কৌস্তভ বাগচী। ফাইল চিত্র।
চাণক্য ওরফে বিষ্ণু গুপ্ত বা কৌটিল্যের শিখা-স্মৃতি অনেকেরই মনে পড়ছে কৌস্তভ বাগচীর মুণ্ডিতমস্তকে একটি টিকি দেখে। মাঝেমধ্যে হাত চলে যাচ্ছে সেই শিখায়। কোঁকড়ানো ব্যাকব্রাশ ঘন কালো চুলের মায়া ভোলা সহজ নয়। কিন্তু রাজনীতিকের জীবনে যে এ-সব মায়ামমতা থাকতে নেই, রবিবার সকালে বাড়িতে বসে নিজেই বললেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা আইনজীবী কৌস্তভ।
আবেগ নয়, মাথা দিয়ে সব কিছু ভাবতে হবে— কৌস্তভ এ কথাটা শুধু ঠোঁটস্থ নয়, মগজস্থ করেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমানের অভিযোগে শুক্রবার শেষ রাতে কৌস্তভকে গ্রেফতার করে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তুলেছিল বড়তলা থানার পুলিশ। জামিন পেয়েই মাথা মুড়িয়ে শপথ নেন কৌস্তভ, তৃণমূল শাসক দলের ভূমিকায় থাকা পর্যন্ত সাধের চুল আর রাখবেন না। নন্দ বংশের ক্ষেত্রে চাণক্য অনেকটা এমনই শপথ নিয়েছিলেন বলে ইতিহাসের জল্পনা।
কৌস্তভ-কাণ্ড নিয়ে সমাজমাধ্যমে কটাক্ষ ও সাধুবাদের বন্যা বইছে। রবিবারেও সংবাদমাধ্যমের ভিড় ব্যারাকপুর ওল্ড ক্যালকাটা রোডে তাঁর বাড়ির গলিতে। বাম-কংগ্রেস নেতাদের যাতায়াত। মিষ্টির প্যাকেট, পুজোর ফুল হাতে শুভেচ্ছা। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে কৌস্তভ জানান, শোভাবাজারের অভিযোগকারী যুবকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা-সহ তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ‘গলদ’ নিয়ে শাসক দল তথা মুখ্যমন্ত্রীকে চাপে ফেলতে চান তিনি। ব্যারাকপুর শহর কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিজের বাড়িতে বসে কৌস্তভ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন আমাকে ভয় পাচ্ছেন। তাই মাঝরাতে পুলিশ পাঠিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের লোককে হেনস্থা করছেন। এর ফল তৃণমূল প্রতিটি ইঞ্চিতে টের পাবে, দু’তিনটে দিন সবুর করুন। দীপক ঘোষের বইটির কথা বলেছিলাম বলে গ্রেফতার করা হল। রাজ্যের প্রতিটি ঘরে ওই বই পৌঁছে যাবে। বাচ্চা, বুড়ো সকলের মুখস্থ হয়ে যাবে। সেই কাজটাই এ বার করব।’’
কিছু দিন আগে দলের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব তৈরি হওয়ায় প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিলেন কৌস্তভ। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি দল ছাড়ব, কখনও বলিনি। কিন্তু স্তাবকতার বিরোধী আমি। এইটুকু ঋজুতা তো এক জন মানুষের থাকা উচিত। তার নানা ব্যাখ্যা হয়েছিল। আমার ঘরে আবর্জনা জমলে আমি তো ঘর থেকে বেরিয়ে যাব না। আবর্জনা পরিষ্কার করব। এটাই বলতে চেয়েছি।’’ এ দিন কৌস্তভের সঙ্গে দেখা করে নাট্যকার চন্দন সেন বলেন, ‘‘কৌস্তভের গ্রেফতারি দেখে ‘এক নায়কের শেষ রাত’ নামে আমার একটি নাটকের কথা মনে পড়ে গেল। প্রশাসন যদি মনে করে বিরোধিতা হতে পারে বা হচ্ছে, তখন গ্রেফতার করে মুখ বন্ধ করতে চাইছে!’’
হাওড়ার উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রে যুব তৃণমূলের সম্মেলনে কৌস্তভকে নিশানা করে বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেন বলেন, ‘‘পুর নির্বাচনে ১৫টা ভোট পাননি। স্বপ্ন দেখছেন মমতাকে সরাবেন! নেড়া মাথা নেড়াই রয়ে যাবে।’’ আর মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, ‘‘বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-ও নেড়া হয়েছিলেন। কথা রাখতে পারেননি। আবার মাথায় চুল রাখছেন। আসলে এঁরা প্রচার চান।’’
জবাবে আমতার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘কৌস্তভকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে। ওঁর হিম্মত আছে, তাই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। পঞ্চায়েতে ভোট দিতে পারলে সাগরদিঘির মতোই চোরেদের বিপক্ষে রায় দেবেন মানুষ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy