Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Health

দেড় ঘণ্টা হেঁটে এসেও শিশুর চিকিৎসা পেলেন না বাবা-মা

শিশুর মা বললেন, ‘‘বাচ্চাটার খুব কাশি হয়েছে কয়েক দিন ধরে। কিছুই খাচ্ছে না। পাড়ার লোকজন আজই দেখিয়ে নিতে বললেন।”

অসহায়: চিকিৎসার আশায় সন্তানকে নিয়ে পথে দম্পতি। রবিবার, শিয়ালদহ এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অসহায়: চিকিৎসার আশায় সন্তানকে নিয়ে পথে দম্পতি। রবিবার, শিয়ালদহ এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০২:০৬
Share: Save:

খাবারের প্যাকেট দিতে দিতে চলেছে কলকাতা পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি লরি। পিছনে ছুটছেন খাবারের আশায় থাকা অনেকে। তখনই প্যারাম্বুলেটরে চেপে বাবা-মায়ের সঙ্গে যাচ্ছিল একটি শিশু। ভিড় কিছুটা পাতলা হতেই লরি থেকে নেমে এক সিভিক ভলান্টিয়ার ওই দম্পতির সামনে তুলে ধরলেন একটি খাবারের প্যাকেট।

পাশে দাঁড়ানো শিশুর মা বললেন, ‘‘আপনারা সোজা যাচ্ছেন? একটু এগিয়ে দেবেন? সকাল থেকে হাঁটছি। বাচ্চাটাও রয়েছে...!’’ খানিক বিব্রত ওই সিভিক ভলান্টিয়ার বলেন, ‘‘খাবারটা নিয়ে নিন। আমাদের গাড়িতে কাউকে তোলা বারণ। কিছু মনে করবেন না।’’ লরি চলে যায়, কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে ফের হাঁটা শুরু করেন দম্পতি।

লকডাউনে তো গাড়ি চলবে না জানা কথা। বেরিয়েছিলেন কেন? শিশুর মা বললেন, ‘‘বাচ্চাটার খুব কাশি হয়েছে কয়েক দিন ধরে। কিছুই খাচ্ছে না। পাড়ার লোকজন আজই দেখিয়ে নিতে বললেন। বেলা বারোটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। প্রায় দেড় ঘণ্টা হেঁটে এন আর এস হাসপাতালে এসেছিলাম। এখান থেকে বলা হল, শিশুরোগ বিভাগের কোনও চিকিৎসক আসেননি। অন্য হাসপাতালে যান।’’ পাশে দাঁড়ানো যুবক বললেন, ‘‘আমি ওর বাবা। হাসপাতাল থেকে কাছেই এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলাম। ওঁরা বাড়ি নেই। বাচ্চাটাকে নিয়ে হাঁটতে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে।’’ এন আর এস হাসপাতালের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘আউটডোর বন্ধ হলেও জরুরি বিভাগে যে কাউকেই দেখানো যাচ্ছে। কী হয়েছিল, খোঁজ করে দেখছি।’’ দম্পতির অবশ্য দাবি, ‘‘সেখানে গেলেও আমাদের অন্য হাসপাতালে যেতে বলা হয়।’’

প্যারাম্বুলেটরে বসা, ন’মাসের শিশুটির নাম সায়ন পাহি। বাবা সনাতন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম লাগানোর ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। মা নয়না গৃহবধূ। লকডাউন শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগেই সনাতনের বাবা মারা যান। সেই সময়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ক্রিস্টোফার রোডের এক কামরার ঘর থেকে তপসিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে কয়েক দিন থাকতে যান সনাতন। তার পরে আর বাড়ি ফিরতে পারেননি। লকডাউনের জন্য কাজও বন্ধ তাঁর। সনাতন বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে সল্টলেকের একটি সংস্থায় তিনশো টাকা রোজে কাজ করি। হঠাৎ করেই সব বন্ধ হয়ে গেল। কবে খুলবে জানি না। অন্য কোনও ভাবে হাসপাতালে পৌঁছনোরও উপায় ছিল না এ দিন। ছেলেটার কাশি থামছে না দেখে চিন্তায় বেরিয়ে পড়েছিলাম।’’ পাড়ায় ডাক্তার নেই? সনাতন বলেন, ‘‘প্রথম থেকে ওকে সরকারি হাসপাতালে দেখাই। এখন যে ক’টা টাকা বাঁচে তা-ই অনেক।’’

নয়না বলেন, ‘‘যেটুকু যা জমেছিল, তা দিয়েই এখন পাঁচ জনের সংসার চলছে। আমার বাবা তপসিয়ার কয়েকটি জলা জায়গা থেকে মাছ ধরেন। তা বিক্রি করেই এখন চলছে। আমরা এক বেলা খেলেও বাচ্চাটার দুধের ব্যবস্থা রাখতে চেষ্টা করছি। পাড়ার কয়েক জনও সাহায্য করছেন।’’

কথা বলতে বলতেই পুলিশের দিয়ে যাওয়া খাবারের প্যাকেট খুলে ফেলে শিশুটি। ঝুরঝুর করে পড়তে থাকে পোলাও। জলভরা চোখে নয়না বলেন, ‘‘মাথাটা গরম হয় না বলুন! রাতে খেয়ে নেব ভেবেছিলাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Topsia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy