সাংবাদিক বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারেরা। ছবি: সুদীপ্তা চৌধুরী সরকার।
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যার ইমেলের জবাব এক ঘণ্টায় দেওয়া হয়েছিল। তাতে বোঝা যায় আমাদের সদর্থক ইচ্ছা আছে। আমরা চাই, সব মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদের নিয়ে ৩০ জনের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে যেতে। আলোচনা সদর্থক করতে অভিভাবক হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী থাকুন। স্বাস্থ্য ভবন বা নবান্ন যে কোনও জায়গায় হোক বৈঠক। কিন্তু মিডিয়ার সামনে আলোচনা হতে হবে। সুরক্ষার দাবি আমাদের মূল দাবি নয়। বাকি দাবিকে মান্যতা দিয়ে বৈঠকে আমরা আগেও রাজি ছিলাম, এখনও আছি।”
জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, “এটিকে আমাদের জেদ বলে মনে করা হলে, কিছু বলার নেই। জেদ বললে বিষয়টি ছোট করা হচ্ছে। এই নারকীয় ঘটনার উদ্দেশ্য অজানা। যতক্ষণ না এটি জানতে পারছি, এই অপরাধীদের না ধরা হচ্ছে, ততক্ষণ কর্মবিরতি চালিয়ে যাব। সিবিআই তদন্তের দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা সারা রাত অপেক্ষা করবে। আমাদের তরফে ইমেল পাঠানো হচ্ছে, তার জবাবের অপেক্ষা করছি। আমারও চেয়েছি খোলা মনে সবার সামনে আলোচনা হোক। মুখ্যমন্ত্রী অভিভাবক, সেক্ষেত্রে উনি থাকবেন কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। এটা কোনও জেদ নয়, এটা অধিকার।”
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, “৯৩ হাজার ডাক্তারের মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার। যেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে না থাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে চূড়ান্ত বেহাল দশা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কর্মস্থলে নিরাপত্তার পাশাপাশি আমাদের মূল দাবি নির্যাতিতার বিচার। দ্রুত সমস্যা সমাধান করে কাজে ফিরতে চাই আমরাও। ভোর বেলা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ইমেল করায় কোনও রাজনীতি ছিল না। যে ভাবে রোগীদের জন্য আমরা ভোর চারটেয় ছুটে যাই, সে ভাবেই ইমেলটি করা হয়েছে। যাঁরা রাজনীতি করার অভিযোগ তুলছেন, তাঁরাই রাজনীতি করছেন। আমরা প্রথম দিন থেকেই পাঁচ দফা দাবি করছি।”
রাত সাড়ে ৯টায় স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানস্থল থেকে সাংবাদিক বৈঠক করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম সরকার আমাদের দাবিকে মান্যতা দেবে। আমরা আশা করেছিলাম, সরকার সদর্থক ভূমিকা নেবে।”
এই পরিস্থিতির মধ্যে এখনও কাটল না বৈঠকের জট। প্রতিক্রিয়া, পাল্টা প্রতিক্রিয়ার মাঝেই স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে ২৯ ঘণ্টা ধরে ধর্নায় আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। ঘড়ির কাঁটা যত এগোচ্ছে, তত ভিড় বাড়ছে অবস্থানস্থলে।
নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকের পরই পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের তরফে। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, এই আন্দোলনে কোনও রাজনীতি নেই। এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন বলেই দাবি তাঁদের। রাজ্য সরকার তাঁদের শর্তগুলি মেনে নিলেই আলোচনায় বসতে তাঁরা প্রস্তুত।
সন্ধ্যায় বৈঠকের জন্য নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর, নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। চন্দ্রিমা সন্দেহ প্রকাশ করেন, এই আন্দোলনের মধ্যে রাজনীতি জড়িয়ে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, “রাজ্য সরকার খোলা মনে বসতে চাইছে। কোনও শর্ত সাপেক্ষে নয়। খোলা মন এবং শর্ত— দু’টি একসঙ্গে চলতে পারে না। অর্থাৎ, খোলা মন নেই। নির্যাতিতা বিচার পাক— ব্যাপারটি তা নয়। এর পিছনে রাজনীতির খেলা আছে। তাই এতটা সময় লাগছে এত কিছু চিন্তা ভাবনা করতে।”
বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় জুনিয়র ডাক্তারদের ১২-১৫ জনের প্রতিনিধিদলকে ডাকা হয়েছিল নবান্নে আলোচনার জন্য। কিন্তু তাতে রাজি নন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা পাল্টা চারটি শর্ত দিয়েছেন। প্রথমত, অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদল থাকবে বৈঠকে। দ্বিতীয়ত, নবান্নে যে বৈঠক হবে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তার লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে। তৃতীয়ত, আন্দোলনকারীরা যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন আগে, সেই দাবিগুলির উপরেই বৈঠকে আলোচনা হতে হবে। চতুর্থত, নবান্নে যে বৈঠক হবে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে হবে।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে তিনটে থেকে ধর্নায় বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে সেই থেকে টানা অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। দফায় দফায় ইমেল চালাচালি হয়েছে। কখনও নবান্ন থেকে ইমেল এসেছে, বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে। কখনও পাল্টা শর্ত দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কিন্তু বৈঠক নিয়ে সমাধানসূত্র এখনও বার হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy