Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

কলকাতার কড়চা: শিরোধার্য ঈশ্বরচন্দ্র

কলকাতার বুকেই বিদ্যাসাগরের অধিকাংশ কর্মকাণ্ড, কিন্তু এখানে তাঁর সব স্মৃতি আজও চিহ্নিত নয়।

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১১
Share: Save:

চাকচিক্যহীন এক বসতবাড়ি। তারই দোতলার বাইরের দিকে বসানো আছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি। হরিশ মুখার্জি রোড বা কালীঘাট রোড দিয়ে যেতে সহজেই নজর কাড়ে সেটি। ৩৯/১ কালীঘাট রোডে আইনজীবী কৃষ্ণমোহন মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত পাঁচতলা বাড়ির সামনে বিশেষ ভাবে নির্মিত প্রকোষ্ঠে শ্বেতপাথরের মূর্তিটির প্রতি তিন দশক আগে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন শিল্প-ইতিহাসবিদ কমল সরকার, ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক অসামান্য তথ্যসমৃদ্ধ রচনায়। সত্তরের উত্তাপ, সাম্প্রতিক রাজনীতি সব কিছুর আঁচ বাঁচিয়ে বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবর্ষে সে মূর্তি পৌঁছল প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীতে। প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণমোহন (১৯০০-৯৫) বিদ্যাসাগরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়ার সময় রোজ তিনি পায়ে হেঁটেই বড়িশা থেকে হেদুয়া যেতেন। বিদ্যাসাগর অনুরাগের প্রমাণ স্বরূপ তিনি স্বোপার্জিত অর্থে ১৯৬৯ সালে তাঁর কালীঘাটের ভদ্রাসনে কৃষ্ণনগর ঘূর্ণি-র ভাস্কর কার্তিকচন্দ্র পালের তৈরি মর্মর মূর্তি স্থাপন করেন। তাঁর জীবৎকালেই এলাকায় বাড়ির পরিচয় হয়েছিল ‘বিদ্যাসাগর বাড়ি’ বলে। সাধারণ কৌতূহলী মানুষ বা গবেষকের প্রশ্নের উত্তরে নিজের হাত দুটো মাথায় রেখে বলতেন, বিদ্যাসাগরের পাদুকা আমার মাথায় আছে। দু’শো বছরে নিঃসন্দেহে শহরের বুকে প্রতিষ্ঠিত হবে বিদ্যাসাগরের আরও অনেক মূর্তি, যদিও তার পিছনে থাকবে না এমন নিষ্ঠার ইতিবৃত্ত।

কলকাতার বুকেই বিদ্যাসাগরের অধিকাংশ কর্মকাণ্ড, কিন্তু এখানে তাঁর সব স্মৃতি আজও চিহ্নিত নয়। রাধারমণ মিত্র অনেকগুলি স্মৃতিচিহ্নিত বাড়ি খুঁজে বার করেছিলেন। কিছু দিন আগেই বিদ্যাসাগর কলেজের শিক্ষক শেখর ভৌমিক সরেজমিন অনুসন্ধানের নিরিখে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রথম বিধবাবিবাহের যে বাড়িটিকে অধিকাংশ গবেষক স্বীকৃতি দিয়েছেন তা যথার্থ কি না। এ বার ‘কথা সোপান’ (সম্পা: সুস্মিতা জোয়াদ্দার মুখোপাধ্যায়) পত্রিকার ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ ক্রোড়পত্রে হরিপদ ভৌমিক তৈরি করে দিয়েছেন কলকাতায় বিদ্যাসাগরের দিনলিপি। আশিস খাস্তগীর দেখিয়েছেন বিদ্যাসাগরের সাধের সংস্কৃত যন্ত্র ও সংস্কৃত বুক ডিপজ়িটরির পরিণতি-পর্ব। আছে বীরসিংহে বিদ্যাসাগর-সংগ্রহের পরিচয়, রক্ষিত বইয়ের তালিকা এবং বিদ্যাসাগর বিষয়ক বইয়ের নির্বাচিত তালিকা।

শিশিরকথা

‘‘পদবী দেওয়ার বদলে খুশি হতাম, এই কলকাতার বুকে ভাল একটা নাট্যশালা খোলার কথা সরকার যদি ঘোষণা করতেন।’’ জানিয়েছিলেন শিশিরকুমার ভাদুড়ি, পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান করে। তাঁর বিস্তারিত জীবনপঞ্জিতে তৎকালীন ইতিহাস তুলে এনেছেন প্রভাতকুমার দাস। শিশিরকুমারের ১৩০তম জন্মবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ব্রাত্য বসুর সম্পাদনায় মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র প্রকাশ করল শিশিরকথা। প্রথম প্রবন্ধটিই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। নিছক তর্পণ নয়, মূল্যায়ন করেছেন প্রতি প্রজন্মের নাট্যজনেরাই... বিভাস চক্রবর্তী অশোক মুখোপাধ্যায় মনোজ মিত্র দেবশঙ্কর হালদার দেবেশ চট্টোপাধ্যায় শেখর সমাদ্দার সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত সুকৃতি লহরী। শিশিরকুমারের অভিনয়ের ক্ষমতা ও অভিনবত্ব ‘শিক্ষিত দর্শককে এক উত্তরণের অভিজ্ঞতা দিত’, লিখেছেন দীপেশ চক্রবর্তী। স্বপন চক্রবর্তী লিখেছেন বাজার, রাষ্ট্র ও শিশিরকুমারের জাতীয় নাট্যশালা নিয়ে। শিশিরকুমারের হাতে নাটকের আধুনিকতার নির্মাণ নিয়ে সৌরীন ভট্টাচার্য অভ্র ঘোষ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় সুব্রত ঘোষ প্রমুখের রচনা। মুদ্রণে পরিপাটি এ-বইয়ের শেষ প্রবন্ধটি সম্পাদকের, লিখেছেন: যাবতীয় সরকারি সম্মান প্রত্যাখ্যানের সময় ‘‘প্রতিবারই তিনি সম্মানের পরিবর্তে জাতীয় নাট্যশালা... খুলে দেওয়ার ব্যাপারে’’ বলতেন।

বিপ্লবে বাঙালি

বাঙালি বিপ্লবীদের মধ্যে ঠিক কত জন ফাঁসির মঞ্চে জীবনদান করেন? কত জন বিপ্লবী মারা গিয়েছেন প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে কিংবা পুলিশি অত্যাচারে? মর্মান্তিক এবং লজ্জাজনক সত্য— সঠিক তথ্য নেই কোথাও। উদাসীনতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক কিছুই কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। তবু এক দশকের বেশি সময় ধরে সম্পূর্ণ একক উদ্যোগে নানা জায়গায় পৌঁছে, নথিপত্র ঘেঁটে, বিপ্লবীদের পারিবারিক সংগ্রহ থেকে উপাদান নিয়ে মূলত বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে চলেছেন শুভেন্দু মজুমদার। তার ফসল অগ্নিযুগের ফাঁসি এবং অগ্নিযুগের চিঠি (র‌্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন)। অবসরপ্রাপ্ত এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সম্পাদনা করেছেন বিপ্লবী মতিলাল রায় প্রণীত আমার দেখা বিপ্লব ও বিপ্লবী এবং বাঘা যতীন স্মরণে তথ্যনিষ্ঠ বই। কোচবিহার-বিষয়ক একাধিক গবেষণা গ্রন্থ ছাড়াও তাঁর চর্চার পরিসরে আছে সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, নাগরিক অধিকার এবং ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা। বর্তমানে চুঁচুড়া শহরের স্থায়ী বাসিন্দা শুভেন্দুবাবু মগ্ন হয়ে আছেন বিপ্লবীদের নিয়ে একটি সুবৃহৎ অভিধান রচনায়। ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটায় মাতঙ্গিনী হাজরার মৃত্যুদিনে অশোকনগরে তাঁকে সংবর্ধনা জানাবে অহর্নিশ। উপস্থিত থাকবেন সত্য গুহ ও পল্লব মিত্র।

সুভাষ স্মরণ

৫৩ বছরে পা দিল ‘সপ্তাহ’ পত্রিকা। এটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুভাষ মুখোপাধ্যায়। কবির প্রয়াণের পর প্রতি বছর পত্রিকার উদ্যোগে সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা আয়োজিত হচ্ছে। এতে বলেছেন মহাশ্বেতা দেবী, দেবেশ রায়, শাহরিয়ার কবীর-সহ দুই বাংলার গুণিজন। এই বছর পদাতিক কবির জন্মশতবর্ষ, সঙ্গে জন্মশতক পার করলেন তাঁর স্কুলজীবনের বন্ধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও। আজ, ২৩ সেপ্টেম্বর পঞ্চদশ বর্ষের সুভাষ স্মারক বক্তৃতা এই সব বিষয়কে মাথায় রেখেই অনুষ্ঠিত হবে। বাংলা আকাদেমি সভাগৃহে, সন্ধে ৫:৪৫ মিনিটে। প্রসঙ্গ ‘শতবর্ষে সুভাষ ও হেমন্ত’ এবং ‘ফ্যাসিবাদের পরাজয়ের ৭৫ বছর ও বর্তমান সময়’। আলোচনায় রুশতী সেন এবং শোভনলাল দত্তগুপ্ত। বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ দূতাবাসের মোহম্মদ মোফাকখারুল ইকবাল।

নতুন জীবনী

১২৫ বছর আগে, বিদ্যাসাগরের কৃতি ও বাঙালি জীবনে তাঁর অবদান সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি অদ্য তাঁহার সেই গুণকীর্তন করিতে বিরত হই তবে আমার কর্তব্য একেবারে অসম্পন্ন থাকিয়া যায়’’। এ বার বিদ্যাসাগরের জন্মদ্বিশতবর্ষ উদ্‌যাপনে উদ্যোগী পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমিও। ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টেয় আকাদেমি সভাঘরে আয়োজিত হয়েছে ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: জ্যোতির্মণ্ডলী’ শীর্ষক আলোচনা। উদ্বোধনে ও মূল সঙ্কেত ভাষণে রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। সভামুখ্য আকাদেমির সভানেত্রী শাঁওলী মিত্র। আলোচনায় আশীষ লাহিড়ী, রণবীর সমাদ্দার, জয় গোস্বামী, অভীক মজুমদার, শেখর ভৌমিক প্রমুখ। প্রকাশিত হবে বিদ্যাসাগরের নতুন একটি জীবনী, লিখেছেন আশিস খাস্তগীর।

আগমনি

বাঙালির শারদোৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ আগমনি ও বিজয়ার গান। এই পদগুলি সমাজভাবনার দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ। আগমনির আনন্দেই জনসাধারণের ছোট ছোট সুখের খোঁজ মেলে। তেমনই বিজয়ার বিষাদে মিশে থাকে সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের ব্যক্তিগত যন্ত্রণা ও অশ্রুবিন্দু। ৩০ সেপ্টেম্বর গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার আয়োজন করেছে আগমনির আসর। বিবেকানন্দ প্রেক্ষাগৃহে সন্ধে সাড়ে পাঁচটায়। ‘লোকজ অঙ্গনে আগমনী গান’ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে গান শোনাবেন তপন রায়। তাঁর গাওয়া আগমনির বিষয়বস্তু পর্যালোচনায় লোকসংস্কৃতিবিদ কুমার চক্রবর্তী। দ্বিতীয় পর্বে আগমনি গীতি পরিবেশনায় জয়শঙ্কর চৌধুরী।

কার্টুনশিল্পী

কার্টুন শুধুমাত্র কৌতুকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কার্টুন বাস্তবদর্শন করায়, ভাবায় ও মনের সুপ্ত প্রতিবাদকে প্রকাশ করে। তাই আদর্শ কার্টুনিস্টকে হতে হয় কঠোর ভাবে নিরপেক্ষ এবং স্পষ্টবাদী। এই বিরল গুণের অধিকারী ছিলেন চণ্ডী লাহিড়ী (১৯৩১-২০১৮)। বাংলা কার্টুনের এই হারিয়ে যাওয়া দিনে দীর্ঘকাল ধরে যে মানুষটি কার্টুনের জগৎকে সমৃদ্ধ করেছিলেন তিনিও হারিয়ে গেলেন। পড়ে রইল তাঁর ব্যঙ্গচিত্র সম্ভার। তাঁকে নিয়ে ‘বিষয় কার্টুন’ পত্রিকা (সম্পাদক বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়) গত বছর অক্টোবরে প্রকাশ করেছিল স্মরণ সংখ্যা। সেটি পরিমার্জিত ভাবে বই আকারে ‘বিষয় কার্টুন চণ্ডী লাহিড়ী সংখ্যা’ (বুক ফার্ম) প্রকাশিত হল ২১ সেপ্টেম্বর, রিড বেঙ্গলি বুক স্টোরে। বইটিতে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া পত্রপত্রিকা ও বইয়ের পাতা থেকে তুলে আনা শিল্পীর শতাধিক দুষ্প্রাপ্য কার্টুন, অলঙ্করণ, কমিকস, বিজ্ঞাপন-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণ। এই উপলক্ষে প্রদর্শিত হল দেবাশীষ দেব নির্মিত ‘চণ্ডী লাহিড়ী’ তথ্যচিত্র।

মূর্তি প্রতিষ্ঠা

উইলিয়াম জোন্স থেকে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়— বহু মনীষীরই মূর্তি রয়েছে এশিয়াটিক সোসাইটিতে। ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টেয় সেখানেই উন্মোচিত হবে শিল্পী গৌতম পাল নির্মিত বিদ্যাসাগরের এক আবক্ষ মূর্তি (উপরের ছবি)। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা বিভাগের সহায়তায় আয়োজিত হয়েছে ‘বিদ্যাসাগর: প্রকাশক ও মুদ্রক’ শীর্ষক প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা সুকান্ত চৌধুরী। ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতের সমাজ-সংস্কার আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের প্রভাব’ বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র, উদ্বোধনে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রহ্লাদ সিংহ পটেল। উদ্বোধনী পর্বে মূল বক্তা ব্রায়ান হ্যাচার। প্রকাশিত হবে ফ্রাঁস ভট্টাচার্য রচিত বিদ্যাসাগরের জীবনী, বিদ্যাসাগর সম্পাদিত ‘সর্বদর্শনসংগ্রহ’, বিদ্যাসাগর জীবনীর হিন্দি অনুবাদ এবং পল্লব সেনগুপ্ত ও অমিতা চক্রবর্তী সম্পাদিত প্রবন্ধ সঙ্কলন। এ দিকে জাতীয় গ্রন্থাগার ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের যৌথ উদ্যোগে ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টেয় জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনে ‘বিদ্যাসাগরের গ্রন্থভাবনা ও গ্রন্থাগার’ বিষয়ে আলোচনা ও গ্রন্থ প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে। ২টোয় প্রদর্শনী উদ্বোধনে জাতীয় গ্রন্থাগারের ডিজি অরিজিৎ দত্তচৌধুরী। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিদ্যাসাগর রচনাসমগ্রের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ পাবে ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিবেকানন্দ সভাগৃহ’-এ, উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী ও বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের উপস্থিতিতে। অর্পিত হবে ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’।

তালপাতার সেপাই

বাংলার শিশুদের হাতে তালপাতার সেপাই কবে থেকে নাচানাচি করছে? বাংলার মাটিতে তাল গাছ তো এক পায়ে খাড়া হয়েই আছে; আর রাজাগজা, সেপাইসান্ত্রি যবে থেকে বাংলার লোককথায় জায়গা করে নিয়েছে, হয়তো সে কাল থেকেই। জনশ্রুতি, ১৮৫৭-র অভ্যুত্থানের সময় শিল্পীরা নাকি তালপাতায় সেপাই তৈরি করেছিলেন। আবার দক্ষিণ ভারতীয় ছায়াপুতুল নাচের ইতিহাস অনেক দিনের। সেই ছায়াপুতুল যেমন ভাবে চলাফেরা করে, তালপাতার সেপাইয়ের চলনও সেই রকম। বাংলার তালপাতার খেলনায় ছায়াপুতুলের প্রভাব লক্ষ করা যায়। বর্ধমান জেলার গুসকরার শিল্পী মদনমোহন দত্তের বাবা দোলগোবিন্দ দত্ত পরাধীন দেশে তালপাতা দিয়ে ইংরেজ সেপাই তৈরি করেছিলেন। সম্ভবত তাঁর ভাবনায় ছিল, ইংরেজরা যে ভাবে ভারতীয়দের নাচায়, আমাদের বাচ্চারা সে ভাবেই সেপাইদের নাচাবে। শোনা যায়, তিনি তালপাতায় ফিরিঙ্গিও বানিয়েছিলেন। এ ছাড়া বাঘের অবয়বেও তালপাতার খেলনা তৈরি হত (সঙ্গে তারই একটি)।

আধুনিক খেলনার চাপে তালপাতার সেপাইরা আজ কোণঠাসা। কিছু কিছু গ্রামীণ মেলায় আজও মাঝে মাঝে তালপাতার খেলনা দেখা যায়। মদনমোহন দত্তের মতো কিছু শিল্পী বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, হাওড়া, দিনাজপুর ইত্যাদি জেলায় তালপাতার সেপাই ও অন্যান্য খেলনা তৈরি টিকিয়ে রেখেছেন। এ বার সেপাইদের কলকাতা অভিযান। ২৮ সেপ্টেম্বর (সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা) চালচিত্র অ্যাকাডেমির পরিচালনায় নান্দীমুখ সংস্কৃতি কেন্দ্রে (৪/১২ শহিদনগর, গাঙ্গুলিপুকুর, কলকাতা-৩১) অনুষ্ঠিত হবে তালপাতার সেপাই তৈরির কর্মশালা। থাকবেন হিরণ মিত্র, পার্থপ্রতিম দেব, বিপিনবিহারী মার্থা ও সৌমেন খামরুই। হাতেকলমে তালপাতার সেপাই তৈরি শেখাবেন শিল্পী মদনমোহন দত্ত। তালপাতার খেলনা নিয়ে আলোচনা করবেন দেবদত্ত গুপ্ত, এমনকি এই বিষয়ের গানও শোনাবেন অর্পণ চক্রবর্তী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy