Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Ambulance extortion

পার্ক সার্কাস থেকে মেডিক্যাল ৯০০০! না দেওয়ায় করোনা আক্রান্ত ২ শিশুকে নামিয়ে দিল অ্যাম্বুল্যান্স

অ্যাম্বুল্যান্স থেকে করোনা আক্রান্ত ৯ মাসের শিশু এবং সাড়ে ৯ বছরের বালককে তাদের মায়েদের সঙ্গে নামিয়ে দেওয়া হয়।

এই অ্যাম্বুল্যান্স চালক মোশারফ গাজিই শেষমেশ শিশুদের পৌঁছে দেন মেডিক্যালে।—নিজস্ব চিত্র।

এই অ্যাম্বুল্যান্স চালক মোশারফ গাজিই শেষমেশ শিশুদের পৌঁছে দেন মেডিক্যালে।—নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ১৮:১৭
Share: Save:

পার্ক সার্কাস থেকে কলেজ স্ট্রিটের মেডিক্যাল কলেজ। দূরত্ব ৫.৪ কিলোমিটার। আর সেইটুকু রাস্তা যাওয়ার জন্য ভাড়া চাওয়া হল ৯ হাজার টাকা! অভিযোগ, অসহায় করোনা রোগীর পরিবারকে পেয়ে এ ভাবেই জুলুম চালাচ্ছেন এক শ্রেণির অ্যাম্বুল্যান্স চালক। দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় অ্যাম্বুল্যান্স থেকে করোনা আক্রান্ত ৯ মাসের শিশু এবং সাড়ে ৯ বছরের বালককে তাদের মায়েদের সঙ্গে নামিয়ে দেওয়া হয়। এক চিকিৎসকের মধ্যস্থতায় নিরুপায় রোগীকে শেষ পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে দেন অন্য এক চিকিৎসক।

শুক্রবার রাতে এমনই মারাত্মক অভিজ্ঞতা হল হুগলির ঝিকিরার বাসিন্দা শ্যামল পালের। শনিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলছিলেন রাতের অভিজ্ঞতা। শ্যামলের কথায়, ‘‘আমার ছেলে শুভজিৎ। সাড়ে ৯ বছর বয়স। গত সপ্তাহের শেষের দিক থেকে শরীর খারাপ হয় তার। শ্বাসকষ্ট সঙ্গে পেট ব্যথা। সোমবার নিয়ে আসি কলকাতায়। পার্ক সার্কাসে একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালে ভর্তি করি।”

হাসপাতাল সূত্রে খবর, অনেক ধরনের জটিলতা ছিল শুভজিতের। তবে ধীরে ধীরে অনেকটাই উন্নতি হয় তার। কিন্তু তার মধ্যেই কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায়, ‘‘অন্য শিশুদের সংক্রমণ এড়াতে রাতেই আমরা ওই শিশুর পরিবারকে বলি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিয়ে যেতে। আমরা যোগাযোগও করি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে। তাঁরা জানান কোভিড হাসপাতালে জায়গা আছে। তার পরেই ওই শিশুর পরিবারকে রেফার করা হয়।” রাতেই শ্যামল পালের ছেলের মতোই রেফার করা হয় ৯ মাসের আরও একটি শিশুকে। তারও কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: দেশে প্রথম করোনার পরীক্ষামূলক টিকা নিলেন দিল্লির এই যুবক

শ্যামল শনিবার বলেন, ‘‘রাত হয়ে গিয়েছে। পরের দিন লকডাউন। তাই রাস্তায় গাড়ি কম। কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পাচ্ছি না। পার্ক সার্কাসের হাসপাতালের মধ্যে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ছিল। তার চালককে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি যেতে অস্বীকার করেন।” এর মধ্যেই রোগী নিয়ে ওই হাসপাতালে উপস্থিত হয় অন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স। শ্যামলের মতোই অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজছিলেন অন্য শিশুটির বাবাও। তাঁর ৯ মাসের শিশুও ভর্তি ছিল ওই একই বেসরকারি হাসপাতালে। তাঁর শিশুরও কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। তাঁকেও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। শ্যামলের দাবি, ‘‘ওই অ্যাম্বুল্যান্সটি রোগী নামিয়ে দিতেই আমরা চালককে বলি মেডিক্যাল কলেজে যাবেন কি না? চালক রাজি হন। আর এক জনও অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজছিলেন। এই অ্যাম্বুল্যান্সটা বড়। তাই তাঁর শিশুকে নিয়েও উঠে পড়েন ওই ব্যক্তির স্ত্রী।” শ্যামলের কথায়, ‘‘ভাড়ার কথা আমরা কেউই বিশেষ ভাবিনি। কাছেই যাব। কত টাকা আর চাইবে? এটা ভেবেই আমরা আর ভাড়ার কথা বলিনি।”

আরও পড়ুন: কম খরচে, দ্রুত জানা যাবে করোনা পরীক্ষার ফল, বিশেষ যন্ত্র আবিষ্কার খড়্গপুর আইআইটির

কিন্তু রোগীরা অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠার পরই ভাড়ার কথা শুনে আক্কেলগুড়ুম হয়ে যায় শ্যামলের। তিনি বলেন,‘‘প্রথমে অ্যাম্বুল্যান্সের চালক প্রতি রোগী পিছু ৬ হাজার টাকা চান। অর্থাৎ দুই রোগী মিলিয়ে ১২ হাজার টাকা।’’ শ্যামলের দাবি, তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেন যে অত টাকা দিতে পারবেন না। অন্য শিশুর বাবাও বলেন ওই বিশাল পরিমাণ টাকা তিনিও দিতে পারবেন না। অ্যাম্বুল্যান্স চালক দরাদরি করে ৯ হাজার টাকা চান শেষ পর্যন্ত। কিন্তু তাতে শ্যামলরা রাজি না হওয়ায় রীতিমতো গালিগালাজ করেন অ্যাম্বুল্যান্স চালক, এমনটাই অভিযোগ। দুই নাবালক রোগী এবং তাদের মায়েদের হাত ধরে টেনে নামিয়ে দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্স থেকে। শত অনুনয় অনুরোধেও ওই টাকার কমে রোগী পৌঁছতে অস্বীকার করেন ওই চালক।

অসহায় অবস্থায় পড়েন দুই রোগীর পরিবার। ঘটনাটির সাক্ষী ছিলেন হাসপাতালের কর্মীরাও। তাঁদের মাধ্যমেই খবর পান ওই বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক। তিনি তখন উদ্যোগী হয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে দেন। সেই অ্যাম্বুল্যান্সের চালকের আবার কোভিড রোগী পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই কিট নেই। মোশারফ আলি গাজি নামে ওই চালকের বাড়ি হাসপাতালের পাশেই লোহাপুলে। তিনি শনিবার ফোনে বলেন,‘‘ডাক্তারবাবু বার বার করে বললেন। তিনি বললেন, অল্প সংক্রমণ দু’জনের। রোগী বা সঙ্গের আত্মীয়দের খুব কাছে না গেলে ভয় নেই। তাই আমি খালি মাস্ক পরেই পৌঁছে দিই।” মোশারফের দাবি তিনি ২ হাজার টাকা নিয়েছেন দুই রোগীকে পৌঁছে দিতে।

এ দিন শ্যামল বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু ব্যবস্থা না করে দিলে কী হত জানি না। হাসপাতাল চত্বরেই বাচ্চাকে নিয়ে বসে থাকতে হত। কারণ হাসপাতালের বিল মেটানোর পর আমার হাতে সামান্য ক’টা টাকা ছিল।”

শ্রীরামপুর আদালতের এক আইনজীবীর কাছে চাকরি করেন শ্যামল। ১০-১২ হাজার টাকা রোজগার। লকডাউন শুরু হওয়া ইস্তক সেই রোজগারও বন্ধ। এ দিন ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসে তাঁর আবেদন, ‘‘আমার মতো অনেকেই এ রকম জুলুমের শিকার হচ্ছেন। আমার মতো গরিব মানুষ তাঁরাও। সরকার কেন অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া বেঁধে দেয় না? তা হলে তো মানুষের হেনস্থা হতে হয় না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy