফের সুশোভনকে আদালতে তোলা হয়। এ বারও তাঁকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তবে ঋণের কিস্তির টাকার কোনও সুরাহা হয়নি। তরুণী বললেন, ‘‘এ ভাবে ঠকতে হবে ভাবিনি। থানার কয়েক জন কাকু ঋণে নেওয়া জিনিসপত্র ব্যাঙ্কে ফিরিয়ে দিয়ে আমায় সাহায্য করবেন বলেছেন। ঋণ মেটানোর ক্ষমতা সত্যিই আমাদের নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy