উৎসাহ: স্কুল খোলার আগের দিন সরস্বতী প্রতিমা নিয়ে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। বুধবার, কুমোরটুলিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
সপ্তাহখানেক আগেও ফাঁকা ছিল গোটা কুমোরটুলি চত্বর। সরস্বতী প্রতিমার জন্য বায়না আসা তো দূর অস্ত্, যে ক’টি প্রতিমা আগেভাগে তৈরি করে রাখা হয়েছিল, সেগুলি আদৌ বিক্রি হবে কি না, সেই সংশয়ে ভুগছিলেন মৃৎশিল্পীরা। তবে ওমিক্রনের দাপট কিছুটা কম হওয়ায় এবং মুখ্যমন্ত্রীর স্কুল খোলার ঘোষণায় সরস্বতী পুজোর দু’দিন আগে কিছুটা হলেও ‘মরা গাঙে’ জোয়ার এসেছে শহরের কুমোরপাড়ায়। স্লগ ওভারে চার-ছক্কায় তাই কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন শিল্পীরা।
করোনার দাপটে বন্ধ থাকার পরে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ফের তালা খুলছে স্কুলের। নয়া নির্দেশিকায় আপাতত অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, স্কুলে স্কুলে সরস্বতী পুজো করা যাবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘৩ তারিখ স্কুল খুললে ছেলেমেয়েরা পুজোটা করতে পারবে।’’ সেই ঘোষণার পরেই দ্বিধা কাটিয়ে স্কুলে স্কুলে শুরু হয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। সেই সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে কুমোরটুলিতেও।
যদিও মাসখানেকের আগেও কুমোরটুলির ছবিটা ছিল পুরোপুরি উল্টো। প্রতিমার বায়না প্রায় ছিলই না। প্রতিমা তৈরি করে রাখলে তা ঘরেই পড়ে থাকবে কি না, সেই চিন্তা ছিলই। প্রতিমা তৈরি করতে কুমোরটুলিতে আসা বহু কারিগর করোনার ভয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে আদৌ পুজো হবে কি না, তা-ও বুঝতে পারছিলেন না মৃৎশিল্পীদের একাংশ। তবে গত দু’সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের দাপট কিছুটা কম থাকায় আস্তে আস্তে বিধিনিষেধ শিথিল করার পথে হেঁটেছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে খুলছে স্কুল-কলেজের দরজা। আর তাই পুজোর আগের চেনা ভিড় ফিরেছে কুমোরটুলিতে।
শেষ মুহূর্তে এখন আর বায়না নয়, সরাসরি প্রতিমা কিনতে কুমোরপাড়ায় ভিড় জমাচ্ছেন শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বুধবার সেখানে প্রতিমা কিনতে আসা শিক্ষিকা সংযুক্তা ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘এত দিন ওমিক্রনের দাপটে আদৌ পুজো করা যাবে কি না, সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। তবে স্কুল খুলে যাওয়ায় সেই বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এ বার তাই সরাসরি প্রতিমা পছন্দ করে কিনেই স্কুলে পুজো হবে।’’
কুমোরটুলির একাধিক শিল্পীও জানাচ্ছেন, এ বার সরাসরি প্রতিমা কেনারই ঝোঁক বেশি। এ ছাড়া শেষ বেলায় বাড়ির পুজোর জন্য ছাঁচের প্রতিমার চাহিদাও রয়েছে। ছাঁচের প্রতিমার দাম মোটামুটি শুরু ৬০০ টাকা থেকে। তবে কাঠামো তৈরি প্রতিমার দাম শুরু হচ্ছে আড়াই-তিন হাজার টাকা থেকে।
কুমোরটুলির প্রতিমাশিল্পী মিন্টু পালের কথায়, ‘‘সপ্তাহ তিনেক আগেও যা অবস্থা ছিল, তৈরি করে রাখা প্রতিমার কী হবে তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল। তবে স্কুল খোলায় একটু ভরসা পেয়েছি। আশা করছি, যা প্রতিমা বানিয়েছি, সেগুলি একটু কম দামে হলেও বিক্রি হবে।’’ মৃৎশিল্পী বিশ্বনাথ পালও বলছেন, ‘‘ভালয় ভালয় এ বছর যা প্রতিমা বানিয়েছি, সেগুলি বিক্রি হলে বাঁচি। মোটামুটি প্রতিমা তৈরির খরচটুকু উঠলেই হবে। আগে তো কেউই আসছিলেন না, শেষ দু’দিনে তা-ও কিছুটা বিক্রিবাটা হচ্ছে।’’
তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা কুমোরটুলির শিল্পীদের মুখে হাসি ফোটালেও চিন্তায় রাখছে আলিপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস।
শেষ দিনের বাজার বৃষ্টিতে পণ্ড হবে না তো, সেই আশঙ্কায় এখন ভুগছেন শিল্পীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy