জিৎ হাজরা
চারতলার ছাদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল তিন ভাই। দূরের একটি ঘুড়িকে কাটার পরিকল্পনাও চলছিল। দু’-এক পশলা বৃষ্টি শুরু হতেই নেমে আসার তোড়জোড় করছিল তারা। তখনই বিকট শব্দে বাজ পড়ায় হকচকিয়ে গিয়েছিল ভাইয়েরা। কোনও মতে দু’জন নেমে এলেও আর এক জন নামছে না দেখে সন্দেহ হয় বাড়ির লোকেদের। ছাদে গিয়ে তাঁরা দেখেন, অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে ওই কিশোর। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার বিশ্বকর্মা পুজোর দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বেলুড়ে। পুলিশ জানায়, ওই কিশোরের নাম জিৎ হাজরা (১৬)। সে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ছিল। ছোট ছেলের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক গোটা পরিবার। কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না প্রতিবেশীরাও। সকলের একটাই কথা, ‘‘হঠাৎ যে কী হয়ে গেল!’’
বেলুড়ের লালাবাবু সায়র রোডের বাসিন্দা সুজিত ও চন্দনা হাজরার একমাত্র সন্তান ছিল জিৎ। এ দিন বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে জেঠতুতো দাদা সুমন এবং আর এক ভাই ঋদ্ধির সঙ্গে চারতলার ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে গিয়েছিল সে। জিৎ যে ঘুড়িটি ওড়াচ্ছিল, তার লাটাই ধরে ছিল ঋদ্ধি। সে জানায়, বৃষ্টি শুরু হতেই তারা ঘুড়ি নামিয়ে আনে। সব গুছিয়ে নীচে নামার সময়েই প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ে। সঙ্গে আলোর ঝলক। ছাদে পড়ে যায় জিৎ।
ভয় পেয়ে হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে সুমন ও ঋদ্ধি। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষণ কেটে গেলেও জিৎকে নামতে না দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পরিজনেরা। তখনই ওই কিশোরের বড় জেঠু গৌতম ছুটে যান ছাদে। দেখেন, অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে জিৎ। তাকে প্রথমে বেলুড়ের শ্রমজীবী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে গোলাবাড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওই কিশোরকে মৃত বলে জানান।
কয়েক দিন আগেই হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে জিতের বাবা, পেশায় একটি স্কুলের আঁকার শিক্ষক সুজিতের। তাই তিনি ঠিক মতো হাঁটতে পারছেন না। এ দিন একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাক্যহারা হয়ে গিয়েছেন তিনি। বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন মা চন্দনাও। পরিজন থেকে প্রতিবেশীরা সকলেই বলছেন, ‘‘জিৎ ঘুড়ি ওড়াতে খুব ভালবাসত। কিন্তু আজ নিজেই হারিয়ে গেল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy