Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

অজস্র ছাড় পঞ্চম দফায়, কিন্তু কলকাতা সচেতন আছে তো?

গত ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে দেশ জুড়ে জারি হয় লকডাউন। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত গত ৬৭ দিনে শহরের নানা অংশ থেকে লকডাউন অমান্য করার একাধিক অভিযোগ এসেছে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ০২:৫৫
Share: Save:

চার দফা শেষে আজ, সোমবার থেকে ধাপে ধাপে উঠছে লকডাউন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আনলক-১’। খুলে যাচ্ছে সমস্ত ধর্মস্থান, হোটেল-রেস্তরাঁ। আগামী ৮ জুন থেকে খুলে যাবে শহরের শপিং মলও। তবে কেন্দ্রের নির্দেশ, কন্টেনমেন্ট জ়োনে লকডাউন চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। রাজ্যও আপাতত জানিয়েছে, কন্টেনমেন্ট জ়োন (এ)-তে আরও দু’সপ্তাহ লকডাউন চলবে। যদিও কন্টেনমেন্ট জ়োন (সি) এবং বাফার জ়োন (বি)-তে সব কিছুতে ছাড় দেওয়া হবে। এর পরেই যে প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে তা হল, সুরক্ষা-বিধি মেনে এত ছাড় নিয়ে চলতে শহর কি আদৌ প্রস্তুত? কারণ, খাতায়-কলমে লকডাউন জারি থাকলেও সপ্তাহান্ত থেকেই তা কার্যত উঠে যাওয়ারই চিত্র দেখা গিয়েছে।

গত ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে দেশ জুড়ে জারি হয় লকডাউন। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত গত ৬৭ দিনে শহরের নানা অংশ থেকে লকডাউন অমান্য করার একাধিক অভিযোগ এসেছে। গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে বাজার করা তো ছিলই, সঙ্গে কন্টেনমেন্ট জ়োনের নিয়ম উড়িয়ে পাড়ার লোকের দেদার ঘুরে বেড়ানো, চা-পান, তাস খেলা সমানে চলেছে।

অকারণে গাড়িতে ভুয়ো স্টিকার লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ায় গ্রেফতারও হয়েছেন অনেকে। আইন বলবৎ করতে গিয়ে বহু জায়গায় আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু তার পরেও যে জনতার একাংশের সেই অভ্যাসে ছেদ পড়েনি, তা রবিবার আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

এ দিন শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ ঘুরে দেখা গেল, সদ্য ঘোষিত এ শ্রেণিভুক্ত বেশ কয়েকটি কন্টেনমেন্ট জ়োনে বাজারে-রাস্তায় মাস্ক পরার বালাই তো নেই-ই। বহু জায়গায় দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে ধুমধাম করে চলছে শীতলাপুজোও। মধ্য কলকাতার তেমনই একটি কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাসিন্দা, বৃদ্ধ দম্পতি বললেন, ‘‘গত মঙ্গলবারই পাড়ার এক যুবক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনায় মারা গিয়েছেন। গোটা পাড়া ঘিরে দেওয়ার কথা। কিন্তু এ তো উল্টো চিত্র। যাঁরা পুজোর আয়োজন করছেন, কারও মাস্ক নেই। এঁদের হুঁশ ফিরবে কবে?’’

আরও পড়ুন: নেই পড়া গাছ লাগানোর যন্ত্র

উত্তর কলকাতার রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটই হোক বা বেহালার সাহাপুর মেন রোড, শহরের বেশ কয়েকটি কন্টেনমেন্ট জ়োনে শীতলাপুজো ঘিরে শনি-রবিবার চোখে পড়েছে এমন ভিড়। বেলেঘাটার একটি পুজোর উদ্যোক্তা তো বলেই দিলেন, ‘‘প্রসাদ নিতে শুধু ভিড় হয়েছে। বছরে এক বার পুজো হয়, অত ধরলে চলে না।”

একই বেপরোয়া ভাব রাস্তার মোড়ে মোড়ে। সিগন্যালে গাড়ির লম্বা লাইন দেখলে বোঝার উপায় নেই, লকডাউন চলছে। কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী অসহায় গলায় বললেন, ‘‘আর গাড়ি ধরে কী হবে? কাকে আটকাবেন? সবই তো ছাড় রয়েছে।’’ আজ, সোমবার থেকেই আবার বাজার খুলছে ধরে নিয়ে দোকান ঝাড়পোঁছ শুরু করেছিলেন নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী সুমন সিংহ। মুখে মাস্ক নেই। বললেন, “দোকান খুলে দেখি, জলে সব ভিজে গিয়েছে। এত কাজ মাস্ক পরে হয় না। আর ভেবে লাভ নেই। বাঁচলে এমনিই বাঁচব।”

একই চিত্র শ্যামবাজারের কাছে গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানে। সেখানে আবার গাড়ি সারানোর জন্য যত না ভিড়, তার থেকে বেশি ভিড় চালকের সঙ্গে আরোহীদের দূরত্ব নিশ্চিত করতে সিটের পিছনে প্লাস্টিক লাগাতে। এমনই একটি গাড়িতে চালকের আসনের চার দিকে প্লাস্টিক লাগাতে লাগাতে মাস্কহীন এক যুবক নির্বিকার মুখে বললেন, ‘‘কিছুতেই কিছু হবে বলে মনে হয় না। লকডাউন তো উঠে যাচ্ছে, কিছু টাকা রোজগার করতে পারব ভেবেই ভাল লাগছে। আরও আগে আমাদের হাতেই সব ছেড়ে দিতে পারত সরকার। অকারণে সব বন্ধ করে রাখল।”

সব কি অকারণেই বন্ধ থাকল? সদ্য করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা, কলকাতা পুলিশের একটি থানার ওসি বলেন, ‘‘লকডাউনে কী লাভ হল, আমি অন্তত বুঝলাম না। পুলিশ একটা অসম লড়াই লড়ল। শেষে সব ছেড়ে দিতে হল। মৃত্যুর হার কিছুটা কমল হয়তো, কিন্তু মানুষ কি আদৌ সচেতন হলেন?”

‘আনলক-১’ শুরুর আগে সেটাই এখন সব চেয়ে বড় প্রশ্ন।

আরও পড়ুন: আক্রান্ত ১৫, কাজ চালানোই কঠিন গরফা থানায়

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy