মণ্ডপে বই আর বই। — নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা বইমেলাতে আলাদা প্যাভিলিয়ন থাকে তো বটেই, শহরে আলাদা করেও লিটল ম্যাগাজিনের মেলা বসে। যাঁরা এই জগতের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা জানেন কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিনের সংগ্রাহক হিসাবে প্রবাদপ্রতিম ছিলেন সন্দীপ দত্ত। নিজের উদ্যোগে কলেজ স্ট্রিটের কাছে ১৮ এম টেমার লেনে তৈরি করেন লিটল ম্যাগাজিনের সংগ্রহশালা। গত মার্চে প্রয়াত হয়েছেন সন্দীপ। তবে অনুরাগীদের কলকাতা তাঁকে যে ভোলেনি তা দেখা গেল দুর্গাপুজোর আয়োজনেও। দক্ষিণ কলকাতার সন্তোষপুরের সার্ভে পার্কের পুজোর বিষয়— ‘সন্দীপ দত্ত’।
শুধু সন্দীপই নন, তাঁর প্রিয় লিটল ম্যাগাজিন এবং লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহশালাকে বিষয় করে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। ঠাকুর দেখতে ঢুকলে দেখা যাবে চারিদিকে বই আর বই। নানা সময়ের পত্রপত্রিকা। ঠিক যেমন করে সন্দীপ সাজিয়ে রাখতেন, তেমনটাই চেষ্টা করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা। বইয়ের সম্ভার নিয়ে স্বয়ং সন্দীপও উপস্থিত মণ্ডপে। তাঁর মৃত্যুর পরে লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহশালা পরিচালনার যে কমিটি তৈরি করা হয়েছে তার সদস্য পৃথ্বী বসু বলেন, ‘‘উদ্যোক্তারা লাইব্রেরিতে এসে সব দেখে গিয়েছিলেন। সেই মতোই মণ্ডপ বানিয়েছেন।’’ একই সঙ্গে পৃথ্বী বলেন, ‘‘এটা সত্যিই প্রশংসার মতো উদ্যোগ। লিটল ম্যাগাজিনের সংগ্রহ ছিল সন্দীপদার ব্রত। যবে থেকে চিনেছি, তখন থেকেই দেখছি, যা পান তা যখের ধনের মতো আগলে রাখেন।’’
টেমার লেনের যে ঘরটায় সন্দীপ বসতেন সেই ঘরটিও রয়েছে মণ্ডপে। সেখানে একটি মূর্তিও বানানো হয়েছে লিটল ম্যাগাজিনের অভিভাবক হিসাবে খ্যাত সন্দীপের। উদ্বোধনে ডাক পেয়েছিলেন সন্দীপের স্ত্রী মীরা দত্ত। উদ্বোধনের পরে প্রয়াত স্বামীর মূর্তির সঙ্গে ছবিও তোলেন তিনি। সেই ঘরটাও একেবারে টেমার লেনের মতো বই-ঠাসা লাইব্রেরি। চারিদিকে বই আর বই। তবে দর্শনার্থীদের সেই বই হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ নেই। পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম কৃষ্ণগোপাল মল্লিক বলেন, ‘‘অনেক বই আমরা কিনেছি, অনেক বই ভাড়াতেও নিয়েছি। আসলে নতুন বই দিয়ে এই মণ্ডপ বানানো যেত না। তাই পুরনো বই সংগ্রহ করতে হয়েছে। দর্শকদের বইতে হাত দেওয়ার অনুমতি নেই, কারণ তা হলে আর রক্ষা থাকবে না। তা ছাড়া, এটা তো মেলা নয়, গ্রন্থাগার। চাইলেই কি বইয়ে হাত দেওয়া যায় নাকি!’’ কৃষ্ণগোপালের দাবি, সন্দীপ যে কাজ করে গিয়েছিলেন তা নতুন প্রজন্মকে জানানোর লক্ষ্য থেকেই এই ভাবনা। একই সঙ্গে লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব প্রচারের কাজটাও হবে।
দর্শনার্থীদের হাতে হাতে বই রাখার উপায় না থাকলেও দেবীর হাতে রয়েছে। দেবীর হাতেও শূল নয়, অসুরবধ করছেন কলম দিয়ে। দেবীর চালচিত্রও বর্ণময়। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন বাংলা বর্ণ। দুর্গার মতো কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীরা সকলেই এখানে পুস্তকপাণি। সবার হাতেই বই। আসলে এটা মণ্ডপ হলেও ভাবনায় তো সন্দীপ দত্তের গ্রন্থাগার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy