Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata

স্মৃতি উস্কে ‘করোনা ছাড়েই’ শুরু চৈত্র সেল!

শহরের ফাঁকা ফুটপাতে গত বছরের চৈত্র সেল ছিল আক্ষরিক অর্থেই স্মৃতি। ভরা লকডাউনে বিক্রিবাটা হয়নি। কিন্তু এ বারের বেপরোয়া বাজার-চিত্র নতুন ভয় উস্কে দিল চৈত্র সেল শুরুর প্রথম কয়েক দিনেই।

মানে না মানা: বাংলা বছর শেষ হয়ে এলেও করোনা কিন্তু শেষ হয়নি।  তার মধ্যেই করোনা-বিধি উড়িয়ে চলছে চৈত্র সেলের দেদার কেনাকাটা। অনেকেই মাস্কহীন।

মানে না মানা: বাংলা বছর শেষ হয়ে এলেও করোনা কিন্তু শেষ হয়নি। তার মধ্যেই করোনা-বিধি উড়িয়ে চলছে চৈত্র সেলের দেদার কেনাকাটা। অনেকেই মাস্কহীন। সুমন বল্লভ

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২১ ০৫:৫১
Share: Save:

শহরের ফাঁকা ফুটপাতে গত বছরের চৈত্র সেল ছিল আক্ষরিক অর্থেই স্মৃতি। ভরা লকডাউনে বিক্রিবাটা হয়নি। কিন্তু এ বারের বেপরোয়া বাজার-চিত্র নতুন ভয় উস্কে দিল চৈত্র সেল শুরুর প্রথম কয়েক দিনেই। অভিযোগ, প্রায় সর্বত্রই মাস্কহীন ক্রেতা-বিক্রেতার গাদাগাদি ভিড়। নেই দূরত্ব-বিধি মানার ন্যূনতম চেষ্টা। এর মধ্যেই হাতিবাগান বাজারে এক বিক্রেতার মুখে শোনা গেল, ‘করোনা সেল’-এর চিৎকার। বললেন, ‘‘গত বারের চৈত্র সেলের বাজার করোনা খেয়ে নিয়েছে। তাই এ বার আমরাই করোনা সেল দেব বলে ঠিক করেছি। এই স্লোগান কিন্তু প্রচুর লোক টানছে।’’

কিন্তু মাস্ক কই? বিক্রেতার উত্তর, ‘‘মাস্ক পরে থাকলে গলার আওয়াজ ক্রেতার কান পর্যন্ত পৌঁছয় না। তা ছাড়া, করোনা হওয়ার হলে হবে। হিসেব করে দেখেছি, মাস্ক পরা বিক্রেতার ব্যবসা ভাল হয় না।’’

সচেতন নাগরিক থেকে চিকিৎসকদের বড় অংশ যদিও মনে করছেন, এই যুক্তিহীন ও বেপরোয়া মনোভাবের জেরেই গত কয়েক দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শহরের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। যা চলতে থাকলে দিন কয়েকের মধ্যেই গত বছরের মতো পরিস্থিতি হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ছাড়ের টানে এই বেপরোয়া কেনাকাটা আবার না হাসপাতালের সেই দুঃসহ স্মৃতি ফিরিয়ে আনে!’’

বুধবার দুপুর তিনটের পরে চৈত্র সেলের ভিড় এতটাই বাড়ে যে, গড়িয়াহাট মোড়ে বাড়তি পুলিশকর্মী নামাতে হয় সেই ভিড় সামলাতে। সেখানে দেখা গেল, হকারের সঙ্গে দরাদরিতে ব্যস্ত একই পরিবারের মাস্কহীন চার জন। মাস্ক কোথায় জানতে চাওয়ায় তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘জোর করে করোনা হবে বলে খবর ছড়ানো হচ্ছে। কেউ তো আক্রান্ত হচ্ছেন বলে শুনছি না।’’ তাঁর পাশে দাঁড়ানো বিক্রেতা আবার বললেন, ‘‘করোনা হচ্ছে ঠিকই, তবে তা ছাড়ের বাজারে নয়। ভোটের ভিড়ে।’’ গাদাগাদি ভিড়ের মধ্যে দিয়েই রাস্তা করে কোলের শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে ব্যস্ত শ্যামলী দত্তবণিক নামে এক মহিলা আবার বললেন, ‘‘ক’দিন তো শুনছি, করোনায় কেউ মারা যাচ্ছেন না। তা শুনেই মাস্ক পরার অভ্যাস চলে গিয়েছে।’’

নিউ মার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীদের যদিও দাবি, গত শনি এবং রবিবার ভিড় হলেও এ দিন তেমন ভিড় হয়নি চৈত্রের বাজারে। সেখানেই কেনায় ব্যস্ত মাস্কহীন কলেজপড়ুয়া স্নেহা গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘মাস্কের খোঁজ এখন কেউ রাখে না। দিন দু’য়েকের মধ্যে লকডাউনের বর্ষপূর্তি শুনছি, তাই এত খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’’ থুতনির কাছে মাস্ক নামিয়ে ঘুরতে থাকা মাঝবয়সি সুমিতা ঘোষের কথায়, ‘‘আর ভয় পাই না। প্রথম দফায় এক বার করোনা হয়ে গিয়েছে। জেনে গিয়েছি, এই ভাইরাসের দৌড় কত দূর। তাই এখন নমো নমো করেই
মাস্ক পরি।’’

সব দেখেশুনে চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, ‘‘যাঁরা পরিবারের সদস্যকে হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন, এই ভাইরাস কত ভয়ঙ্কর।
আর নতুন করে কাউকে যদি এটা বোঝাতে হয়, তা হলে কিছু বলার নেই। কয়েক দিন আগেও যেখানে নামমাত্র রোগী ভর্তি হচ্ছিলেন সরকারি হাসপাতালে, বুধবার দেখলাম সেখানে নতুন করে ১১ জন ভর্তি হয়েছেন। এমন চলতে থাকলে কিন্তু খুব চিন্তার।’’ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী আবার নিজেই একটি বাজার এলাকার ভিড়ের ভিডিয়ো দেখিয়ে বললেন, ‘‘আসলে মানুষ কতটা জ্ঞানপাপী, তা এই ভিড়ের ছবি দেখলেই বোঝা যায়। মারণ ভাইরাস জীবনের একটা বছর কেড়ে নেওয়ার পরেও অনেকের হুঁশ নেই। সতর্ক না হওয়ার মূল্য যে কী হতে পারে, তা ফের হয়তো আমরা বুঝতে চলেছি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই।’’

হাতিবাগান বাজারে উপস্থিত তমাল সরকার নামে এক ক্রেতার যদিও মন্তব্য, ‘‘একটা বছর শেষ হয়ে গিয়েছে। গত বার চৈত্রের কেনাকাটা করতে পারিনি বলেই তো এ বার দ্বিগুণ উৎসাহে বাজার করতে এসেছি।’’ হিন্দি ছবির সংলাপ আউড়ে বললেন, ‘‘আল ইজ় ওয়েল..!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Chaitra Sale
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE