Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Nabanna Abhijan

সেতু ঘিরতে কন্টেনার! পথ দেখাল কি দিল্লির কৃষক আন্দোলন

দিল্লির কৃষক আন্দোলন দেখেই কি এ দিনের কন্টেনার ব্যবহারের ভাবনা? কলকাতা পুলিশের কোনও কর্তা এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি।

কৌশল: নবান্ন অভিযান আটকাতে রাস্তার ব্যারিকেডে গার্ডরেলের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় পণ্য পরিবহণের কন্টেনারও। মঙ্গলবার, এ জে সি বসু রোডে, বিদ্যাসাগর সেতুতে ওঠার মুখে।

কৌশল: নবান্ন অভিযান আটকাতে রাস্তার ব্যারিকেডে গার্ডরেলের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় পণ্য পরিবহণের কন্টেনারও। মঙ্গলবার, এ জে সি বসু রোডে, বিদ্যাসাগর সেতুতে ওঠার মুখে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৪ ০৬:০৫
Share: Save:

প্রথমে লোহার গার্ডরেল। তার পরে বাঁশের কাঠামো। তৃতীয় স্তরে হেলমেট পরা, লাঠিধারী পুলিশকর্মীরা দাঁড়িয়ে! বিক্ষোভ বা আইন অমান্য রুখতে যে ভাবে রাস্তা আটকানোর প্রস্তুতি নেয় কলকাতা পুলিশ, সে ভাবেই চলছিল সব। হঠাৎ পুলিশের ভিড়ের মধ্যে থেকে শুরু হল পথ করে দেওয়া। পুলিশকর্মীদের কেউ কেউ ভাবলেন, কোনও বড় কর্তা হয়তো আসছেন। কিন্তু, অবাক হয়ে সকলে এর পরে দেখলেন, ধীরে ধীরে ভিড়ের মধ্যে থেকে এগিয়ে আসছে একটি ক্রেন। সেটি বয়ে আনছে জাহাজে সামগ্রী আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত লোহার কন্টেনার!

এর পরে দ্রুত হেস্টিংস মোড়, সেন্ট জর্জেস গেট-সহ নবান্নের দিকে যাওয়ার জন্য বিদ্যাসাগর সেতুতে ওঠার সব রাস্তায় বসানো হল একের পর এক এমনই কন্টেনার। মঙ্গলবার ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর নামে যে অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল, তা আর এই কন্টেনার পার করে এগোতেই পারেনি। যা দেখে বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘‘এমন জিনিস তো আগে দেখিনি! টপকাব কী ভাবে?’’ একই রকম প্রতিক্রিয়া মিলেছে পুলিশকর্মীদের মধ্যে থেকেও। উর্দিধারী এক পুলিশ অফিসারকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এ জিনিস আগেই করা হলে বহু আন্দোলনে আমাদের ভুগতে হত না।’’ তবে এমন
কন্টেনার ব্যবহার নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানে এ ভাবে কন্টেনার ব্যবহার করা হয়। যদিও এর আগে এমন কন্টেনারের ব্যবহার দেখা গিয়েছে কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনের সময়ে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ১৭ দিন ধরে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের সিংঘুতে রাস্তা অবরোধ করে বসে থাকা কৃষকেরা হঠাৎ দেখেছিলেন, কেন্দ্রের সরকার জাহাজে সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার এমন কন্টেনার বসিয়েই বন্ধ করে দিচ্ছে সীমান্তের পথ।

দিল্লির কৃষক আন্দোলন দেখেই কি এ দিনের কন্টেনার ব্যবহারের ভাবনা? কলকাতা পুলিশের কোনও কর্তা এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। তবে এক কর্তা জানান, বন্দর এলাকার একটি থানা থেকে প্রথম এই ধরনের কন্টেনার ব্যবহারের প্রস্তাব আসে। এত দিন সেই প্রস্তাব ঠান্ডা ঘরে পড়ে ছিল। সম্প্রতি পুলিশের বৈঠকে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর নামে হওয়া এই আন্দোলন ঘিরে দফায় দফায় আলোচনা হয়। সেখানেই আবার ওঠে কন্টেনার ব্যবহারের প্রসঙ্গ। রবিবার তা ব্যবহারের বিষয়ে ছাড়পত্র মেলে প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে। এর পরেই সোমবার গভীর রাতে কন্টেনার আনিয়ে রাখা শুরু হয় হেস্টিংস চত্বরে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আটটি কন্টেনারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ জন্য লালবাজার থেকে তিনটি বড় লরিও ভাড়ায় নিয়ে রাখা হয়। তাতে করেই ২০ ফুট লম্বা এবং সাড়ে আট ফুট উঁচু ছ’টি কন্টেনার হেস্টিংস চত্বরে আনিয়ে রাখা হয় সোমবার গভীর রাতে। এ দিন সকালে আরও দু’টি কন্টেনার লরিতে চাপিয়ে আনা হয় সেখানে। ভাড়ায় নেওয়া ছিল ক্রেনও। সকালের দিকে সেই ক্রেনে চাপিয়ে হেস্টিংস থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে ওঠার রাস্তাগুলির আশপাশে এনে রাখা হয় কন্টেনার। সময় মতো সেগুলিই বসানো হয়েছে লোহার গার্ডরেল এবং বাঁশের ব্যারিকেডের পরে।

এক সময়ে এই কন্টেনারের উপরে দাঁড়িয়েই পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে দেখা গিয়েছে। কন্টেনারের সমান্তরালে জলকামান বসিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে পুলিশ। কিন্তু এই ‘কন্টেনার পাঁচিল’ তৈরি করতে খরচ পড়ল কত? পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘কলকাতা পুলিশের বন্দর ডিভিশন থেকেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু শুভানুধ্যায়ী ব্যবসায়ী কন্টেনার দিয়ে সাহায্য করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE