চাকরি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পথ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন চিনার পার্কের বাসিন্দা, বছর সাতাশের সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৌম্যা সিংহ। দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, নিউ টাউনে। সেই থেকেই কোমায় রয়েছেন ওই তরুণী। পরিবারের দাবি, চিকিৎসায় খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। ক্ষতিপূরণের দাবিতে লড়াই শুরু করেছিল সৌম্যার পরিবার। দীর্ঘ লড়াই শেষে গত ৮, মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতীয় লোক আদালতে তাঁর মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাকে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে তিন সদস্যের বেঞ্চ। রায় মেনে ওই অঙ্কের টাকা সৌম্যার পরিবারকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিমা সংস্থার আইনজীবী।
সৌম্যার দাদা অঙ্কিত বলেন, ‘‘বোনের অবস্থা এখনও ভাল নয়। পাঁচ বছর ধরে কোমায়
রয়েছে বোন। চিকিৎসার খরচ জোগাতে কালঘাম ছুটছে আমাদের। ক্ষতিপূরণের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই চালিয়েছি। বোনকে বাঁচিয়ে রাখতে কী লড়াই লড়ছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’’ সে দিনের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন অঙ্কিত। বলেন, ‘‘মাত্র ১৫ দিন আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছিল বোন। অ্যাক্সিস মলের কাছে একটি মোটরবাইক ধাক্কা মারে ওকে। তার পরে ছ’মাস কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হয় বোনের। কিন্তু কোমা থেকে বার করা যায়নি। বহু টাকা খরচ হয়েছে। বোন এখনও সংজ্ঞাহীন। এখন বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে। জানি না, আদৌ ও কোনও দিন কথা বলতে পারবে কিনা।’’ সৌম্যার বাবা ব্যাঙ্কের কর্মচারী ছিলেন। তাঁর উপার্জনের প্রায় সবটাই চলে গিয়েছে মেয়ের চিকিৎসায়। অঙ্কিত বলেন, ‘‘এর মধ্যে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন বাবা। আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। তিনি অসুস্থ হওয়ার পরে আমাদের
অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। বোনের চিকিৎসার জন্য বহু টাকা ঋণ করতে হয়েছে।’’ লোক আদালতের রায় সম্পর্কে অঙ্কিত বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি ক্ষতিপূরণ পাব। তবে এখনও পাইনি।’’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আইনি কর্তৃপক্ষের সচিব ঊর্মি সিংহ জানান, ২০২০-এ বারাসত জেলা আদালতে সৌম্যার মা সন্ধ্যাদেবী ক্ষতিপূরণের দাবিতে মামলা করেছিলেন। গত ৮ মার্চ মামলাটির নিষ্পত্তি হয় জাতীয় লোক আদালতে। বিচারকেরা ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলেন সন্ধ্যাদেবীর সঙ্গে। সৌম্যার শারীরিক অক্ষমতার কথা বিবেচনা করে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয় মুকুলিকা সিংহ (এডিজে ফাস্ট ট্র্যাক থার্ড কোর্ট), আইনজীবী বিজন কুমার মিত্র ও সমাজসেবী সর্বাণী চক্রবর্তীকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ। ওই দিন লোক আদালতের মাধ্যমে ৮১২৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়। মোট ২২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা আদায় হয়।
সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থার তরফে আইনজীবী উত্তম দস্তিদার বলেন, ‘‘রায়ের কপি হাতে পেলেই আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হবে। চিকিৎসায় খরচ হয়েছিল প্রায় ৯৮ লক্ষ টাকা। সেই টাকা এবং আনুষঙ্গিক ক্ষতি বাবদ মোট ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।’’ ক্ষতিপূরণ দিতে এত সময় কেন লাগল? তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত তথ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত
নথি সংগ্রহ করে যাচাই করতে সময় লেগেছে। এ ক্ষেত্রে ওই তরুণী ছিলেন ‘থার্ড পার্টি’। যে বাইকের ধাক্কায় তিনি আহত হয়েছিলেন, সেটির বিমা করানো ছিল আমাদের
সংস্থায়। এ সব ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পেতে গেলে থার্ড পার্টিকে ‘মোটর অ্যাক্সিডেন্ট ক্লেম ট্রাইব্যুনাল’-এ আবেদন করতে হয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)