অহনা বসাক
১৮ ফেব্রুয়ারি মেয়ের জন্মদিনের দিনই ছিল বাংলা পরীক্ষা। পরের দিন ইংরেজি। মেয়ের পড়ায় ক্ষতি হবে ভেবে ওই দিন কিছুই করেননি মানিকতলার বাসিন্দা বলরাম বসাক এবং তাঁর স্ত্রী আরতি। তাঁরা ঠিক করে রেখেছিলেন, পরীক্ষা শেষ হলে কেক কেটে মেয়ের জন্মদিন পালন করবেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা আর পূরণ হল না। মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীনই মৃত্যু হল তাঁদের পনেরো বছরের মেয়ে অহনা বসাকের।
মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া আরতিদেবী রবিবার বললেন, ‘‘বুধবার ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার দিনই সব শেষ হয়ে গেল। মাধ্যমিকও শেষ হল, আর আমার মেয়েটাও! ওর রেজাল্ট আমি নিতে যেতে পারব না।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, মানিকতলার মুরারিপুকুর রোডে বাড়ি অহনাদের। সে মানিকতলার বাণীপীঠ স্কুলে পড়ত। মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীনই ঠান্ডা লেগে যাওয়ায় মেয়ে কষ্ট পাচ্ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে পরিবার। মুরারিপুকুরেরই এক চিকিৎসককে দেখানো হচ্ছিল তাকে। আরতিদেবীর দাবি, গত বুধবার সকাল থেকে হঠাৎ প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয় অহনার। দ্রুত তাকে উল্টোডাঙার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে বেলা বাড়তেই পরীক্ষা দিতে যাবে বলে বায়না ধরে অহনা।
আরতিদেবী বলেন, ‘‘কিছুতেই ওকে আটকানো যায়নি। হাসপাতাল থেকেই পুলিশকে জানানো হল। পুলিশ বলল, সে রকম হলে হাসপাতালেই পরীক্ষা দেওয়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু ও পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েই পরীক্ষা দেবে বলে জেদ ধরে।’’ বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে উল্টোডাঙা হাউজ়িং কমপ্লেক্সের একটি স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরে বেলা দু’টো নাগাদ আরতিদেবীর কাছে খবর আসে যে, অহনা অসুস্থ বোধ করছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই অহনাকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বার করে দ্রুত আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আরতিদেবী বলেন, ‘‘আর জি করে নিয়ে যেতেই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় অহনাকে। অক্সিজেনও চালু করা হয়। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওকে ছুটি দিয়ে দেয় ওই হাসপাতাল। বলা হয়, সমস্যা হলেই দ্রুত নিয়ে আসুন। ভর্তি রেখে লাভ নেই।’’
রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন আরতিদেবী। রাতে ফের অহনার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। হাসপাতাল থেকে লিখে দেওয়া একটি ওষুধ খাওয়ানো হয় তাকে। কাঁদতে কাঁদতে আরতিদেবী বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টে ছটফট করছিল মেয়েটা। হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই চিকিৎসকেরা বলে দিলেন, অহনা আর নেই।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ঠান্ডা লেগে ভুগছিল ওই কিশোরী। সেই থেকে শ্বাসকষ্ট জনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার।
অহনাদের টালির ঘরের সংসারে রোজগেরে বলতে এত দিন ছিলেন গেঞ্জির কারখানায় কাজ করা তার বাবা বলরামবাবু। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় সদ্য কাজে যোগ দিয়েছেন অহনার বছর বাইশের দাদা অভিজিৎ। বোনের কথা বলতে গিয়ে তাঁরও গলা ধরে আসে। তিনি বললেন, ‘‘বোন আমার ভূগোলে খুব ভাল ছিল। বড় হয়ে স্কুলে পড়াবে বলত।’’ কয়েক মিনিট থেমে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কোনও স্বপ্নই কি পূর্ণ হবে না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy