Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Lee Road Murder Case

উত্তর মেলেনি বহু প্রশ্নের, শান্তিলালের খুনি অধরাই

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনিকে ধরতে এ রাজ্যের পাশাপাশি ভিন্ রাজ্যের নানা শহরও চষে ফেলা হচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৪৫
Share: Save:

ঘটনার পাঁচ দিন পরেও ভবানীপুরের ‘হাই-প্রোফাইল’ খুনের কিনারা করতে পারল না পুলিশ। ধরা গেল না খুনিকেও। সেই সঙ্গে এখনও পর্যন্ত উত্তর মিলল না একাধিক প্রশ্নের। গত পাঁচ দিনে তদন্ত কোন পথে এগিয়েছে, তা নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। একাধিক সূত্রে যা জানা যাচ্ছে, তা কতটা সত্যি, সে ব্যাপারেও পুলিশকর্তাদের স্পষ্ট উত্তর মিলছে না। তাই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটের একটি অতিথিশালায় শান্তিলাল বেদ নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনার কথা সামনে আসে। জানা যায়, ওই অতিথিশালায় তিনি এক যুবকের সঙ্গে উঠেছিলেন। সেখানে শান্তিলালকে নিজের ‘আঙ্কল’ বলে পরিচয় দিয়েছিল ওই যুবক। পুলিশের অনুমান, ওই যুবকই শান্তিলালের খুনি। ওই ব্যবসায়ীকে খুন করার পরে তাঁর পরিবারকে ফোন করে সে বলেছিল, ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ গেটের কাছে এসে ২৫ লক্ষ টাকা দিলে শান্তিলালকে ছেড়ে দেওয়া হবে। টাকা না দিলে শান্তিলালের কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিয়ো ভাইরাল করে দেওয়ারও হুমকি দেয় সে। আর এখানেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ জানা গিয়েছে, শান্তিলাল কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার পরিচিত। ২৫ লক্ষ টাকা পেলে বাবাকে ছাড়া হবে, এমন ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শান্তিলালের ছেলে ওই পুলিশকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন বলে খবর। ওই পুলিশকর্তার নির্দেশেই এর পরে গুন্ডা দমন শাখার বিশেষ বাহিনী টাকা নিয়ে শান্তিলালের পরিবারকে অকুস্থলে যেতে বলে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে যে অভিযুক্ত টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে, তা বুঝতে পারেননি পুলিশ। সেই সঙ্গে পুলিশের কেউ ভাবতেই পারেননি, শান্তিলাল ইতিমধ্যেই খুন হয়ে গিয়েছেন। নানা মহলে তাই প্রশ্ন উঠেছে, আগাম জানা সত্ত্বেও পুলিশ অভিযুক্তকে হাতেনাতে ধরতে পারল না কেন? এ-ও প্রশ্ন উঠেছে, একাধিক প্রমাণ রেখে অপরাধ সংঘটিত করে যে পালিয়ে গেল, তাকে কেনই বা এত দিন পরেও ধরা গেল না?

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনিকে ধরতে এ রাজ্যের পাশাপাশি ভিন্ রাজ্যের নানা শহরও চষে ফেলা হচ্ছে। শান্তিলাল যেখানে খুন হয়েছেন, সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি একাধিক বার ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, সেখানেই জানা গিয়েছে, সন্দেহভাজন যুবকের যোগ রয়েছে দিল্লি ও হরিয়ানার সঙ্গে। তার বয়স আনুমানিক ২৮ বছর। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফেলা সেই যুবকের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে। নানা ‘ডেটিং’ অ্যাপেও তার অবাধ যাতায়াত। ওই ধরনের একটি অ্যাপের সূত্রেই শান্তিলালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গত দেড়-দু’বছরে সে একাধিক বার কলকাতায় এসেছে। প্রতিবারই উঠেছে শান্তিলালের বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে শম্ভুনাথ স্ট্রিটের ওই অতিথিশালায়। জানা গিয়েছে, সেখানে প্রায়ই সময় কাটাতে যেতেন শান্তিলাল।

অতিথিশালার ঘর থেকে তদন্তকারীরা যে নমুনা সংগ্রহ করেছেন, তা থেকে তাঁদের অনুমান, সম্পর্কের কোনও সমীকরণ বা দীর্ঘ দিনের কোনও আশ্বাস পূরণ না হওয়ার কারণেও এই খুন হয়ে থাকতে পারে। যদিও খুনের ঘটনার এত দিন পরেও এ নিয়ে স্পষ্ট উত্তর দিতে পারছেন কোনও পুলিশকর্তা।

শান্তিলালের পরিবার যে টাকা অভিযুক্তকে দিয়েছিল, তার ব্যবস্থা কী ভাবে করা হয়েছিল, তা নিয়েও
জল্পনা চলছে। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, ওই যুবককে ধরার জন্য ফাঁদ পাততে পুলিশই সেই টাকার ব্যবস্থা করেছিল। তদন্তকারী দলে থাকা এক পুলিশকর্মীর দাবি, প্রথমে এটা অপহরণের ঘটনা বলেই মনে করা হয়েছিল। এমন বিভিন্ন ঘটনায় অতীতের কোনও অভিযান থেকে উদ্ধার হওয়া নোট দিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। অপরাধী ধরা পড়লেই সেই টাকা ফেরত চলে আসে। এই ঘটনায় খুনিকে ধরার পাশাপাশি ওই নোট উদ্ধার করাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবারও এ ব্যাপারে প্রশ্ন করে উত্তর মেলেনি গোয়েন্দাকর্তা বা গুন্ডা দমন শাখার কাছ থেকে। লালবাজারের এক কর্তা শুধু জানিয়েছেন, তদন্ত প্রায় গুটিয়ে আনা গিয়েছে। অপরাধীর ধরা পড়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

অন্য বিষয়গুলি:

Lee Road Murder Case Lalbazar Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy