জমায়েত: অনশন মঞ্চ ঘিরে বিক্ষোভরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সোমবার, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
একের পর এক বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু সমাধানসূত্র অধরা। যার ফল, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অচলাবস্থার পরিবর্তন নেই। আর সেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। জরুরি বিভাগ থেকে বহির্বিভাগ— সর্বত্র ভিড় উপচে পড়লেও চিকিৎসক নেই। একই অবস্থা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রেও। সব মিলিয়ে শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মেডিক্যাল কলেজ নিজেই এখন ‘আইসিইউ’-তে!
পুজোর ছুটির পরে সোমবার ছিল পুরোদমে পরিষেবা চালুর দিন। কিন্তু পড়ুয়া-চিকিৎসকদের একাংশের বিক্ষোভ, অনশনের জেরে ধাক্কা খেয়েছে পরিষেবা। সূত্রের খবর, রবিবার ১০৮৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। যা আগের সপ্তাহের ওই দিনের থেকে প্রায় ৫০০ জন কম। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সোমবার মেন্টর কমিটি, হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও সুপারের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। আজ, মঙ্গলবার ৩৮টি বিভাগের প্রধান চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।
আর জি করে সিনিয়র রেসিডেন্ট, আরএমও-সহ মোট কত জন চিকিৎসক আছেন, এ দিনের বৈঠকে জানতে চান স্বাস্থ্যসচিব। কর্তৃপক্ষ জানান, মোট ৫০০ জন রয়েছেন। স্বাস্থ্যসচিব জানিয়েছেন, পরিস্থিতি দেখে সকলের ছুটি বাতিল করে রোগী পরিষেবা সচল রাখতে হবে। সব বিভাগের চিকিৎসকদের উপস্থিতির দৈনিক তথ্য পাঠাতে হবে স্বাস্থ্য ভবনে। ইন্টার্নেরা যে
দিন থেকে কাজ বন্ধ রেখেছেন এবং যত দিন রাখবেন, সব ক’টি দিনে তাঁদের অনুপস্থিত দেখানো হবে। এর ফলে ইন্টার্নশিপের মেয়াদ বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষক-চিকিৎসকেরা।
যদিও অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে এখনও অনড় বিক্ষোভকারীদের একাংশ। গত ১৫ অক্টোবর থেকে ইন্টার্নেরা কর্মবিরতির ডাক দিয়ে সুপারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে দেখে পাঁচ চিকিৎসককে নিয়ে মেন্টর কমিটি গড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। রবিবার বিক্ষোভকারীদের ছ’জন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন কমিটির পাঁচ সদস্য এবং সাংসদ, বিধায়কেরা। তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এক বিক্ষোভকারীর কথায়, “আমরা সরকার বিরোধী নই। কিন্তু অধ্যক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, ভরসা করা যাচ্ছে না। তাই তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চলবে।”
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, যে মেন্টর কমিটি তৈরি করা হয়েছে তাঁদের সঙ্গে অধ্যক্ষের মতানৈক্য হলে শেষ পর্যন্ত কোন মতামত গুরুত্ব পাবে, তা অনিশ্চিত। তাঁদের আরও প্রশ্ন, অধ্যক্ষের মতামতকেই যদি মেন্টর কমিটি পড়ুয়াদের উপরে চাপিয়ে দেয়, তা হলে কার কাছে অভিযোগ জানানো হবে? পড়ুয়াদের কথায়, “কথা ও কাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য, তাই বিশ্বাস হারিয়েছি। আর অধ্যক্ষ পুনরায় ফিরে স্বমূর্তি ধারণ করলে আরও সমস্যা বাড়বে।’’ এ দিন হাসপাতালে যাননি অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, “আমার পদত্যাগের মতো তুচ্ছ দাবিকে রেখে রোগী-স্বার্থ বিরোধী কাজ অনুচিত। সরকার যত দিন রাখবে, আমায় থাকতে হবে। বললে নিশ্চয়ই চলে যাব।”
বাইরের দুই চিকিৎসক এই আন্দোলনে ইন্ধন জোগাচ্ছেন বলে দাবি করে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন জনৈক রাজীব চৌধুরী। তবে তাঁর পরিচয় কী, সেটা কেউ জানাতে পারেননি। অন্য দিকে ওই দুই চিকিৎসকের এক জন
কৌশিক চাকীর দাবি, “ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় আছি। কিসের অভিযোগ, কী বিষয়ে, জানি না। তাই কিছু বলতে পারব না।’’ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের সমন্বয় নেই। রোগীর মৃত্যুর শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ হিসাবে কী লিখতে হবে, সেই বিষয়ে যে সরকার ডাক্তারদের নির্দেশ পাঠায়, তাদের এই সব আন্দোলন নিয়ে মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy