Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Kolkatar Korcha

কলকাতার কড়চা: দুই মনের সংযোগের সুর

কলাভবনকে কেন্দ্রে রেখে অগ্রজ রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে রচিত হয়েছিল নন্দলাল বসু-বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়-রামকিঙ্কর বেইজের বলয়, অন্য দিকে বিষ্ণু দে-কে আবর্ত করে যামিনী রায়-গোপাল ঘোষ-নীরদ মজুমদারদের বৃত্ত।

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১৮
Share: Save:

যে কোনও শিল্প-সাহিত্য আসলে সংযোগের কথা বলে। কিন্তু এই সংযোগ কার সঙ্গে? হৃদয়ের সঙ্গে। একটি হৃদয়ের সঙ্গে আরও এক হৃদয়ের সংযোগ। লেখকের সঙ্গে পাঠকের, শিল্পীর সঙ্গে শিল্পরসিকের, গায়কের সঙ্গে শ্রোতার। এ যদি হয় এক রকমের সেতু, এর পাশেই আরও এক যোগাযোগের সেতু দেখতে পেয়েছি আমরা একদা— দুই সৃষ্টিশীল মানুষের অন্তরের সংযোগ, তাঁদের ভিতর বোধের আদানপ্রদান। শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমেই এই চলাচল লক্ষ করা যেত, আমাদের বঙ্গীয় সাংস্কৃতিক পরিসরে যামিনী রায়-বিষ্ণু দে’র মননের সংযোগ ইতিহাসের সেই গৌরবময় চালচিত্রই মনে করায়।

রবীন্দ্র-পরবর্তী কালে যেমন অন্যতম এক প্রধান কবি হয়ে উঠেন বিষ্ণু দে, তেমনই পূর্ব ও উত্তর কালের এই দুই কবিমানসের ভুবনে এক আশ্চর্য যোগের আভাস পাওয়া যায়। কলাভবনকে কেন্দ্রে রেখে অগ্রজ রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে রচিত হয়েছিল নন্দলাল বসু-বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়-রামকিঙ্কর বেইজের বলয়, অন্য দিকে বিষ্ণু দে-কে আবর্ত করে যামিনী রায়-গোপাল ঘোষ-নীরদ মজুমদারদের বৃত্ত। শুধু তা-ই নয়, মধ্য-ষাট পেরোনোর পর রবীন্দ্রনাথ চিত্ররচনায় নিজেকে নিযুক্ত করছেন, আর সারা জীবনে আড়াই হাজারেরও বেশি ছবি এঁকে ভারতীয় চিত্রকলাকে নতুন ভাষা দিচ্ছেন, অন্য দিকে মাত্র মধ্য-ত্রিশ বয়সে, ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৯ এই সময়কালে কবি বিষ্ণু দে-ও রং-তুলির সাম্রাজ্যে মগ্ন হচ্ছেন।

যামিনী রায়-বিষ্ণু দে

যামিনী রায়-বিষ্ণু দে

পূর্ব ও উত্তরকালের এই সাদৃশ্যে কোনও তুলনারেখা টানা যায় না, কারণ সারা জীবনে উত্তরকালের কবির মোট ছবির সংখ্যা সত্তরের কিছু বেশি। আর তাঁর তাড়নায় ছিল এমন ভাবনা: “ছবিকে বুঝতে হলে ছবির ভাষা জানতে হবে। এবং সেই ভাষা জানবার একমাত্র উপায় হল হাতেনাতে রঙ তুলি দিয়ে কাজ করা।” যে কাজ দেখে যামিনী রায়ের মনে হয়েছিল, “সবাই ছবি আঁকতে পারে। আর আপনি যেভাবে আঁকবেন সেভাবে তো আর কেউ আঁকবে না।” এখানে যামিনী রায় বিষ্ণু দে-র কবিসত্তাটিকে যেন ছুঁয়ে যান, কারণ তিনিই তো প্রথম রবীন্দ্রনাথের চিত্রসত্তাটিকেও অনুভব করতে পেরেছিলেন। বিষ্ণু দে-ও নিবিড় ভাবে স্পর্শ করতে পেরেছিলেন যামিনী রায়ের পৃথিবীকে। সারা জীবন তাঁকে নিয়ে অজস্র রচনায়, উভয়ের চিঠিপত্রে হীরকদ্যুতির আলোয় সেই সব চিন্তাভাবনা জেগে রয়েছে আজও।

যামিনী রায়-বিষ্ণু দে’র (মাঝের ছবিতে দু’জনে) সেই সংযোগের সুরটি কলকাতা চাক্ষুষ করবে ‘দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাস’ আয়োজিত ‘যামিনী রায়ের চিত্রপ্রদর্শনী’তে। শুরু আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। দেখা যাবে যামিনী রায়ের আঁকা মোট ৮৩টি ছবি (উপরে তারই কয়েকটি), যে সব শিল্পকাজ কবি বিষ্ণু দে-কে উপহার দিয়েছিলেন তিনি— এত কাল অতি যত্নে রক্ষিত ছিল কবির পরিবারে। রবিবার ও ১০-১৬ অক্টোবর পুজোর ছুটি বাদে প্রদর্শনী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত, প্রতিদিন দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা।

বনফুল ১২৫

নজর-এড়ানো মানুষের কথা উঠে আসত তাঁর সাহিত্যে, সাধারণ মানুষের অতি সাধারণ জীবনযাপন অনন্য হয়ে উঠত কলমে। বনফুল— বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (ছবি) চিকিৎসক ছিলেন বলেই বোধহয় নিস্পৃহ কৌণিকতায় বেদনাময় আখ্যানকেও সপ্রাণ বাতাবরণে মুড়ে দিতে পারতেন, বিশেষত ছোটগল্পে। রবীন্দ্রনাথ বলতেন, তাঁর লেখার উপরি পাওনা ‘ডাক্তারি রস’। তাঁর জন্মের ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁর গল্প আর দিনলিপি প্রসঙ্গে শ্রাবণী পাল ও প্রিয়ব্রত ঘোষালের আলোচনা ঋদ্ধ করল শ্রোতাদের— গত ১৯ সেপ্টেম্বর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অশ্বিনী দত্ত রোডের বাড়িতে এক আয়োজনে। উঠে এল বনফুলের আখ্যান অবলম্বনে তৈরি চলচ্চিত্রের আলোচনাও; বনফুলের নাটক পড়ে শোনালেন শুভঙ্কর রায়। সূত্রধর প্রকাশনা সংস্থা আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রকাশ পেল তাদের দু’টি পুস্তিকাও: বনফুলের নাটক মানুষ মধুসূদন ও অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত দাদামশাই ও বনফুল: সখ্য-সম্পর্কে।

আনকোরা

গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর লেখা বহু নাটক ছড়িয়ে পড়েছে মঞ্চাভিনয়ে, গ্রাম নগর দেশ বিদেশে। নাট্যকার-পরিচালক চন্দন সেনের বয়স ছুঁয়েছে আশি, তাঁর নাটকেরা— দায়বদ্ধ, অনিকেত সন্ধ্যা, ইউজিন ও’নিল প্রাণিত ভালো লোক বা বালজ়াকের প্রেমিকারা, একনায়কের শেষ রাত— ছুঁয়েছে বাংলার তাবৎ নাট্যপ্রেমীর মন। এই বিপুল সম্ভারের মধ্যে জোরদার কমেডি কোথায়, প্রায় চার দশক আগে লেখা দুই হুজুরের গপ্পো-র মতো? এই ছিন্নমস্তা সময় তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে একটি ব্ল্যাক কমেডি, প্যাঁচে পঞ্চবাণ। ‘হ য ব র ল’ নাট্যগোষ্ঠীর প্রযোজনায় ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তার অভিনয় মধুসূদন মঞ্চে, আর ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় অ্যাকাডেমিতে।

নব ম্যাকবেথ

মানবজীবন, মন, রাষ্ট্র, সমাজের চিরন্তন টানাপড়েনের প্রতিনিধি শেক্সপিয়রের চরিত্রেরা, সেই দলে জনপ্রিয়তায় অবিসংবাদিত ম্যাকবেথ। মঞ্চ হোক কি রুপোলি পর্দা, দেশে দেশে নানা আঙ্গিকে তাকে ধরার চেষ্টা হয়েছে। সেই ধারাতেই নব সংযোজন ‘ষড়ভুজ’ নাট্যদলের প্রযোজনায় ম্যাকবেথ। নির্দেশক তরুণ প্রধান তাকে এনে ফেলেছেন রাঢ় বাংলায়। প্রান্তিক মানুষের ভাষা, লোকশিল্প ও অন্যান্য উপাদানে সাজানো এই প্রয়াস আসলে মূল নাটকের সঙ্গে বঙ্গীয় লোককলার, সহজিয়া নাট্যচর্চার মিলন। গিরিশ মঞ্চে অভিনয় আগামী কাল ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায়। এরই সূত্রে মাধব প্রামাণিক ও তরুণ প্রধানের প্রশিক্ষণে হবে রায়বেঁশে কর্মশালাও, আগামী ২-৬ অক্টোবর বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরিতে।

কমিক্স-কথা

পাথরে খোদাই হোক কি পাতায় আঁকা, ছবিতে গল্প বলার রীতি সুপ্রাচীন। সেই উত্তরাধিকার বয়ে চলেছে কমিক্স, সংবাদপত্রের পাতা থেকে একটা আস্ত স্ট্রিপের উত্তরণযাত্রায়। বাঁটুল, নন্টে ফন্টে, হাঁদা-ভোঁদার মতো সৃষ্টির সঙ্গে বাঙালি আপন করেছে টিনটিন, অরণ্যদেব, অ্যাসটেরিক্সকেও। তবে এ কালের আন্তর্জাতিক গ্রাফিক নভেল, মাঙ্গা-র পাশে বাংলা ভাষায় মৌলিক কমিক্সের প্রভাব এখনও কম। সেই অভাব পূরণ করবে বাংলা কমিক্স পত্রিকা Com-কথা (সম্পা: বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায় মনোজিৎ চট্টোপাধ্যায় পিনাকী দে)। সাম্প্রতিক সংখ্যায় শান্তনু মিত্র সম্বরণ দাস ইন্দ্রজিৎ কানুনগো সুরাজ দাস লগ্নজিৎ প্রধানের কমিক্সে উঠে এসেছে নানা বিষয়: লিঙ্গ-রাজনীতি, প্রকৃতি ও সভ্যতা, কল্পবিজ্ঞান থেকে শুরু করে আধুনিক জীবনের অন্ধকারও।

পার্বণী আড্ডা

কলকাতা এখনও কবিতায় শ্বাস নেয়। নাটকে, সিনেমায় বাঁচে। এই সব শিল্প-অভিজ্ঞতাকে জীবনে মিশিয়ে নিতে প্রয়োজন হয় যে সামাজিক সংলাপের, তার দায়িত্বটি আদরে পালন করে আসছে শহরের ছোট-বড় নানা নাগরিক পরিসর। ‘বারো পার্বণ’ যেমন। দক্ষিণ কলকাতায় সন্তোষপুর জোড়া ব্রিজের কাছে ‘বুক কেবিন’-এ মাসকাবারি বৈঠকে নিয়মিত শিল্প-আড্ডা জমান তার সদস্যেরা। আমন্ত্রণ জানান শিল্পচর্চার নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনকে, এ ভাবেই এর আগে এসেছেন অঞ্জন দত্ত সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় সুপ্রিয় সেন সুমন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। সেপ্টেম্বর-শেষে এ বারের অতিথি চিত্রশিল্পী হিরণ মিত্র, ২৮-২৯ সেপ্টেম্বর বুক কেবিন-এ তাঁর একক চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন। রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় ঠিক ৬টায় দর্শকদের মুখোমুখিও হবেন শিল্পী।

মাতৃরূপেণ

ক্যালেন্ডার যে শুধু বর্ষপঞ্জি নয়, হয়ে উঠতে পারে বাংলার লোকশিল্প-চর্চারও অভিজ্ঞানও, তারই নিদর্শন ‘উদ্বোধন ক্যালেন্ডার-বই ২০২৫’ । বিষয়, ‘বাংলার মাতৃরূপ’। পাতায় পাতায় বাঙালির লোক-ঐতিহ্যের রূপমাধুর্য: জয়নগর-মজিলপুরের গণেশজননী, তাহেরপুরের শিল্পীদের আটপৌরে সারল্যময় লক্ষ্মীসরা, দিনাজপুরের গোমিরা নাচে করাল কালীরূপ (ছবি)— বাংলার লোকশিল্পে মূর্ত কঠোর-কোমল মাতৃরূপ। একাধারে এটি ক্যালেন্ডার ও বইও, বর্ষশেষের পরেও রেখে দেওয়া যাবে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকানুসারে নির্মিত ক্যালেন্ডারে রামকৃষ্ণ মঠের উৎসব-অনুষ্ঠানগুলি চিহ্নিত, লোকশিল্পের নিদর্শনগুলির রঙিন ছবি-সহ সংক্ষিপ্ত পরিচয়ও। আছে কিউআর কোড, স্ক্যান করলেই লোকশিল্প নিয়ে একাধিক তথ্যচিত্রের খোঁজ। প্রচ্ছদপট সেজে উঠেছে সব্যসাচী হাজরার ক্যালিগ্রাফিতে। প্রকাশিত হবে মহালয়ায়, ২ অক্টোবর।

নানা রূপে

কবির চিঠি কবিকে প্রথম ধারাবাহিক ভাবে বেরোয় দেশ পত্রিকায়। রবীন্দ্রনাথকে লেখা অমিয় চক্রবর্তীর চিঠিগুলির টীকা বা প্রসঙ্গ-বর্ণনায় সম্পাদক নরেশ গুহর (ছবি) পরিশ্রম এ কালে দুর্লভ। দুরন্ত দুপুর বা তাতার-সমুদ্রে ঘেরা-র মতো কবিতাব‌ইয়ে তিনি আদ্যন্ত রোমান্টিক, আবার নিজের গবেষণায় ডব্লিউ বি ইয়েটসের ভারত-যোগের খোঁজে এদেশি মিথ পুরাণ তন্ত্র বুঝতে চেয়েছেন গভীর অধ্যবসায়ে। সাংবাদিকতায় ছিলেন কিছু দিন, সেখানেও নিরপেক্ষতার অবিচল প্রতিমূর্তি তিনি। ‘নরেশ গুহ জন্মশতবার্ষিকী আলোচনাচক্র’ হয়ে গেল গত ২৪ সেপ্টেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানকার বাংলা বিভাগ এবং সাহিত্য অকাদেমির যৌথ উদ্যোগে। পিনাকেশ সরকারের মুখ্য ভাষণের পাশাপাশি সভায় বিশেষ প্রাপ্তি গল্প-লিখিয়ে ও দিনলিপিকার নরেশ গুহ নিয়ে বিশিষ্টজনের এষণা।

শ্রদ্ধাঞ্জলি

চিঠিতে উইলিয়াম রাদিচে তাঁকে লিখছেন, “মাই রেসপেক্ট ফর ইয়োর নলেজ অ্যান্ড আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব মধুসূদন, প্রোফাউন্ড।” মধুসূদন-গবেষক রূপে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছিল সুরেশচন্দ্র মৈত্রের, উইলিয়াম রাদিচের মধুসূদন-গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষকজীবন শুরু, কাজ করেছেন যুগান্তর ও স্বাধীনতা পত্রিকায়; বাকি জীবন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা। দু’বছর আগেই পেরিয়েছে জন্মশতবর্ষ (জন্ম ১৯২২), যাদবপুরের বাংলা বিভাগের প্রাক্তনী সংসদের পত্রিকা পুনশ্চ বাংলা-র সাম্প্রতিক সংখ্যাটি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় ত্রিগুণা সেন প্রেক্ষাগৃহে প্রকাশ করবেন সৌরীন ভট্টাচার্য। সংখ্যাটিতে রয়েছে সুরেশবাবুর অগ্রন্থিত রচনা, কবিতা, আত্মস্মৃতিমূলক উপন্যাস, তাঁকে লেখা গুণিজনের চিঠিপত্র। পরে পুনশ্চ বাংলা-র প্রথম বার্ষিক বক্তৃতা, অভ্র ঘোষ শিপ্রা ঘোষ ও সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলবেন ‘শঙ্খ ঘোষ ও রবীন্দ্রভুবন’ নিয়ে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatar Korcha Jamini Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy