অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সমাজমাধ্যম।
অভিষেকের আশ্বাস, আগামী দিনে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় ৫৫ শতাংশ আসনে মেয়েদের লড়াইয়ের সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “বিজেপি মহিলা সংরক্ষণ বিল এনেছিল। সেটি লবডঙ্কা। আমাদের ২৯ জন সাংসদের মধ্যে ১২ জন মহিলা সাংসদ। পঞ্চায়েত স্তরে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করে দেখিয়েছি আমরা। এ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৫৫ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে।”
অভিষেকের বক্তব্য, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে এমন একটি ধর্ষণ বিরোধী আইন প্রয়োজন যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তিনি বলেন, “কেন্দ্র যদি এই আইন আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে প্রণয়ন না করে, তা হলে তৃণমূল দিল্লিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়বে। মানুষ রাস্তায় নামলে কেউ আটকাতে পারবে না।” তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্র যদি এই আইন না আনে, তবে প্রাইভেট মেম্বার বিলের মাধ্যমে আমি এই বিল পেশ করব। প্রত্যেক সাংসদের অধিকার রয়েছে প্রাইভেট মেম্বার বিলের মাধ্যমে সেটিকে বিল হিসাবে আইনসভায় পাশ করিয়ে আইন তৈরি করার। আমরা তা আগামী দিনে করব।”
অভিষেক বলেন, “সারদা মামলার তদন্তে ১০ বছর হয়ে গিয়েছে, এখনও চূড়ান্ত চার্জশিট জমা পড়েনি। ট্রায়াল তো ভুলে যান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল থেকে শুরু করে জ্ঞানেশ্বরীকাণ্ড— একটিরও সুরাহা হয়নি। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দু’বছর ধরে জেলে রয়েছেন, কী বিচার হয়েছে? যে মেধাযুক্তরা রাস্তায় বসে আন্দোলন করেছেন, তাঁদের কী সুরাহা হয়েছে? বিচার ব্যবস্থার একাংশকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি খালি তৃণমূলকে দুর্বল করার চেষ্টায় ইডি-সিবিআইকে ব্যবহার করেছে।”
অভিষেকের আশ্বাস, ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইনের দাবিতে আন্দোলন তৃণমূল দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যাবে। ১০০ দিনের কাজের টাকার দাবি দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলনের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। অভিষেক বলেন, “ওঁরা বলছে দাবি এক, দফা এক— মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। আমি বলছি, দাবি এক, দফা এক— ধর্ষণ বিরোধী আইন। আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেস দিল্লিতে যাবে কেন্দ্রের সরকার ধর্ষণ বিরোধী আইন আনে। রাতারাতি নোট বাতিল হতে পারে, লকডাউন করতে পারে, তা হলে ধর্ষণ বিরোধী আইন আসে না কেন? যাঁরা এই নারকীয় বর্বর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সমাজে থাকার অধিকার নেই।”
নবান্ন অভিযান প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “ইট, পাটকেল, ঢিল ছুড়ে পুলিশকে আক্রমণ করা হয়েছে। পুলিশ যে সংযমের পরিচয় দিয়েছে, তা প্রমাণ করে বাংলা উত্তরপ্রদেশ বা গুজরাট বা মণিপুর নয়।”
১৪ অগস্ট মেয়েদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচিকে সমর্থন অভিষেকের। তিনি বলেন, “আমরা সেই লড়াইকে সম্মান জানাই। যাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন বা রাস্তায় বসে প্রতিবাদ করেছিলেন, তাঁদের একটাই দাবি ছিল। ধর্ষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা এবং বিচার ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।”
মঙ্গলের নবান্ন অভিযান প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “গতকাল যাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন, কোনও ভদ্রলোককে আপনি দেখতে পাবেন না। আমরা দেখেছি, কেউ বলছেন বিএসসিতে সায়েন্স নিয়ে কমার্স পড়ছেন। কারও ২৩ বছর বয়স, বলছে স্কুলে পড়ে কিন্তু স্কুলের নাম বলতে পারছেন না। এই হল বিজেপির প্রকৃত চেহারা।”
অভিষেক বলেন, “দেশে ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন আসা উচিত কি উচিত না? এক থেকে দুই মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে দোষী সাব্যস্ত করার মতো আইন আসা প্রয়োজন কি না? যাঁরা নবান্ন অভিযান করে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করছেন, তাঁরা ক্ষমতা থাকলে দেশে ধর্ষণ বিরোধী আইন আনার জন্য নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার কাছে দাবি জানান। এদের ক্ষমতা নেই এই আইন আনার। কারণ যদি এই আইন আসে, তা হলে সবার আগে জেলে যাবেন বিজেপির লোকেরা।”
আরজি-কর কাণ্ডে বিজেপি যে ভাবে শাসকদলকে বিঁধছে এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলছে, তা নিয়ে অভিষেক বলেন, “মহিলাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও অন্যায়ের ঘটনা সবচেয়ে বেশি কোনও রাজ্যে যদি ঘটে থাকে, এনসিআরবি অনুযায়ী প্রথমেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, দ্বিতীয় মধ্যপ্রদেশ, তৃতীয় রাজস্থান, চতুর্থ মহারাষ্ট্র।” সুকান্ত মজুমদারদের উদ্দেশে অভিষেকের বার্তা, তাঁরা যেন যোগী আদিত্যনাথদের পদত্যাগ দাবি করেন।
অভিষেকের বক্তব্য দেশে ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন আসা উচিত। তাঁর প্রশ্ন, ‘১৪ অগস্ট হাই কোর্ট সিবিআইকে তদন্তভার দিয়েছেন। নেই নেই করে ১৪ দিন অতিক্রান্ত। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন সন্দীপ ঘোষ কেন সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতার হননি? কেন এই ২৪ দিন সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়নি, সিবিআইকে সেই জবাব দিতে হবে।’
তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যারা সন্দেশখালি করে, মহিলাদের মান-সম্মান-সম্ভ্রম দু’হাজার টাকার বিনিময়ে দিল্লির বুকে বিক্রি করেছেন, তাঁদের নারী সুরক্ষা নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই। যাদের আমলে হাথরস, কাঠুয়া, বদলাপুর, উন্নাও হয়েছে, সেই নারী বিরোধী বিজেপির কাছে বাংলার মানুষকে রাজনীতি করা শিখতে হবে না।”
অভিষেক বলেন, “আমরা বিশুদ্ধ লোহার মতো। সেই লোহাকে যত আঘাত করেছে, যত প্রহার করেছে, সেই লোহা তত শক্তিশালী হয়েছে। যে ঘটনায় সারা ভারতের মানুষ আজ বিচার চাইছেন, সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাঁরা রাজনীতি করছেন, যারা লাশের নোংরা রাজনীতিতে নিজেদের লিপ্ত করেছেন, বাংলার মানুষের কাছে তাঁদের প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হয়েছে।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে বক্তৃতা করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তিনি বলেন, “গতকাল বিজেপি ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছিল। আমরা ২০১১ সাল থেকে বলে আসছি, আমরা বন্ধের রাজনীতির বিরুদ্ধে। এই কর্মনাশা, সর্বনাশা বন্ধের বিরুদ্ধে আমরা। আমি বিজেপির বাংলার নেতৃত্বকে অনুরোধ করব, প্রতি ২৮ অগস্ট আমরা একটি করে বন্ধ ডাকুন। তা কী ভাবে প্রতিহত করতে হয়, বাংলার মানুষ জানে। অতীতের সব ২৮ অগস্টের সমাবেশের রেকর্ড আজ ভেঙে গিয়েছে।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে বক্তৃতা করছেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী তথা যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ। দলের ছাত্র সংগঠনকে লড়াই ও ত্যাগের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “গতকাল দেখলাম কী ভাবে ছাত্র সমাজের ভেক ধরে বিজেপির কিছু বড় নেতা, কিছু কর্মী রাস্তায় নেমে বাংলাকে কলুষিত করার চেষ্টা করলেন। তাঁরা শান্ত বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করলেন। তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবে পুলিশকে ঢিল ছুড়লেন, পুলিশের উপর চড়াও হলেন। বাংলার মানুষের বুঝতে বাকি নেই যে এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে রাখি পরালেন দেশবন্ধু কলেজের ছাত্রী তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেত্রীরা। ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যকেও রাখি পরালেন তাঁরা।
গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে পৌঁছলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গান্ধী মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন তিনি।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে বক্তৃতা করছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। রাজ্যে পড়ুয়াদের জন্য কী কী ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল সরকার, সে কথা তুলে ধরেন তিনি। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদের স্বরও উঠে আসে তাঁর গলায়। বিষয়টি যে বর্তমানে সিবিআই তদন্ত চালাচ্ছে এবং তৃণমূল যে ধর্ষণ ও খুনে দোষীর সর্বোচ্চ সাজা দাবি করছে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে বুধবার একসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজি কর-কাণ্ড ও তার পরবর্তী প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আবহে এই প্রথম এক মঞ্চে বক্তৃতা করবেন তৃণমূলের দুই প্রধান মুখ। বুধবারের মঞ্চ থেকে দলের ছাত্র শাখাকে সাংগঠনিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বার্তা দেন, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy