একযোগে: ব়্যাগিং-বিরোধী প্রচারে স্কুলপড়ুয়ারা। মঙ্গলবার, সন্তোষপুর ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে র্যাগিংমুক্ত করার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটিকে জোরদার করা এবং অভিভাবক ও ছাত্রদের বোঝানোর মতো পদক্ষেপ। তবে সেই সব কাজ এখনও শুরু হয়নি। কিন্তু শহরের বেশ কিছু স্কুল ইতিমধ্যেই র্যাগিং এবং হেনস্থা বা বুলিং নিয়ে সচেতনতার কর্মশালা শুরু করে দিয়েছে। এমনকি, পড়ুয়াদের মন থেকে হেনস্থা ও র্যাগিংয়ের ভয় কাটানোর জন্য মঞ্চস্থ করা হল নাটকও।
স্কুলে র্যাগিং না হলেও হেনস্থার ঘটনা যে ঘটে, তার উদাহরণ রয়েছে প্রচুর। এমনটাই জানালেন শিক্ষকেরা। যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই সন্তোষপুর ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের দুই একাদশ শ্রেণির ছাত্রী জানাল, তারা অন্য স্কুল থেকে ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। ফলে সেই স্কুলের যারা বর্তমান ছাত্রী, তারা তাদের সঙ্গে প্রথমে সে ভাবে মিশত না। তারা কেন ওই স্কুলে এসেছে, এমন নানা প্রশ্ন জেরা করার মতো করে জিজ্ঞাসা করা হত বলে দাবি ওই দু’জনের। সব মিলিয়ে একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। তাই তাদের তখন স্কুলে আসতে ভাল লাগত না বলে জানিয়েছে ওই দুই ছাত্রী।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই স্কুলেই র্যাগিং ও হেনস্থা-বিরোধী কর্মশালা হয়। সেখানে শুধু আলোচনাই নয়, যাদবপুর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নার্সরা র্যাগিং ও হেনস্থা-বিরোধী নাটকও মঞ্চস্থ করেন। যা দেখে স্কুলপড়ুয়ারা জানায়, হেনস্থা বলতে কোন আচরণকে বোঝায়, তা নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা ছিল না তাদের। ফলে অনেক সময়ে অজানতেই কেউ হয়তো হেনস্থা করে ফেলত অন্য কাউকে। এ বার থেকে তারা সচেতন থাকবে বলে জানায় পড়ুয়ারা। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সর্বাণী সেন বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা শুধু স্কুলে নয়, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছেও হেনস্থার শিকার হতে পারে। তাই শুধু পড়ুয়াদের নয়, সচেতন করা হচ্ছে অভিভাবকদেরও। আমাদের স্কুলে হেনস্থার ঘটনা তো ঘটেছেই। এ দিনের এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক পড়ুয়া মন দিয়ে নাটক দেখেছে। এখন তারা এ নিয়ে অনেক বেশি সচেতন।’’
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলের পাশেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে। আমরা কিন্তু এ নিয়ে খুবই সচেতন। স্কুলে র্যাগিং না হলেও বুলিং হয়। করোনার পরে বাচ্চাদের স্বভাব অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। খুব জেদি হয়ে গিয়েছে অনেকে। জোর করে মতামত চাপাতে চায় অন্য কোনও পড়ুয়ার উপরে। মতের মিল না হলে মারপিটও হচ্ছে কখনও কখনও। তাই আমাদের স্কুলে হেনস্থা-বিরোধী সচেতনতামূলক কর্মশালায় অভিভাবকদেরও ডাকা হয়েছে।’’ পার্থপ্রতিম জানান, ওই সব সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান নিয়ে অভিভাবকেরা খুবই খুশি। তাঁরা অনেকেই জানিয়েছেন, এ নিয়ে এ বার থেকে তাঁরা আরও বেশি সতর্ক থাকবেন।
বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে র্যাগিংয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ কখনও ওঠেনি। তবে নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের আচরণবিধির কথা বলে দেন। যাদবপুরের ঘটনার পরে আমরা আরও সতর্ক। মেয়েরা নিজেদের মধ্যে হাসি-মজা করতে পারে। কিন্তু তা কত দূর পর্যন্ত করলে অন্যের মনে আঘাত লাগবে না, সেটা বার বার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
বেহালা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস বেরা বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা একসঙ্গে পড়ে। ফলে অনেক বেশি সতর্ক হয়েছি। অভিযোগ শুনলে প্রথমে বার বার বোঝানো হচ্ছে। না বুঝলে এবং ফের একই কাজ করলে অভিভাবকদের ডেকে অন্য স্কুলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এতেই তাঁরা অনেক বেশি সতর্ক হয়ে যাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy