Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

কলকাতার কড়চা: দুর্লভ ছবির প্রদর্শনী

মাঝে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর রবীন্দ্র গ্যালারি ও সমকালীন শিল্পকলা গ্যালারি দু’টি সাধারণের জন্য খোলা হয়েছিল ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে অগস্ট পর্যন্ত।

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:২১
Share: Save:

নন্দলাল বসুর ৫০টি শিল্পনিদর্শনের প্রদর্শনী দিয়ে নতুন ভবনে যাত্রা শুরু করে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস, দিনটা ছিল ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৬০। লেডি রাণু মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ১৯৩৩ সালে ভারতীয় সংগ্রহালয়ে এই অসরকারি সাংস্কৃতিক সংগঠনটির প্রথম প্রতিষ্ঠা। একই ছাদের তলায় গড়ে ওঠে শিল্প-প্রদর্শশালা, সংগ্রহশালা ও প্রেক্ষাগৃহ। রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৬২ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় উদ্বোধন করেন রবীন্দ্র গ্যালারি— শুরু হল সংগ্রহশালার কর্মকাণ্ড। দোতলায় প্রায় দশ হাজার বর্গফুট এলাকায় পরের চোদ্দো বছরে একের পর এক যোগ হয়েছে নতুন নতুন গ্যালারি— মিনিয়েচার ছবি, আধুনিক চিত্রকলা, বস্ত্রশিল্প, কার্পেট, প্রাচীন খোদাইচিত্র ও সমসাময়িক গ্রাফিক শিল্প। জমে ওঠে ৩৫০০-র মতো নিদর্শন। বিশেষ করে বিশিষ্ট শিল্পীদের চিত্রকলার এমন সংগ্রহ খুব বেশি নেই। মুঘল ও রাজস্থানি অণুচিত্র ছাড়াও ১৯০০ সাল থেকে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত চিত্রকলার মধ্যে আছে রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ, নন্দলাল বসু, অসিতকুমার হালদার, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় প্রমুখের কাজ। বস্ত্রশিল্পের মধ্যে আছে বালুচরি, বেনারসি, চম্বা রুমাল, ঢাকাই জামদানি, পাটোলা ইত্যাদি; টি লেসলি মার্টিনের কার্পেট সংগ্রহ; ড্যানিয়েল, জ়োফানি, অ্যাটকিনসন প্রমুখের আঁকা কোম্পানি আমলের ছবি এবং জয়নুল আবেদিন নন্দলাল বসু রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চিত্তপ্রসাদ মুকুল দে হরেন দাস প্রমুখের গ্রাফিক কাজের নিদর্শন।

মাঝে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর রবীন্দ্র গ্যালারি ও সমকালীন শিল্পকলা গ্যালারি দু’টি সাধারণের জন্য খোলা হয়েছিল ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে অগস্ট পর্যন্ত। তার পর কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অর্থানুকূল্যে শুরু হয় ছবি সংরক্ষণের কাজ, বন্ধ রাখতে হয় গ্যালারি। সাড়ে তিন বছর পুরোদমে সংরক্ষণের কাজ চালিয়েছেন ন্যাশনাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ফর কনজ়ার্ভেশন অব কালচারাল প্রপার্টি (এনআরএলসি), লখনউয়ের বিশেষজ্ঞরা। বিপুল সংগ্রহের মোট ২১২টি ছবি সংরক্ষিত হয়েছে।

এ বার দর্শকের সামনে আসছে তারই মধ্যে গোটা পঞ্চাশ তৈলচিত্র। পরিকল্পনা আছে পর্যায়ক্রমে সব সংরক্ষিত ছবিই প্রকাশ্যে আনা হবে। ২৫ অক্টোবর সন্ধে ৬টায় অ্যাকাডেমির নর্থ গ্যালারিতে ‘মাস্টারওয়র্কস— আ গ্লিম্পস অব দ্য রেস্টোর্ড অয়েল পেন্টিংস ফ্রম দ্য কালেকশন অব দ্য মিউজ়িয়াম অব অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন, উপস্থিত থাকবেন অশোককুমার দাস গণেশ হালুই সমীর আইচ প্রণবরঞ্জন রায় ও সুশোভন অধিকারী। সবার জন্য খোলা থাকবে ২৬-৩১ অক্টোবর, রোজ ১২-৮টা। আর বন্ধ হয়ে থাকা রবীন্দ্র গ্যালারি ও সমকালীন শিল্পকলা গ্যালারি দু’টিও সংস্কারের পর ডিসেম্বরে খুলে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন যুগ্মসচিব কল্লোল বসু। গ্যালারি ফাঁকা পাওয়ার উপর নির্ভর করবে বাকি সংরক্ষিত ছবি কবে দেখানো যাবে। সঙ্গে সংস্কারের পর রবীন্দ্রনাথের আঁকা একটি ছবি (বাঁ দিকে) এবং অতুল বসুর পেন্সিলে আঁকা রবীন্দ্রপ্রতিকৃতি (ডান দিকে)।

ডাকিনী-যোগিনী

প্রতিমা গঙ্গায় বিসর্জন হলেই জল দামালরা কাঠামো ধরতে দে ছুট! জলে কাঠামো হাতের নাগালে এলেই যে অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত। কাঠামো-সহ খড় ভেজা অংশ কুমোরটুলিতে কিনে নেন শিল্পীরা। পরে ছোট কাঠামোয় খড়ের সঙ্গে হরেক মুখ সহযোগে তৈরি হয় কালীপ্রতিমার ডাকিনী যোগিনী, কেউ বা বলেন ভূত পেত্নি দত্যি দানো। কালীপুজোর আগে কুমোরটুলির বনমালী সরকার স্ট্রিট, কেবলকৃষ্ণ সুর স্ট্রিট, নারায়ণ সুর লেন, রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিট-সহ হরেক গলিঘুঁজিতে দেখতে পাওয়া যায় এই ধরনের মূর্তি। শ্যামবাজার এভি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির অংশু পাল দাদা রোহিত পালের দেখে গত দু’বছর, নবম শ্রেণির ভাল আঁকতে জানা রাহুল দাস মাটির কাজ করার মজা থেকে বিগত চার বছর, স্কটিশ স্কুলের ক্লাস সেভেনের সুমিত চৌধুরী ছোটবেলায় মৃৎশিল্পী মামাদের দেখাদেখি এখন তৈরি করে মজার মূর্তি। নবকৃষ্ণ স্ট্রিটে শুভ ও সুরেশ গঙ্গায় কাঠামো নিজেরা তুলে তার পর নিজেরাই গড়েন, কুমোরটুলি স্ট্রিটের ষাটোর্ধ্ব মোহন ভক্তা ছোট থেকেই প্রতিমার পাশাপাশি ডাকিনী যোগিনী তৈরি করেন, মায়ের মৃত্যুর পর গত দশ বছর জ্যোৎস্না চক্রবর্তী, স্বপন দাস পঁচিশ বছর, গৌর চক্রবর্তী কুড়ি বছর গড়ছেন। মৃৎশিল্পী নিতাই পাল পঞ্চাশ বছরের বেশি কালী প্রতিমার সঙ্গে করেন ডাকিনী যোগিনী।

ইটালির অপেরা

পুজোর মরসুমে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মূর্ছনা! ২৪ অক্টোবর সন্ধে ৬টায় আইসিসিআরে কলকাতার ইটালির দূতাবাস ও মিউজ়িশিয়া আয়োজন করেছে এক পাশ্চাত্য সঙ্গীতের কনসার্ট। ইটালির প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী অ্যাঞ্জেলা পাপালে গান গাইবেন এবং তাঁকে পিয়ানোতে সঙ্গত করবেন ফ্যাবিয়ো মারা। এ ছাড়াও, এই দুই শিল্পী ২২-২৩ ও ২৫-২৬ অক্টোবর কণ্ঠসঙ্গীত ও পিয়ানোর মাস্টারক্লাস করাবেন টালিগঞ্জের অ্যাকাডেমি ফর মিউজ়িক্যাল এক্সেলেন্স এবং কসবার মিউজ়িশিয়া সেন্টারে। শুধু কলকাতার সঙ্গীতোৎসাহী ছেলেমেয়েরাই নন, সারা পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, ওড়িশা, বিহার, মেঘালয়, অসম থেকেও অনেকে আসছেন শেখার জন্য। উদ্যোক্তাদের অভিপ্রায়, এঁদের মধ্যে যাঁরা পাশ্চাত্য সঙ্গীত নিয়ে কোনও ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় আগ্রহী, তাঁদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো।

পাইস হোটেল

ইমতিয়াজ আলি এসেছেন কলকাতায়। এটা কোনও বড় খবর নয়। বড় খবরটা হল, তিনি উঠেছেন পূর্ব কলকাতার এক প্রান্তের নামজাদা পাঁচতারা হোটেলে, কিন্তু রাতের বেলা নিয়ে গিয়েছেন রাসবিহারী মোড়ের ‘তরুণ নিকেতন’-এর ভাত ডাল মাছ মাংসের ঝোল। এমনও হয়! এই মুহূর্তে মুম্বইয়ের বিখ্যাত পরিচালকদের এক জন অবশ্যই ইমতিয়াজ আলি। তাঁর ‘তামাশা’ এখনও দর্শকদের চোখে ও মানসে সদা প্রস্ফুটিত। তিনি যে কোনও চিত্রনাট্যকে রুপোলি পর্দায় রূপ দিলে, তা তখনই খবর। এ-হেন পরিচালক শুধু তরুণ নিকেতনের নৈশভোজের স্বাদ নেননি, উল্টে কর্ণধার অরুণবাবুকে বলেছেন, ‘‘দিন দু’তিনের মধ্যে আসব, আর কলাপাতা মাটির ভাঁড়ে খেয়ে যাব।’’ এ-হেন কথা শুনে তো মুচ্ছো যেতে বসেছেন অরুণবাবু। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এই পাইস হোটেল ঘিরে কত রকমের মিথই তো চালু রয়েছে। শোনা যায় কালীঘাট পার্কে মেসে থাকাকালীন অমিতাভ বচ্চনও নাকি এক-দু’বার এখানে ভাত খেয়েছেন!

যুদ্ধের শিল্প

মার্শাল আর্ট হল এক কথায় ‘যুদ্ধের শিল্প’। অর্থাৎ, যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি ও কলাকৌশল। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন ধরনের মার্শাল আর্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে শারীরিক ভাবে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা এবং যে কোনও ধরনের ভয়ভীতির প্রতি রুখে দাঁড়ানো। হ্যাঁ, এই কাজটাই চল্লিশ বছর ধরে করে চলেছে শিবাজি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘শিবাজি গাঙ্গুলি’জ় অ্যাকাডেমি মাইন্ড অ্যান্ড বডি’। এই মুহূর্তে এই সংস্থার কর্ণধার কারাটে মাস্টার শিবায়ন গঙ্গোপাধ্যায় ও স্যমন্তক গঙ্গোপাধ্যায়ের চেষ্টায় এগারোটি শাখার মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখাচ্ছেন। শিবায়ন ও স্যমন্তক দু’জনেই বাবা শিবাজিবাবুর কাছে কারাটে শিখেছেন। শিবায়ন ‘ফিলিপিনো মার্শাল আর্ট’ চ্যাম্পিয়নশিপে ফিলিপিন্সে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন। স্যমন্তক ব্রাজিলে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোপা ব্রাজিল চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ দ্বিতীয় হয়ে শেষ করেছেন। এ ছাড়াও তাঁরা পেয়েছেন দেশে-বিদেশে প্রভূত সম্মান। এই আর্টের প্রতি শিবাজিবাবুর নিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়ে জাপান থেকে তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছে। সম্প্রতি হয়ে গেল তৃতীয় শিবাজি গোল্ড কাপ। যেখানে ষোলো জন ছেলে ও মেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পেয়েছিলেন।

পুতুল নাট্যোৎসব

রাশিয়ার সের্গেই ওব্রাৎসভকে দণ্ড-পুতুল বা আধুনিক রড পাপেটের জনক বলে মনে করা হয়। সারা পৃথিবীতে তাঁর বিশেষ জনপ্রিয়তা রয়েছে। মস্কোর স্টেট সেন্টার পাপেট থিয়েটারের সৃষ্টি ওঁরই হাতে। রয়েছে ওঁর নামাঙ্কিত একটি পুতুল সংগ্রহশালাও। রাশিয়ার নানা প্রান্তে পুতুল নাটকের প্রসারও ঘটিয়েছেন তিনি। সেখানে এখন পুতুল নাটক ছোটদের বিদ্যালয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। তাঁরই নামে প্রতি বছর আয়োজিত হয় একটি পুতুল নাট্য উৎসব, এ বারেরটি দশম। কলকাতা থেকে আমন্ত্রিত হয়ে ৯ অক্টোবর মস্কোর প্রেক্ষাগৃহে পুতুল নাটক পরিবেশন করল ডল্‌স থিয়েটার। সদ্য সঙ্গীত নাটক অকাদেমি জয়ী পুতুল নাট্যকার সুদীপ গুপ্তের পরিচালনায় এখানে পরিবেশিত হয় ‘টেমিং অব দি ওয়াইল্ড’ প্রযোজনাটি। সঙ্গীত নির্ভর পুতুলের নির্বাক ভাষার এই পরিবেশনা। ডল্‌স থিয়েটার ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বের অনেক দেশে প্রশংসার সঙ্গে তাদের পুতুল নাটক দেখিয়ে এসেছে। সঙ্গের ছবিতে মস্কোর ছোটরা ডল্‌স থিয়েটারের পাখি পুতুলের সঙ্গে।

কলকাতার সঙ্গে

এক শহরের মধ্যে লুকিয়ে আছে কত কথা, ভালবাসা, স্মৃতি, বেদনা বা আরও কিছু। নো রিফিউজ়াল হলুদ ট্যাক্সিচালক, ওয়াজ়িদ আলির সঙ্গে আসা পরিবারের এই প্রজন্মের ব্যবসায়ী, এই শহরের একলা মেয়ে, রাস্তার ধারে টিয়াপাখি নিয়ে বসা ভবিষ্যৎদ্রষ্টা জ্যোতিষী, রোয়াকের আড্ডা, হারিয়ে যাওয়া পেশার মানুষ বা এমন আরও কত চরিত্রের মিছিল— যেন চলছেই। এমত চরিত্র নিয়েই বিভিন্ন সময়ে কলম ধরেছিলেন ভিন্ন পেশার কিছু মানুষ। প্রায় ২৫ জন লেখকের লেখা কলকাতা সংক্রান্ত ৫৫টি গল্প নিয়ে এ বারে প্রকাশ পেল একটি সঙ্কলন। জন্ম, কর্ম বা অন্যান্য সূত্রে এঁরা সকলেই কলকাতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ‘পিপল কলড কলকাতা’ (পেঙ্গুইন র‌্যান্ডম হাউজ়) শীর্ষক এই বইটি সম্পাদনা করেছেন কমলিকা বসু, মুখবন্ধ লিখেছেন বীর সাংভি। গত ১২ অক্টোবর, কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে লেখক, সম্পাদক এবং শিল্পীদের উপস্থিতিতে প্রকাশ পেল বইটি। এই প্রকল্পে সহায়তা এসেছে বিড়লা সংস্কৃতি ট্রাস্টের পক্ষ থেকে। এই বইটিকে কেন্দ্র করে গত ১৪-১৬ তারিখ পর্যন্ত ছিল পায়ে হেঁটে কলকাতা দর্শন, গল্পপাঠ এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব।

নতুন প্রয়াস

পদাতিক লিটল থিয়েটারে এ বার ‘জাহান্নামের সমাচার’-এর চতুর্থ উদ্যোগ— ২৪ ও ২৫ অক্টোবর। পরিকল্পক অশোকনগর নাট্যমুখ-এর কর্ণধার অভি চক্রবর্তী, সঙ্গে আছেন চার নাট্যনির্দেশক দেবাশিস দত্ত (দমদম ইফটা), অতনু সরকার (থিয়েলাইট), রাজীব বর্ধন (যাদবপুর মন্থন), রাকেশ ঘোষ (দমদম শব্দমুগ্ধ)। তাঁদের সৃজনে প্রতিভাত হচ্ছে এই সময়, সমাজ ও ব্যক্তিমানুষের সঙ্কট। যেমন ২৫ অক্টোবর সন্ধে ৭টা ১৫-য় দমদম শব্দমুগ্ধ-এর নতুন প্রযোজনা ‘বাঘিনী’-র প্রথম অভিনয়। বিনোদ ঘোষালের গল্প থেকে নাট্যরূপ ও নির্দেশনা রাকেশ ঘোষের। প্রান্তিক একটি অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সেই দাঙ্গায় হঠাৎ ঢুকে পড়া এক মেয়ের কাহিনি রিক্ত ভঙ্গিতে পেশ করেছেন রাকেশ। কোনও পশুর মানবিক আচরণের উল্টো দিকে মানুষের দলবদ্ধ অমানবিকতা নাটকটির ভরকেন্দ্র। অশোকনগর নাট্যমুখ-এর নবতম নাট্য ‘গান্ধারী’-ও অভিনীত হবে ২৫ অক্টোবর সন্ধে ৬টায়। নাটকটির নির্দেশক সত্যব্রত রাউত, রচয়িতা শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ, অভিনয়ে সংগীতা চক্রবর্তী।

দুই বোন

শক্তি আরাধনায় মহিলাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করতেই দেখা যায়। তবে এই শহরেই আছে ব্যতিক্রম। বিডন স্ট্রিটে তখন জঙ্গল। এঁদের ঠাকুরদার বাবা মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানেই হঠাৎ মাটির কালীমূর্তি দেখতে পান। স্থানীয় মিত্র পরিবার ১৬০/২ রামদুলাল সরকার স্ট্রিটে তাঁদের জায়গা দান করেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী তিনশো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই মূর্তি ‘বসাকালী’ নামেই পরিচিত। ২০০৫-এ অমল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত হওয়ার পর থেকেই তাঁর বিবাহিত দুই কন্যা তনুশ্রী চক্রবর্তী ও মধুশ্রী চট্টোপাধ্যায় মন্দিরের দায়িত্ব নেন। অম্বুবাচীর সময় কাঁচা দুধ ও আম ভোগ দেওয়া হয়, নিবৃত্তির দিনে দেবীকে স্নান করিয়ে মাথায় তেল, এ ছাড়া সিঁদুর ও আলতায় রাঙিয়ে পান সহযোগে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। ফি বছর কালীপুজোর আট দশ দিন আগে অঙ্গরাগ হয়।

জাপানি সংস্কৃতি

জাপানি ভাষা-সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর অন্তরের যোগ। শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা, জাপানবিদ নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়ি তথা স্টুডিয়োর নামও রেখেছেন ‘কোকোরো’, জাপানিতে যার অর্থ হৃদয়। এখানেই ফুদে (তুলি) হাতে কামি বা হানশি-র (কাগজ) উপরে জাপানি ‘সোশ্যো’ ক্যালিগ্রাফির আঙ্গিকে তিনি আঁকেন বাংলা অক্ষর, শব্দ। পাশেই থাকে অন্যান্য সরঞ্জাম: সুজ়ুরি (কালি ঘষার পাথর), সুমি (কালি), সুইতেকি (জলের ড্রপার), বুনচিন (পেপারওয়েট) আর হরেক রাক্কান (সিল)। জাপানি ক্যালিগ্রাফি-দর্শনে শিল্পীকে নিজের প্রাণশক্তি লেখার মধ্যে সঞ্চারিত করতে হয়; তাতেই মুক্তি, আনন্দ। একই অনুভবের খোঁজ নীলাঞ্জনের ছোট ছোট কবিতাগুলিতেও। সেই সব কবিতা ও ক্যালিগ্রাফি নিয়েই প্রদর্শনী আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী হল-এ। উদ্বোধন ২৪ অক্টোবর বিকেল ৫টায়। চলবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত (সোমবার বাদে)। প্রকাশিত হবে নীলাঞ্জনের বই ‘ভালবাসার মতো’ (কলিকাতা লেটারপ্রেস)।

লোকায়ত

চিত্রশিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির অনেকখানি জুড়ে থাকে বাংলার লোকায়ত জীবন। এ বার এই প্রবীণ শিল্পীর একক চিত্রপ্রদর্শনী ‘রং আর রেখা’ সাজিয়ে ‘দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাস’ পালন করছে দুর্গার বিদায় বিজয়া। প্রদর্শিকায় রয়েছে শিল্পীর পঞ্চাশেরও বেশি সৃষ্টি। ২০০৬-’১৭, এই ১২ বছর ধরে আঁকা। কেন্দ্রভাবনায় দুর্গাপরিবার ও পরিবেশ। মা দুর্গা পল্লিনিবাসী, শান্ত, সজল, সন্তানবৎসল জননী রূপে দেখা দিয়েছেন ছবিগুলিতে। গণেশজননী (সঙ্গের ছবি), লক্ষ্মী, নানা মুহূর্তে কার্তিক-গণেশের চিত্র ছাড়াও রয়েছে শারদ নিসর্গ। ১৯ অক্টোবর ছবি এঁকে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন শিল্পী স্বয়ং। চলবে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত, প্রতি দিন ২-৮টা (মঙ্গলবার বাদে)।

মেয়েদের ঈশ্বর

ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যরা সোজাসাপ্টা শাস্ত্রের বিরোধিতা করে বিধবা বিবাহের পক্ষে সওয়াল করেন। তা হলে বিদ্যাসাগর কেন সেই সওয়াল করতে গিয়ে শাস্ত্রকে শস্ত্র করেন? রামকৃষ্ণ পরমহংসের এই প্রশ্নের জবাবে বিদ্যাসাগর বলছেন, ‘‘রামকৃষ্ণদেব, আপনাকে বলি, যদি শাস্ত্রের জ্ঞান কাশী, ভাটপাড়া আর নবদ্বীপের পণ্ডিতদের সিন্দুকে বন্ধ না থাকত, তবে আমার মন বলে, দেশের সকলেই ওই ইয়ং বেঙ্গলদের মতো করে কথা বলত।’’ মঞ্চে অভিনীত হচ্ছে নাটক ‘মেয়েদের ঈশ্বর’। নাটক? নাকি তর্পণ? মহালয়ায় আস্তিক হিন্দুরা যখন তর্পণ করছেন পিতৃপুরুষদের আত্মার উদ্দেশে, তখন নাস্তিক বিদ্যাসাগরের ২০০ বছরে তাঁর মতাদর্শের উদ্দেশে তর্পণ করল ‘নেহাই’— একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। একই সঙ্গে দেখাল, বিদ্যাসাগর কোনও অতিমানব নন, তিনি একটি সমাজের যুক্তিবাদী আন্দোলনের ফসল। ডিরোজিয়ো, রামমোহনের পথ বেয়ে যাঁর উদ্ভাস। ‘মেয়েদের ঈশ্বর’ মনে করাল, মাত্র ১৭০ বছর আগেও ‘নব জাগরণ’ ছিল এক ভীষণ সংগ্রাম।

এ বার চললাম

‘‘আমার খানিকটা দেরি হয়ে যায়, জুতোয় পেরেক ছিল’’— এমনই এক আশ্চর্য পঙ্‌ক্তি লিখেছিলেন এক বাঙালি কবি। কিন্তু তা যে এই আবহাওয়ায় মিলে যাবে, তা কে জানত! এ কথা আমি বলছি, কেন না বেশ কয়েক বছর আমি দেরি করে আসি। আর যাইও দেরি করে। কিন্তু আমি থাকলেই তো আমাকে নিয়ে হরেক গঞ্জনা। মুশকিল হল, কেন আসছে না— এই করে করে খবরের কাগজ আর চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে লোকের মাথাখারাপ। তার পর যাও বা এলাম, তখন সে সব নিয়ে ছবি আর লেখালিখি। কেন এত জল ঝরাচ্ছি আমি। এ বার তো আমায় বলতেই হবে, ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’। আর তো কোথাও আমার জন্মানোর কোনও চিহ্ন নেই। যদিও বা জন্মাই তা শুধুমাত্র প্রকৃতির খেয়ালে। নয়তো বিদায়।

বাংলা নিয়ে বই

লুটপাটে ত্রস্ত বাঙালি খেয়াল করেনি। ইতিহাস-লেখক উইলিয়াম ডালরিম্পল অবশ্য তাঁর নতুন বইয়ের শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছেন, অষ্টাদশ শতকে যে কয়টি ভারতীয় শব্দ ইংরেজি ভাষায় ঢুকে পড়ে, তার অন্যতম লুট। ‘‘ডাকাত, ঠগি, নবাব ও বাবু আরও কিছু দিন বাদে অক্সফোর্ড অভিধানে ঠাঁই পেয়েছিল’’, শনিবার এক আড্ডায় জানালেন লেখক। সে দিনই এই শহরে প্রকাশিত হল প্রায় পাঁচশো পাতার বই— দি অ্যানার্কি। প্রায় দু’শো বছর ধরে এই দেশে বাণিজ্যের নামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নৈরাজ্যই এই বইয়ের বিষয়। ‘‘রাজ ব্যাপারটা শুনতে ভাল। মহারাজা, ধনরত্ন, বিলাসবৈভব এ সব নিয়েই তো সিনেমা হয়। কিন্তু ব্রিটিশ রাজ আর কত দিন টিকল? একশো বছরও নয়। কোম্পানি তো জাহাঙ্গিরের আমলে এল। তার পর সুরাট, বোম্বে, কলকাতা, পলাশি ও বক্সারের যুদ্ধ, বাংলা বিহার ওড়িশা থেকে মহীশূর দখল...তাদের স্থায়িত্ব আরও বেশি’’, হাসছেন তিনি। লেখক দেখাচ্ছেন, পলাশির ঢের আগে, ১৬৯৩ থেকে কোম্পানি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের শেয়ার দিত। পার্লামেন্টও চোখ বুজে থাকত। বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পর তাদের টনক নড়ে। ‘‘এখনকার সঙ্গে তুলনা টানতে পারেন। ফেসবুক, গুগল মানে যেমন মার্কিন সরকার নয়, ব্যবসায়িক স্বার্থ বজায় রাখার বিশ্বজোড়া বৃহৎ পুঁজি, তখনকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও সে রকম।’’ ওয়েলস-এর এক দুর্গে এখনও আছে সিরাজদ্দৌল্লার পাল্কি, টিপু সুলতানের তাঁবু। ‘‘একটা বক্তৃতা দিতে ওখানে গিয়ে হতভম্ব’’, বললেন ডালরিম্পল। বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জয়ধ্বজা লেখক দেখছেন ১৭৫৬ থেকে। তাঁর মতে, কলকাতা পুনরুদ্ধারই কোম্পানির ব্যালান্স শিট ঘুরিয়ে দেয়। মরাঠা, অওধ বা দিল্লিতে শিল্প ছিল না, কিন্তু বস্ত্রশিল্পে উন্নত ছিল বাংলা। সেখান থেকেই শোষণ, কয়েক বছরের মধ্যে বাণিজ্যে কলকাতা বন্দর তাই ছাপিয়ে গেল লন্ডনকেও। এর আগে তাঁর অনেক বই-ই কলকাতা ছুঁয়ে গিয়েছে। আফগান যুদ্ধে সৈন্যরা কলকাতা থেকেই রওনা দেয়। ‘কোহিনুর’ প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, মহারাজা দলীপ সিংহের সঙ্গে তাঁর মায়ের দেখা হয়েছিল কলকাতার স্পেন্সেস হোটেলে। কিন্তু এই বইয়ে ক্লাইভ, হেস্টিংস— সব মিলিয়ে কলকাতার স্থান আরও বেশি। ‘‘এটাই বোধ হয় বাংলা নিয়ে আমার সবচেয়ে বড় লেখা’’, হাসলেন দিল্লিবাসী স্কটিশ ইতিহাসবিদ। ছবি: সুমন বল্লভ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy