রহস্য: মেজ়েনাইন ফ্লোরের দরজা কেন ভিতর থেকে বন্ধ ছিল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সোমবার, কাঁকুলিয়ায়। ছবি: সুমন বল্লভ
খাস কলকাতায় আততায়ীর শিকার এক কর্পোরেট কর্তা ও তাঁর গাড়িচালক। কিন্তু কেন এবং কার হাতে খুন হলেন তাঁরা? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্তকারীদের মনে। খুনের পিছনে সম্ভাব্য নানা কারণ উঠে এলেও এখনও পর্যন্ত সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার তদন্তভার ইতিমধ্যেই লালবাজারের হোমিসাইড শাখার হাতে দেওয়া হয়েছে। তারা কাজে নেমে পড়লেও খুনিরা এখনও অধরা।
রবিবার রাতে গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়া রোডের তিনতলা বাড়িতে খুন হন একটি বেসরকারি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর চাকী (৬১) ও তাঁর গাড়িচালক রবীন মণ্ডল (৬৫)। তাঁদের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের একাধিক ক্ষত মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের সামনে যে তথ্যগুলি উঠে এসেছে, তা হল: ওই বাড়িতে সুবীরবাবু বা তাঁর পরিবারের সদস্যেরা থাকতেন না। তিনি বাড়ি বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। রবিবার ঠিক কী কাজে তিনি এসেছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। যদিও এই ঘটনার সঙ্গে বাড়ি বিক্রি, দালাল-চক্র এবং প্রোমোটিং-চক্রের যোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।
তাঁরা জানিয়েছেন, নিহতদের শরীরে আঘাতের সংখ্যা এবং কোপানোর ধরন দেখে মনে করা হচ্ছে, এটি পেশাদার খুনির কাজ নয়। সেই সঙ্গে দোতলা থেকে সুবীরবাবুর এবং তিনতলা থেকে রবীনবাবুর দেহ উদ্ধার হওয়ায় পুলিশের ধারণা, তাঁরা এক জায়গায় না থাকলেও সাক্ষ্য লোপাটের জন্যই রবীনবাবুকে খুন করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খুনিরা নিহতদের পূর্ব-পরিচিত কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
এই ঘটনার সঙ্গে কি দালাল বা প্রোমোটার-চক্রের যোগ রয়েছে? তা যদি হয়, তা হলে বাড়ির মালিককে মেরে ফেলে তাদের কী লাভ, সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তকারীদের একাংশের সন্দেহ, খুনের সঙ্গে যদি বাড়ি বিক্রির যোগ থাকে, তা হলে সুবীরবাবুর কোনও নিকটাত্মীয়ও এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় তিন কাঠা জমির উপরে ওই তিনতলা বাড়ি। যার বর্তমান বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা। ওই বাড়ি ভেঙে প্রোমোটিং করলে প্রচুর লাভেরও সম্ভাবনা রয়েছে। বাড়ি বিক্রির জন্য একাধিক লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সুবীরবাবু। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, বাড়ি বিক্রি সংক্রান্ত কাজেই রবিবার কাঁকুলিয়া রোডে এসেছিলেন তিনি। একটি সূত্রের দাবি, রবিবার ওই বাড়ি থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ পাওয়া গিয়েছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ এ-ও জেনেছে, সুবীরবাবুর বদলে তাঁর গাড়িচালকই সম্ভাব্য ক্রেতা বা দালালদের বাড়ি দেখাতেন।
সোমবার গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরা ঘটনাস্থলে যান। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন তাঁরা। ওই বাড়িতে কোন কোন জায়গা দিয়ে ঢোকা এবং বেরোনো যায়, তা-ও দেখা হয়। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। সুবীরবাবুর ফোনের কল লিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর ফোনটি উদ্ধার হয়েছে কি না, তা জানায়নি পুলিশ। একটি সূত্রের দাবি, সেটি আততায়ীরা নিয়ে গিয়েছে। এ দিন ফরেন্সিক বিভাগের আধিকারিকেরাও ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন।
ওই বাড়ির একতলা একটি বেসরকারি সংস্থাকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মেজ়েনাইন ফ্লোরেও ওই সংস্থার কম্পিউটার রুম রয়েছে। রবিবার অফিস বন্ধ থাকলেও মেজ়েনাইন ফ্লোরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, খাবার খাওয়ার তিন-চার ঘণ্টা পরে খুন হন ওই দু’জন। সেই হিসেবে সুবীরবাবু কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে ঢোকার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে খুন হন। তাঁর গাড়ি থেকে একাধিক খাবারের প্যাকেট মিলেছে। তা থেকে পুলিশের সন্দেহ, কাজ মিটিয়ে দ্রুত নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, ওই খাবার কোনও অতিথির জন্য আনা হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy