প্রতিবাদী: দাবি আদায়ে পার্শ্বশিক্ষকদের অবস্থান।
সন্ধ্যা হলেই জাঁকিয়ে পড়ছে শীত, ছেঁকে ধরছে মশা। চার দিক খোলা বিক্ষোভ মঞ্চে সামান্য কম্বলে শীত কমে না। কখনও মঞ্চে উঠে পড়ে কুকুরও। তবু নিজেরা তো বটেই, কেউ কেউ আবার সন্তানকে কোলে বসিয়েও অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন। কারও ১২ দিন, তো কারও ৩৭ দিন এ ভাবেই কেটে গিয়েছে। সল্টলেকের বিকাশ ভবনের আশপাশে তাকালেই দেখা যায়, ত্রিপল টাঙানো বিভিন্ন বিক্ষোভ কিংবা অনশন-বিক্ষোভের মঞ্চগুলি। যেখানে বসে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের মতে, দাবি আদায়ে যদি হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে কৃষকেরা রাতের পর রাত দিল্লিতে অবস্থানে বসতে পারেন, তবে তাঁরাই বা পিছপা হবেন কেন?
বিকাশ ভবন থেকে একটু দূরে বেতন চালু-সহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে অনশনে বসেছেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেকগনাইজ়ড আনএডেড মাদ্রাসা টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যেরা। সেই মঞ্চেই দেখা গেল, কোচবিহারের বাসিন্দা নুর নাহার বেগম পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়েই বসে। নুর বলেন, “বাচ্চা আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না। তাই ওকে সঙ্গে নিয়েই অনশন মঞ্চে এসেছি। তবে আমি শুধু বিক্ষোভ অবস্থানই করছি। অনশন করে অসুস্থ হলে বাচ্চাকে কে দেখবে?”
নুরের কাছাকাছি অনশন-মঞ্চে শুয়ে এক জন বললেন, “মঞ্চের এক দিক খোলা থাকায় রাতে আমাদের শোয়ার জায়গায় কুকুর ঢুকে পড়ে। ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে রয়েছে মশার কামড়। কিন্তু দাবি পূরণ না হলে আমরাও অনশন ভাঙব না।” ওই সংগঠনের সভাপতি জাভেদ মিয়াঁদাদ বলেন, “প্রয়োজনে অনশনকারীদের জন্য স্যালাইনের ব্যবস্থা করেছি। দু’জন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি।”
কাছেই শিশু শিক্ষাকেন্দ্র (এসএসকে) এবং মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের (এমএসকে) শিক্ষকদের এবং পার্শ্বশিক্ষকদের বিক্ষোভ-অবস্থান মঞ্চ। এসএসকে, এমএসকে শিক্ষকদের বিক্ষোভ অবস্থান চলছে ২৭ দিন ধরে এবং পার্শ্বশিক্ষকদের বিক্ষোভ অবস্থান চলছে ৩৭ দিন ধরে।
পার্শ্বশিক্ষকদের মঞ্চে দেখা গেল, সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁরা জানালেন, রাতে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন অনেকেই। জলও কিনে খেতে হচ্ছে। শৌচালয় বলতে একটিমাত্র জৈব শৌচাগার। রাতে শিক্ষিকারা শৌচালয় যেতে ভয় পান।
উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার বাসিন্দা শিক্ষিকা মধুমিতা সেন গত কয়েক দিন ধরে আট বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই ছিলেন বিক্ষোভ মঞ্চে। মধুমিতা বলেন, “বাড়িতে ছেলেকে দেখার কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়েই ওকে সঙ্গে এনেছিলাম। কিন্তু ছেলের শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ায় ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাকে ছাড়া ছেলে একদমই থাকতে পারে না।” তিনি জানান, তাঁর মতো অনেক মা-ই ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে ছেড়ে দিনের পর দিন বিক্ষোভ-অবস্থানে বসে রয়েছেন।
জলপাইগুড়ির বাসিন্দা মালবিকা ঘোষ জানান, গত বছর শীতে তাঁরা বিকাশ ভবনের কাছে তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে ৩০ দিনেরও বেশি বিক্ষোভ দেখান। কিন্তু একটি দাবিও পূরণ হয়নি। পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর আমাদের বেতন কাঠামোর দাবি এবং স্থায়ীকরণ নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন হয়নি। এ বার আমরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই লড়ে যাচ্ছি। এ বার দাবি পূরণ না হলে উঠছি না।”
পার্শ্বশিক্ষকদের মঞ্চ থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভেসে আসে। বিক্ষোভকারীরা জানান, প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁদের উদ্বুদ্ধ করে। ওই মঞ্চের একটু দূরেই এসএকে, এমএসকে শিক্ষকেরা বসে রয়েছেন ধর্না অবস্থানে। ২৭ দিনে পড়া ওই অবস্থান বিক্ষোভে বসে থাকা পরিতোষ ঘোষাল বলেন, “ন্যূনতম বেতন কাঠামো ও পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা, কোনওটাই পূরণ হয়নি। এখন আন্দোলন চলবেই।”
যদিও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যা বাস্তবসম্মত, আমরা নিশ্চয়ই দেখব। এখন সামনে নির্বাচন। ভোটের মধ্যেই যত তাড়াতাড়ি যে বিষয়গুলি করা সম্ভব, সেগুলি করছি। ধাপে ধাপে যতটা সম্ভব করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy