অষ্টম শ্রেণির ছাত্রটি হেঁটে গেলেই পিছন থেকে আওয়াজ দিত সহপাঠীরা। এমন ‘মেয়েলি’ ভাব কেন তার, তা নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ চলত বন্ধুদের মধ্যে। এমনকি, ক্লাসের মধ্যে শারীরিক নিগ্রহও করা হত তাকে। বয়ঃসন্ধিকালে স্কুলে এমন হেনস্থার মুখে পড়ে মরমে মরে থাকত ‘ছেলে’টি। কলেজে উঠেও পরিস্থিতির বিশেষ বদল ঘটেনি। ততদিনে নিজের নারীসত্তা নিয়ে আরও সচেতন হওয়ায় সাজপোশাকেও তা ধরা পড়ত। তাঁকে দেখে ক্লাসে হাসাহাসির মাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল।
ছেলে বা মেয়েবেলায় স্কুল-কলেজে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় প্রায় সব রূপান্তরকামীকেই। বয়ঃসন্ধিকালে বন্ধুদের এই হেনস্থা অনেক ক্ষেত্রেই জন্ম দেয় মানসিক অবসাদ, হীনম্মন্যতার। তাই এ বার ছোটদের মধ্যে রূপান্তরকামীদের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে শহরের একাধিক স্কুল-কলেজে কর্মশালার আয়োজন করতে চলেছে জাতীয় মানবাধিকার ফেডারেশন। ওই ফেডারেশনের চিফ প্যাট্রন মেঘ সায়ন্তন ঘোষের উদ্যোগে শীঘ্রই শহর ও শহরতলির একাধিক স্কুল ও কলেজে পড়ুয়াদের সচেতন করতে ওই কর্মশালা হবে। যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, হেরিটেজ স্কুল, সোনারপুরের সারদা বিদ্যাপীঠের মতো বেশ কিছু স্কুলের সঙ্গে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক কথা হয়েছে উদ্যোক্তাদের। কথা হয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও।
‘চিত্রাঙ্গদা’ নামের এই কর্মসূচিতে কী করার কথা ভাবছেন তাঁরা? দেশের প্রথম রূপান্তরকামী আইনজীবী মেঘ সায়ন্তনের মতে, রূপান্তরকামী কারা, তা নিয়ে ছোটদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন থাকে। কিন্তু তার উত্তর জানার উপায় থাকে না। কারণ, পাঠ্যবইয়ে এ নিয়ে বিশেষ কিছু লেখা থাকে না। সচেতনতার অভাবেই বয়ঃসন্ধিকালে কোনও মেয়েলি ছেলে বা পুরুষালি মেয়েকে হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে সহপাঠীদের বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, ‘‘৩৭৭ ধারা নিয়ে রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে, রূপান্তরকামীদের নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সেই কাজটা একেবারে তৃণমূল স্তর থেকেই শুরু করতে চেয়েছি।’’ তাই রূপান্তরকামী কারা এবং তাঁরা কেন এ রকম— এ সবই স্কুলের অষ্টম-নবম-দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের কাছে ব্যাখ্যা করবেন সায়ন্তন ও তাঁর সঙ্গীরা। কলেজপডুয়াদের মধ্যে সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে তাঁদের কাছে রূপান্তরকামীদের গ্রহণযোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসেও এই কর্মশালা করা হবে।
ইতিমধ্যেই এই কর্মশালা নিয়ে উদ্যোক্তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সল্টলেকের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই কলেজের কর্ণধার সুজয় বিশ্বাস বলছেন, ‘‘রূপান্তরকামীদের সম্পর্কে কলেজের পড়ুয়ারা সচেতন হলে তাঁরা বাড়িতে ছোট ভাইবোনদেরও সচেতন করতে পারবেন। ভবিষ্যতে পরিবর্তী প্রজন্মকেও এ নিয়ে শিক্ষা দিতে পারবেন তাঁরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy